সেদিন ফেসবুকের বরাতে একটা বিজ্ঞ্বপন দেখলাম। কুর্মিটোলা (সরকারি) মেডিকেল হাসপাতালের বিজ্ঞ্বাপন। রেডিসন এর পাশে অভিজাত এক ভবন। জানলাম সেখানে মাত্র ১০/১৫ টাকায় অভিনব চিকিৎসা দেয়া হয়। অনেক costly সব টেষ্ট করা যায় খুব কম খরচে। ঔষধ পাওয়া যায় বিনামূল্যে। বিজ্ঞ্বাপনে আরো দেখলাম হাসপাতালে নাকি রোগি কম আসেন কারন খুব কম মানুষ জানেন এই হাসপাতালের কথা। কতৃপক্ষ আরো লিখেছেন এই প্রচারের মাধ্যমে ওনারা এলাকার গরিব মানুষদের দৃষ্টি আকর্সন করতে চান এবং তাদের সেবা দিতে চান।
মহান এক উদ্যোগ। এক কথায় বাংলাদেশের ভিতর স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ছোট্ট একটি স্বর্গ (তাও আবার রেডিসনের পাশে)।
আমার প্রশ্ন - বাংলাদেশে কয়জন গরিব মানুষ ফেসবুক বেবহার করেন অথবা জানেন ফেসবুক কি? আর কয়জন ফেসবুক বেবহারকারী আসলে গরিব মানুষ নিয়ে এতটুকু ভাবেন যে এই খবরটা গরিবদের কাছে পৌছে দিবেন? এবং গরিব মানুষের দৃষ্টি আকর্সনের জন্য (আসলেই) কি আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?
ফেসবুকের এই আপডেটে অনেকেই অনেক ধরনের কমেন্ট করেছেন। অনেকে ভাল বলেছেন। অনেকে খুশি হয়েছেন। অনেকে দোআ দিয়েছেন যেন এই হাসপাতাল কতৃপক্ষ আরো অনেক ভালো করতে পারেন, আরো ভাল সেবা দিতে পারেন। কেউ আবার প্রধানমন্ত্রীর জয়গান গেয়েছেন কোন খোজ খবর না নিয়েই। আর যারা এখানে গেছেন সেবা নেয়ার জন্য তাদের কেউ বলেছেন ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি কারন সকাল ৯ টায় আসার কথা থাকলেও ১০টার পরেও ডাক্তার আসেননি। একজন লিখেছেন এক স্বজনকে (রোগি) নিয়ে গিয়ে পশুসুলভ আচরন পেয়ে কতৃপক্ষের একজনকে এই আচরনের কারন জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন ১০ টাকায় এর চেয়ে ভাল ব্যবহার আশা করা যায় না। আরেক কমেন্টে পরলাম এখানে নাকি তেমন কোন টেষ্ট করা হয় না। রোগিদের বাইরে পাঠানো হয় আরো বেশি টাকা খরচ করে টেষ্ট করে আসার জন্য। ইমার্জেন্সিতে গেলে রোগিকে পরামর্শ দেয়া হয় অন্য কোন হাসপাতালে যেতে কারন এখানে অপারেশন করার ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ ঔসধই পাওয়া যায় না, আর যা পাওয়া যায় তাও খুব অল্প পরিমানে।
অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন এই ধরনের (ফ্রি) সুবিধা দেয়া বাংলাদেশে সম্বভ কিনা। আমি বলব - প্রশ্ন এইটা না যে এই ধরনের সুবিধা বাংলাদেশে সম্বভ কিনা। প্রশ্ন হল এই হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা আসলেই পরাশুনা করে এসেছেন নাকি গলির মোড়ের দোকান থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে certificate কিনে এনেছেন?
কিছুদিন আগে এক প্রতিবেদনে দেখেছিলাম দেশে নাকি আজকাল ২০০/৩০০ টাকা দিয়ে ডাক্তার/নার্স/ল্যব টেকনিশিয়ানের সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। আবার ত্রিশ হাজার টাকায় ১২ মাসের কোর্স করেও ডাক্তার হওয়া যায়। So দেশে যেসব ল্যব আছে, যেখানে বিভিন্নরকম টেষ্ট করা হয়, সেখানে যারা কাজ করেন তাদেরি বা কতটুকু যোগ্যতা আছে তাও একটা বড় প্রশ্ন। প্রতিবেদনে আরো দেখেছিলাম এক ল্যাবে গড়ুর urin কে মানুষের urin বলে diabetes আছে কিনা টেষ্ট করতে দিলে তারা রেসাল্টে বলেন গড়ুর (তাদের মতে মানুষের) diabetes নেই।
এবার আসি ফ্রি ঔষধ এর কথায়। ঠিকমত খবর নিলে সবাই জানতে পারবেন এই দেশেই টাকা দিয়ে কিনেও আসল রক্ত পাওয়া যায় না। এখানে লবন পানি মিশিয়ে রক্ত বানিয়ে বেচা হয়। আর এই দেশেই দেয়া হচ্ছে ফ্রি ঔষধ!
যেই দেশে LAB AID এর মত expensive হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা হার্ট বিট মনিটরের সোজা দাগের কারন রোগি ঘুমিয়ে আছেন বলে মনে করেন সেই দেশে ১০/১৫ টাকায় সেবা দেওয়া ডাক্তার/নার্সরা যে কি যোগ্যতা রাখেন আর কি সেবা দিবেন তা দেখা এখন সময়ের দাবি মাত্র।
সরকার এবং কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্সন করছি - সেবা যদি দিতেই চান তাহলে সত্যিকারের সেবা দেন। আর সেবার নামে ভন্ডামি ছাড়েন। একজন গরিবের কাছে অনেক সময় ১০ টাকা তার সারাদিনের উপার্জন। এই টাকা নিয়ে খেলবেন না।
সপ্তাহে সাতদিন ১০ টাকায় সেবা দিতে না পারলে শুধু একদিন সেবা দিন। কিন্তু ভালো ব্যবহার করুন রোগির সাথে। যত্নের সাথে রোগিকে সারিয়ে তুলুন।
গুগোল থেকে নেয়া