somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য রেলওয়ে মেন - দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ ভোপাল ১৯৮৪ (সিরিজ রিভিউ)

৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(অনেক দিন পর ব্লগে আসা হল। মাঝে কিছু দিন নিয়মিত থাকলে ব্যস্ততার জন্য আসা হয়নি। ভাবলাম আবার নিয়মিত প্রতিদিন আসব গল্প করা যাবে। অনেক কিছু জানা হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছি। এবার সম্ভবত ব্লগে বেশি সময় দেয়া যাবে।)

কিছু দিন আগে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে এই বছরের অন্যতম সেরা একটি হিন্দি ওয়েব সিরিজ "দ্য রেলওয়ে ম্যান - দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ ভোপাল ১৯৮৪" অনেকেই আলোচনা করছেন এই সিরিজটি নিয়ে। আমিও এক রাতের ঘুম নষ্ট করে সিরিজটি দেখে ফেললাম। সিরিজটি বেশি না মাত্র ৪টি পর্ব নিয়ে বানানো আর এটিও ঠিক এক রাতের ঘটনা। প্রতিটি পর্বের ছিল ৫৫-৬০ মিনিটের মত। এটি পরিচালনা করেছেন শিব রাওয়াল। অভিনয় করেছেন শক্তিমান সব অভিনেতা এবং অভিনেত্রী। এদের মধ্যে কে কে মেনন, আর মাধবন, বাবিল খান, দিবেন্দ্যু শর্মা, জুহি চাওলার নাম উল্লেখযোগ্য।

এই সিরিজটি মুলত ১৯৮৪ সালে ভারতের ভোপালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গ্যাস লিকের দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। মুলত এখানে ওই সময়ে রেলওয়ের কয়েকজন সাহসী কর্মকর্তার সাহসিকতা তুলে ধরা হয়েছে। যারা মানুষের জীবন বাচানোর জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন।

মুলত ভোপালের সেই সময়ে অবস্থান ও পরিস্থিতি কেমন ছিল সেসবের একটি সুন্দর উপস্থাপনা হচ্ছে এই সিরিজটি। এছাড়া সরকার, রাজনীতি, কর্পোরেশন ও তাদের যোগসাজশের মধ্যকার ঘটনা গুলো তুলে ধরেছে। বলা যায় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগে ও পরের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের একটি বার্তা দিয়ে গিয়েছে।

কাহিনী সংক্ষেপঃ

মুলত কাহিনীর শুরু হয় ইউনিয়ন কার্বাইড ফ্যাক্টির থেকে। যারা মুলত কৃষকদের জন্য সার ও কিটনাশক তৈরি করে থাকে। তারা এখানে এমআইসি যা মিথাইল আইসোনায়েট নামেও পরিচিত সেই ট্রক্সিক গ্যাস মজুদ করে রাখে। কারণ তাদের সার ও কিটনাশক তৈরিতে এই গ্যাস দরকার হয়।

যদিও আগে এই গ্যাস লিক হয়েছিল। সামান্য পরিমানে গ্যাস লিক হবার কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবুও কোম্পানি সেফটির বিষয়ে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। অনেক বার বলার পরও সেফটি না নেয়ার কারণে এক রাতে ছোট বিস্ফোরনে সিলিন্ডার ফেটে গ্যাস বের হয়ে ছড়িয়ে পরে।

এরপরের ঘটনা হচ্ছে ভয়াবহ। বাতাসে গ্যাস ছড়িয়ে পরার পর লোকজনে সেই গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে নিয়ে নেয়। এরপর শ্বাস কষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। না এর থেকে বাচার কোন উপায় তাদের জানা ছিল, না তারা জানত। ঠিক তখনই ভোপাল রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার সহ কিছু মানুষ স্টেশনে থাকা মানুষদের বাচাতে তাদের জীবন বাজি রাখে।

অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি ও পরিচালনাঃ

আগেই বলে দিয়েছি যে এই সিরিজে কারা কারা অভিনয় করেছেন। কে কে মেনন এর অভিনয় নিয়ে কারো কোন সংশয় থাকার কথা নয়। তাছাড়া আমরা আর মাধবন কে সবাই "রেহ্যানা তা হে তেরে দিল ম্যায়" এ মুভি থেকেই চিনে থাকি অথবা নতুন ভাবে আমরা থ্রি ইডিয়টস কে বলতে পারি। এই দুজন শক্তিমান অভিনেতা একই সিরিজে তো সেখানে আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।

এরপর দিবেন্দ্যু শর্মা কথা আলাদা ভাবে বলতে হয়। নতুন প্রজন্মের এই অভিনেতা তার অভিনয় দিয়ে আমাদের মন জয় করেছে। সে যেই চরিত্র করুক তাতে নিজেকে সাজিয়ে ফেলে। তার অভিনয় দক্ষতার কথা আমি সেভাবে বলতে পারব না। তবে যারা দেখেছেন তারা জানেন তিনি কতটা সাবলীল অভিনয় করে থাকেন।

এই সিরিজের অন্যতম পাওয়া ছিল বাবিল খান। যারা বাবিল খান কে চেনন না তাদের জন্য বলছি বাবিল খান হচ্ছে বলিউডে অভিনয়ে সবচেয়ে অভিনেতা ইরফান খানের ছেলে। আমি নিজেও তার অভিনয়ের ফ্যান। আমার আশার জায়গা ছিল বাবিল খান। তিনি সেই প্রত্যাশা পূরন করেছেন। খুব বেশি না হলেও তার চরিত্রের জন্য যতটুকু দরকার সেই কাজ টুকু করেছেন। বাবার মত চরিত্রে ঢুকে পরেছেন।

এছাড়া জুহি চাওলার কেমিও সহ যারা অভিনয় করেছেন তারা সবাই নিজ নিজ জায়গাতে বেশ দারূণ অভিনয় করেছেন। বলা যায় তাদের অভিনয়ের প্রভাব সিরিজকে এক অন্য মাত্র যোগ করেছে।

এখন যদি সিনেমাটোগ্রাফি ও পরিচালনা নিয়ে কথা বলি তবে বলতে হবে প্রি-প্রোডাকশন বেশ দারূণ ছিল। ছোট সিরিজের কাজ দেখানোর জায়গা কিছুটা কম থাকলেও শিব তার কাজটি করে দেখিয়েছেন। আবার সত্য ঘটনার উপর কোন কিছু বানাতে গেলে অনেক সময় তা অতিরঞ্জিত করে ফেলা হয়। যদিও সেখানে একটা দৃশ্য এভাবে তৈরি করা হলেও সেটা কাহিনীর প্রয়োজনে আপনি বুঝতে পারবেন না এটা অতিরঞ্জিত।

আবার এটি যেহেতু ১৯৮৪ সালের ঘটনা তখন কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। তাই পরিচালক কিছু র' ঘটনা তুলে ধরেছেন। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে ঘটনা এভাবে ঘটার সম্ভবনা রয়েছে বা হতে পারে। যেহেতু এই ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী বেশি নেই। তাই ওই সময়ে কি ঘটে ছিলে তা বলা বেশ কঠিন।

সিরিজের সেট ডিজাইনও ঠিক এভাবেই করা হয়েছিল যে তারা সেই সময়টিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেন দর্শক সেই সময়ের অবস্থাকে নিজের মত করে অনুভব করতে পারেন। কাহিনীর জন্য কিছু কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। তবে এতে সিরিজের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়নি।

এই সিরিজটি অন্য সিরিজ গুলোর মত নয়। এটাকে থ্রিলার, বা এডভেঞ্চার সিরিজের মত করে ফেলা যায় না। ছোট সিরিজকে এত সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করা যায় এটাই দেখিয়ে দিল এই সিরিজটি। এছাড়া কোন ভনিতা না করে সরাসরি দশর্কে কাহিনীর মধ্যে নিয়ে যাওয়াটাও বেশ কঠিন কাজ, সেটিও এই সিরিজের অন্যতম ভাল দিক।

যারা দেখতে চান নেটফ্লিক্সে এই মিনি সিরিজটি পেয়ে যাবেন। এছাড়া এই ভোপালের ঘটনা নিয়ে আরও একটি সিনেমা ও সিরিজ আছে। একটিতে অভিনয় করেছেন কে কে মেনন এর "ভোপাল এক্সপ্রেস", "Bhopal Nightmare" (2011)। এছাড়া একটি ইংলিশ মুভি আছে "Bhopal: A Prayer for Rain"।

ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×