গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘২৮ অক্টোবরের ট্রাজেডিঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন,
বাংলাদেশকে অকার্যকর করা, গণতন্ত্র ধ্বংস এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবেই ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তারা বলেন, এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত ছিল তা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা গেলেও তাদেরকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা দোষীদের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানান। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেতনায় লালিত জাতীয় নাগরিক সংগঠন চিরন্তন বাংলাদেশের উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্ট সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও চিরন্তন বাংলাদেশের সভাপতি ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সঞ্চালনায় উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আসম হান্নান শাহ, সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নান, দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জাগপা’র সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা সম্পাদক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকুমার বড়ুয়া, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বাধীনতা ফোরাম সভাপতি আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহ, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, চিরন্তনের উপদেষ্টা ড. আইম নেছার উদ্দিন, সচেতন যুব সমাজের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আহসান প্রমুখ। মূল প্রব উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট সাদেক খান।
আসম হান্নান শাহ বলেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এত নিকটে ঘটেছে যে সেই ঘটনা সবারই জানা রয়েছে। তারপরও একটি চিহিßত মহল সাংবাদিকদের সহায়তায় সেই ঘটনা বিকৃত করার চেষ্টা করছে। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই ঘটনা ২৮ অক্টোবরে নয় অনেক আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্নভাবে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রশাসন এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তিনি বলেন, যারা ঐদিন আত্মাহুতি দিয়েছে তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। তারা প্রমাণ করেছে জান দেব তবুও ঈমান দেব না। তিনি বলেন, সেদিনের আক্রমণ শুধু জামায়াতের বিরুদ্ধে নয়, ৪ দলীয় জোট তথা জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল।
শাহ আব্দুল হান্নান বলেন, ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক অবক্ষয়ের একটি কারণ ছিল। মূল ইসলামী শক্তিকে উৎখাত করার জন্য এই ঘটনার অবতারণা করা হয়েছিল। তিনি এ সময় সাবেক আইজিপি ও ডিএমপির ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তাদের কর্তব্যের অবহেলার ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি ২৮ অক্টোবরের ঘটনার সাথে জড়িত দোষীদের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, এ দেশ থেকে বৃটিশরা চলে যাবার পর সবচেয়ে কালো দিবস ২৮ অক্টোবর। এ ধরনের পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা কখনো ঘটেনি। তিনি মিডিয়ার বিকৃত প্রতিবেদন ছাপা প্রসঙ্গে বলেন, মিডিয়ার এ অবস্থা চলতে থাকবে। রাজনৈতিক সরকার আগে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তার কারণ মিডিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি জনগণকে আকৃষ্ট করা যায়। শফিউল আলম প্রধান বলেন, ২৮ অক্টোবরের পূর্বাপর ঘটনাগুলো আমাদের বিবেচনা ও আমলে আনা উচিত। বাংলাদেশের অস্তিত্ব নষ্টের চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের শিক্ষা থেকে করণীয় ঠিক করতে হবে। এই ঘটনার অন্যতম শিক্ষা হলো বিদেশীদের ওপর নির্ভর করা যাবে না।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার লক্ষ্য ছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা দিয়ে নৈরাজ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। তিনি বলেন, ৭ ঘণ্টা ধরে হামলা চলল অথচ পুলিশ কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে আলাপ করলে কোন জবাব দিতে পারেনি। তিনি বলেন, সেদিন পুলিশ যদি অস্ত্র বাদেও শুধু দুটি সংগঠনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকত তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর জামায়াতের ওপর আঘাত হানলেও এর আসল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ধ্বংস ও অকার্যকর করা। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবেই এই সংকট উত্তরণ করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক সুকুমার বড়ুয়া বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আশরাফুল মাখলুকাত হলে আমাদের কাজও হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমরা অধম কাজ করতে পারি না। ২৮ অক্টোবর জাতির জন্য কলংকময় দিন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, সেদিন পল্টনের সমাবেশে ২ জন মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও তাদের সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়নি। ২টা মিটিংয়ের মাঝে কোন পুলিশ ব্যারিকেডও ছিল না। এমনকি পুলিশের বিবস্ত্র করার পরও ইউনিফর্ম রক্ষা করতে কেউ আসেনি। তাহলে কি কোনখান থেকে নির্দেশ ছিল-যত খুনই হোক কিছু বলা যাবে না? তিনি বলেন, আমিন বাজারে ২ র্যাব সদস্য হত্যার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামীদের ধরতে পারলেও স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ধরতে পারেনি প্রশাসন। তারা গ্রেফতার হয় না কেন? তাহলে কি বুঝতে হবে এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল? তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হলে জড়িতদের গ্রেফতার করে দেখাতে হবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোন দলের পক্ষের নয়।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই ঘটনাকে মূল্যায়ন করলে বলতে হয় গণতন্ত্র হত্যা দিবস। রাজনৈতিক ব্যর্থতাই এ অবস্থার জন্ম দিয়েছে। আর এই ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। মূল প্রব েসাদেক খান বলেন, অমানবিকতা ও পাশবিকতা জাতীয় জীবনকে যে চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে সেটা দেশবাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা। তিনি বলেন, হরতাল ধ্বংসের রাজনীতি যেন আর ফিরে না আসে সেটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও জনগণের প্রত্যাশা। সূত্র।
প্রেসক্লাবের গোলটেবিল: জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে উৎখাতের উদ্দেশ্যই ছিল ২৮ অক্টোবর!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।