আমাদের দেশে কোন কিছুই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলেনা, এটা অনেক পুরনো কথা। নিয়মের চেয়ে অনিয়মের চর্চাটাই আমাদের দেশে হয়ে থাকে বেশী। নীতি-নৈতিকতার বালাইও অনেক আগেই ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও একটা সীমা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদের মুলধনের ওপর লাভ্যাংশ হিসাব করতো, দুধ বিক্রেতা (ফড়িয়া) একটা সীমা পর্যন্ত দুধে পানি মিশাতো, মুদি তার দোকানের সরিষার তেলে সয়াবিন তেল মিশাতো.....ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মতে মানুষ এসব করলেও তার দুই নম্বরিরও একটা সীমা ছিলো, মনোপলি ব্যবসায়ীদেরও লাভের একটা লাগাম ছিলো। কিন্তু সেই লাগামটা এখন আর নেই। যে যেখানে পারছে ইচ্ছে মতো যা খুশি তা-ই করছে। চাল-ডাল-তেল-লবনের মতো প্রত্যেকটা ভোগ্যপন্য এবং সেবার মূল্য এখন আর কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে নির্ধারিত হচ্ছে না। যার যেমন খুশি, যেখানে যেভাবে পারছে, পকেটে টাকা ভরে নিচ্ছে। আমার দৈনন্দিন জীবনে আমি যেসব বেপরোয়া পন্যমূল্য এবং সেবামূল্য দিতে বাধ্য হচ্ছি এবং প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে তার কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।
ঘটনা এক: সাভারের হেমায়েত পুর থেকে কেরানিগঞ্জের হযরত পুরের দূরত্ব ১০/১১ কিলোমিটার। এখানকার রাস্তা ২৪ ফুট প্রশস্ত, কার্পেটিং করা। অর্থাৎ যানবাহন চলাচলের জন্য খুব ভালো রাস্তা। এখান দিয়ে প্রতিদিন নবাব গঞ্জের একাংশ এবং কেরানিগঞ্জের বড় একটা অংশের কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা শহরে যাওয়অ আসা করে। এছাড়াও স্থানীয় যাত্রীতো আছেই। যাতায়াতের জন্য একমাত্র যানবাহন এখানে যা রয়েছে তা হল সিএনজি অটোরিক্সা।
এখানকার অটোরিক্সাগুলো মিটারের হিসাবের বাইরে। সিরিয়াল দিয়ে চলে, পাঁচজন যাত্রী হলে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ে। দুইজনকে বসতে হয় বাদুর ঝোলা হয়ে ড্রাইভারের সাথে। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। অর্থাৎ, ১০ কিলোমিটার দুরত্বের জন্য পাঁচজন যাত্রীকে মোট গুনতে হয় ১০০ টাকা ভাড়া। গত দের বছর যাবৎ ড্রা ইভাররা জোটবদ্ধভাবে এই ভাড়া আদায় করে আসছে।
এখানে যে পরিমান যাত্রী চলাচল করে তাতে করে একজন ড্রাইভার সকাল হতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টা ট্রিপ দিতে পারে। এখানে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় দিনে ১০০ টাকার গ্যাস লাগে না। দৈনিক জমা ৫০০ টাকা এবং দৈনিক গ্যাস খরচ ১০০ টাকা বাদ দিলেও দুপুর দুইটার পর ড্রাইভারের পকেটে কম করে হলেও ১২/১৪শত টাকা থেকে যায়। তাই এখানকার কোন ড্রাইভারই সারাদিন গাড়ি চালায় না। একবেলা গাড়ি চালিয়ে অন্যবেলা আরাম-আয়েস করে। তারপরও মাসে কম হলেও ৪০,০০০ টাকা তার নিট আয় থাকে। একজন সিএনজি অটোরিক্সার ড্রাইভারের আয় ৪০,০০০ টাকা, একজন ফার্স্ট ক্লাশ গেজেটেড অফিসারের বেতন কতো?
এই যে এখানে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া রাখা হচ্ছে তা কোনভাবেই ন্যায্য ভাড়া নয়, বরং জুলুম। এটা ড্রাইভাররা মিলে একটা সিন্ডিকেট করেছে। ২৫০ টির মতো গাড়ি আছে এখানে। এর বাইরে নতুন কোন ড্রাইভার এখানে আসতে পারেনা, আসলেও তাকে ট্রিপ নিতে দিবে না। কোন প্রকার প্রতিবাদ করে এর প্রতিকার করা যায় না। কারণ ড্রাইভাররা সংঘবদ্ধ, যাত্রীরা বিচ্ছিন্ন। যদি কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে বিদ্রুপ করা হয়। (চলবে)