
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্য গুরুদয়াল সরকারী কলেজ একটি। আমি সম্ভবত স্কুলে থাকতে এই কলেজের নাম শুনেছিলাম। কিন্তু কোন এক কারণে মনে নেই কিসে শুনেছি বা পড়েছি।
যখন কিশোরগঞ্জ ঢুকলাম মনে পরল আরে গুরুদয়াল কলেজ তো এখানেই। যদি সম্ভব হয় এর সামনে একটা ছবি তুলতে হবে। কিভাবে জানি কলেজের সামনে চলে এসেছি। ভাবলাম একটা ছবি নেয়া যাক৷
বাংলাদেশের পুরাতন ও বিখ্যাত কলেজ এটি। যদিও পুরাতনের দিক থেকে হয়ত অনেক পিছিয়ে থাকবে তবুও কলেজটি এই বছর তার ৮০ তম প্রতিষ্ঠা পালন করছে বা করবে। কারণ এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৩ সালে৷
মজার ব্যাপার হচ্ছে গুরুদয়াল মহাবিদ্যালয় এর স্থাপিত সন লেখা ছিল ১৩৪৯। ব্যাপারটা বেশ ভালো ছিল আমার সাথের ভাই দেখেই বলল ভাই এইটা কত আগের দেখছেন। আমি বলেছি এটা বাংলা সন।
বাংলা সন লেখার আইডিয়াটা খারাপ না। ইংরেজির পাশাপাশি এটাও লিখে রাখা উচিত।
যাইহোক প্রচুর রোদ থাকার কারণে গুরুদয়াল কে বিদায় জানালাম। সেখানে আর দাড়াইনি। যেতে যেতে পিছন ফিরে একবার দেখে নিয়েছি বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে জন্ম হয়ে অনেক বিখ্যাত মানুষের।

বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা এখন কত মানে বর্তমান সংখ্যা কত হবে সেটা বলা মুশকিল। কারণ এখন একই গলিতে দুই তিনটা মসজদিও থাকে৷ কিন্তু একটা সময় এমন ছিল না।
বাংলাদেশে পীর আউলিয়ার অভাব নেই। সব জায়গাতেই কোন না কোন পীর আউলিয়া আছেন। যারা একটা সময় মানুষের কল্যানে কাজ করেছেন। তাদের কথা ভেবে অনেক কিছু করে গিয়েছেন। তেমনই একটা মসজিদ হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ।
কিশোরগঞ্জ গিয়েছেন কিন্তু পাগলা মসজিদ ঘুরতে যাননি তবে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না আমার মনে হয়৷ পাগলা মসজিদের নাম শুনে আমারও ইচ্ছে হল। তাই নিকলী ঘুরতে যাবার আগেই পাগলা মসজিদ ঘুরতে গেলাম।
এই মসজিদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। বলা যায় মিথ হিসেব এই মসজিদের ইতিহাস অনেক। তবে কিছু কিছু জনশ্রুতি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।

কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদ। তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে ওয়াকফ্ স্টেট মসজিদটি পরিচালনা করছে।
এই মসজিদের নামকরণের জনশ্রুতি আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হয়বতনগর জমিদার বাড়ির ঈসা খানের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর ‘পাগলা সাহেব’ নামক একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে মসজিদটি নির্মত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
অপর দিকে আবার শোনা যায় পাগলা সাহেব’ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে উপস্থিত হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য দেওয়ান পরিবারের পক্ষ থেকে পাগলা সাহেবের নিজের পছন্দের স্থান নরসুন্দা নদীর মাঝখানে টিলার ওপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই ঘরটি পরবর্তীতে ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
এছাড়া অনেকেই আবার বলেন যে তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকত। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ‘পাগলা বিবির মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
যেটাই হোক না কেন, মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে এর প্রভাব পরেনি। মসজিদটি তিন গম্বুজ এর সাথে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। যা দূর থেকেই পরিলক্ষিত হয়৷
পাগলা মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছে নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে সব ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত। এই মসজিদে মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সী হিন্দু-মুসলিমসহ নানা ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে এখানে আসেন।
তবে যে যাই মানত করুক বা দান করুক। মসজিদের কারণেই জায়গাটি এখন অনেক বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। কিশোরগঞ্জ গেলে পাগলা মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন৷
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



