অদ্ভুত বৈচিত্র্যময় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।বাইরে থেকে দেখা একজন মানুষ সম্পর্কে খুব দ্রুত একটা ধারনা দাড় করাবার চেষ্টা করি আমরা।নিজেদের তৈরী করা সুনির্দিষ্ট কিছু ছাচের ভেতর ফেলেই বিচার করতে চাই আমাদের আশেপাশের মানুষদের ।অথচ প্রতিটা মানুষই একেবারে ভিন্ন ভিন্ন ছাচে গড়া কিন্তু আমরা তার স্বাতন্ত্র্যবোধটাকে কখনোই মেনে নিতে চাই না।কখনোই তার ভেতরটা উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি না,দেখতে চেষ্টা করি না তার দুঃখ বেদনার অনুভূতিগুলো।
একজন সফল হবার পর আমরা মানুষকে শুধু তার সফলতা দিয়েই বিচার করি ,ঠিক যেভাবে একজন ব্যর্থ হবার পর বিচার করি শুধু তার ব্যর্থতা দিয়েই।সফলতা আর ব্যর্থতার পেছনের মানুষটাকে কি সত্যিই আমরা বুঝার চেষ্টা করেছি?কাজের ফলাফলই যদি হয় একজন মানুষকে বিচারের সর্বশেষ মানদন্ড তাহলে ব্যক্তি মানুষটার অবস্থান কোথায়?তার ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গাটা কোথায় ?
ভুলের উর্ধ্বে নই আমরা কেউই কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অন্যের ভুলগুলো নিয়ে আমরা খুব নির্দয়ভাবে কটাক্ষ করি।অথচ নিজের আত্মশুদ্ধির জায়গাটার দিকে আমাদের চোখ যায় না।প্রথম পর্যায়ে অপরের জাতি, ধর্ম ,বর্ণ নিয়ে কৃত্রিম বিভাজন তৈরী করি।পরবর্তী স্তরে তৈরী করি সুপিরিওর ইনফিরিওরের এক নতুন দেয়াল।উন্নাসিকতায় ভরা এ নতুন শ্রেণী নিজেদের মানসিকতা, শিক্ষা ,রুচি নিয়ে এক ভ্রান্ত অহমিকায় ভোগে এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে তীব্র কটাক্ষ করে নিজেদের সেরা প্রমাণে সচেষ্ট হয়।এই কৃত্রিমতা ,অহমিকাবোধ তাদের সত্যিকার মানবিকতার চর্চা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় ক্রমাগত।
উন্নাসিক আদেশ নয় বরং বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েই পিছিয়ে পড়া অংশটাকে সামনের কাতারে নিয়ে আসা সম্ভব।সেটা সম্ভব পিছিয়ে পড়া অংশের সাথে আত্মিক সংযোগের মাধ্যমেই ।সেটা সম্ভব হবে পাশের মানুষটাকে যদি আমরা শুধুমাত্র মানুষ হিসেবেই সম্মান করার মানসিকতা তৈরী করতে পারি;তার সামাজিক ,অর্থনৈতিক ,শিক্ষার স্তরের সকল বাধা অতিক্রম করে শুধুমাত্র ভেতরের মনুষ্যত্বকেই সম্মান জানাতে পারি।
একেবারে ব্যক্তিপর্যায় পর্যন্ত যদি আমরা পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটা তৈরী করতে না পারি তাহলে মানবিকতার চর্চাও অর্থহীন।নিজেকে ,নিজের মতাদর্শকে, সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবা আর ভিন্ন মত, ভিন্ন মতাদর্শকে ঘৃণা করা ,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ,সেটাকে নির্মুলের প্রচেষ্টা সব সময়ই আগ্রাসন আর নিপীড়নের জন্ম দিয়েছে।এটা সমাজের স্বাভাবিক গতিধারাও নয়।সমাজ সমৃদ্ধ হয়েছে সর্বক্ষেত্রেই থিসিস ,এন্টিথিসিস আর সিন্থেসিসের ক্রমাগত গতিধারায়।সংকীর্ণতা হচ্ছে পাশের মানুষটার ভেতরের কথাকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়া ,নিজের ব্যক্তিস্বার্থের জায়গা থেকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরী না করা।
প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরেই রয়েছে অসম্ভব ভাল একটা সত্বার অবস্থান,অহমিকাবোধের চাদর থেকে সেটাকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই মানবিক সত্বার মুক্তি সম্ভব।শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসার বোধের উন্মেষের মাধ্যমেই শুধু সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব।সেই শুভ বোধের উদয় হোক সবার মাঝে।