somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমিও পারবে: আনিসুল হক

৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুমিও পারবে: আনিসুল হক

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে হয়ে গেল তিন দিনব্যাপী ‌‍‍‍‍‍ ‘ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১২’। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণরা জড়ো হয়েছিল এ তারুণ্যের সম্মেলনে।

উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো, তরুণরা এ সম্মেলন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশিষ্ট জনদের বক্তৃতা শুনে নিজেদের পারদর্শী করে তুলতে উৎসাহী হবে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক। তার বক্তৃতার অংশবিশেষ স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো।

কবে তোমাদের জায়গায় বসেছিলাম মনে নেই। তবে আজ যখন তোমাদের দিকে তাকাই তখন পুরানো স্বপ্নগুলো মনে পড়ে যায়। এ বয়সটাই স্বপ্ন দেখার সময়। স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করার সময়।

আজকে এখানে বক্তা হিসেবে যারা উপস্থিত আছেন তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। আমি শুধু বলতে পারি, আমি যদি জীবনে কিছু করতে পারি তাহলে যে কেউ সেটা করতে পারবে। আমি খুব বেশি বড় ব্যবসায়ী না। এ নিয়ে তিনটা গল্প বলব। যদি এখান থেকে কিছু বের হয়ে আসে।

আমি ইকোনমিক্সে অনার্স করেছি। মাষ্টার্স করেছি। কিন্তু অনেক বছর বেকার ছিলাম। অনেকদিন টেলিভিশনে কাজ করেছি। অনুষ্ঠান করেছি। হয়ত তখন তোমাদের অনেকের জন্মও হয়নি।

তবে আমি বেকার ছিলাম সেটাই হলো সহজ কথা।

যাইহোক, ১৯৮৬ সালে টেলিভিশনে কাজ করার জন্য আমি খুব জনপ্রিয় ব্যক্তি। লোকজন রাস্তায় পেলে অটোগ্রাফ নেয়। একদিন টেলিভিশন ভবনের অফিসে একটা দরজায় জোরে ধাক্কা দিলাম। ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্র লোক পড়ে গেল। তিনি রেগে বললেন, কে এখানে? এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে দেখে বললেন, সর্বনাশ আপনি! আমি আপনাকে কিছুই বলব না। কারণ আমি আপনার ভক্ত।

এই বলে তিনি আমাকে তার একটি কার্ড দিলেন। সেই মানুষটিকে তোমরা চেনো। তিনি টিভিতে অনুষ্ঠান করেন। শফিক রেহমান। যাইহোক। সে গল্প অনেক বড়।

বলবো ব্যবসার গল্প। আমি বেকার। কোনো কাজ নেই। বাবাকে বলি, আমি বেকার। একদিন বললাম, চট্টগ্রাম থেকে পাটের ব্যবসা করবো। বাবা তখন সরকারি চাকরি করেন। বাবার কাছ থেকে আঠারো হাজার টাকা নিলাম। একদিন আঠারো হাজার টাকা নিয়ে ভুয়াপুর গেলাম। সেখান থেকে দুই ট্রাক পাট কিনলাম। সামনের ট্রাকে আমি নিজে বসলাম। বসে ঢাকায় আসছি। টাঙ্গাইল এসে ড্রাইভার বলল, স্যার চলেন চা খাই। আমিও বললাম, চলো খাই।

দুইতিন ঘণ্টা পর রাস্তার পাশে আবার ট্রাক থামালো। ড্রাইভার বলল, স্যার বাথরুম করবেন না? পেছনের ট্রাক ড্রাইভারের বাথরুম লাগছে।

আমি বললাম, মানে? তুমি কেমনে জানো পেছনের ট্রাক ড্রাইভারের বাথরুম লেগেছে? আর আমি বাথরুম করবো নাকি করবো সেটা নিয়ে তোমার কি যায় আসে? তুমি ট্রাক চালাও।

বিশ্বাস করো। আমাকে লাথি দিয়ে সেদিন ট্রাক থেকে ফেলে দেয়। সেই রাতে আমি রাস্তায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। এবং আমার প্রথম ব্যবসা মার খেয়ে গেল। চুরি হয়ে গেল।

এরপর চাকরি পেলাম। তখন চারবন্ধু মিলে ঠিক করলাম, আমরা একসঙ্গে কিছু করি। চাকরির প্রথম দিনের কথা বলি। কারণ, সেই কথাটিই বলার জন্য তোমাদের সামনে এসেছি।

প্রথম চাকরির দিন বাবা ডেকে বললেন, গত কয়েক বছর তো বেকার ছিলে। আজকে তোমার একটা চাকরি হয়েছে। আমি আজকে তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। তোমার ৫০ বছর বয়সে তুমি যা হতে চাও; তা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করো। এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাও। নিজেকে সেজন্যই তৈরি করো। গত চারবছর আমি তোমাকে কিছুই বলি নাই। তুমি যদি ব্যবসা করতে চাও। করো। আমার জীবনের শেষ সম্বল ৮৪ হাজার টাকা। তুমি যদি বলো, আমি সেটাও তোমাকে দিয়ে দেব।

তারপর চার বন্ধু মিলে মাঠে নেমে গেলাম। একজন জমি বেচলো। কেউ বউয়ের গয়না বেচলো। আমি তখনো বিয়ে করিনি। আমার বাবার ৮৪ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম।

আজ আমি কোথায়! এর পেছনে যার অবদান তিনি আমার বাবা। বাবাকে কিছুদিন আগে আমি বলছি, বাবা, আমি একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আমার গাড়ির পেট্রোল খরচ আসে ২০ হাজার টাকা। আর আপনার গাড়ির পেট্রোল খরচ ২৭ হাজার টাকা। এটা কি করে সম্ভব?

বাবা বললেন, মিয়া- ৮৬ সালে ৮৪ হাজার টাকা নিছিলা। এখনো ফেরত দাও নাই। ভুলে গেছ?

সুতরাং আমি সেটাই বলতে চাইলাম। যদি আমি কিছু করতে পারি, তবে তোমরা সবাই এখানে আমার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতে পারবে। তবে তোমাদের সেটা অনুভব করতে হবে তুমি কি করতে চাও। সেজন্যই কাজ করতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা নিয়ে এগিয়ে গেলে সবই সম্ভব। টাকার কথা চিন্তা করবে না। কাজ করার ইচ্ছে থাকলে টাকা এমনিতেই আসবে।

শেষে বলতে চাই, জীবনে কখনো শর্টকাট পদ্ধতি দিয়ে উপরে ওঠা যায় না। চেষ্টা করে সময় নিয়ে লেগে থাকতে হয়। তাহলেই একদিন স্বপ্ন পূরণ হবে।

তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

লিংক: তুমিও পারবে: আনিসুল হক

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×