আমার জীবনের গল্পটা অনেকটা রোমান্টিক উপন্যাসের মতো, যেখানে প্রেম, বিরহ, এবং নতুন জীবনের শুরু সবকিছুই রয়েছে। ঢাকা শহরের এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করা ছেলেটির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল বরিশালে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে। আমাদের সম্পর্কটা একদম রূপকথার মতো শুরু হয়েছিল। আমি তাকে ভালবাসতাম, আর সেও আমাকে। আমি তাকে কখনও বলিনি যে, আমি তাকে পছন্দ করি, কিন্তু একদিন সে নিজেই আমাকে জানালো যে, সে আমাকে ভালোবাসে। তখন আমিও মনের কথা প্রকাশ করি।
আমি বাবা-মার ছোট মেয়ে। আমার বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল, আর আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের পরিবার বরিশালে স্থায়ী হলো, নানার বাড়িও ছিল বরিশালে। তাকে আমি সবসময় 'আপনি' বলতাম, আর সে আমাকে 'তুমি'। মোবাইল ফোন না থাকার কারণে, মাঝেমধ্যে আম্মুর ফোন দিয়ে টেক্সট করতাম। ভোরবেলা সবাই ঘুমালে তার সাথে একটু কথা বলতাম।
প্রথমে আমাদের মধ্যে বেশি কথা হতো না, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা একে অপরকে অনুভব করতাম এবং ভালোবাসতাম। মাঝে মাঝে সে ঢাকা থেকে বরিশালে আসতো, এবং আমাদের রেস্টুরেন্টে দেখা হতো। সে হয়তো ততটা সুন্দর ছিল না, কিন্তু আমার কাছে সে খুব মায়াবী লাগতো। তার চোখে আমি আমার স্বপ্নের মানুষকে খুঁজে পেয়েছিলাম।
কিন্তু একদিন আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বেশ কিছুদিন আমরা কথা বলিনি। আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করলে সবকিছু আরও জটিল হয়ে যায়। এক সময় সে আমাকে ব্লক করে দেয়, আমিও তাকে। রমজানের শেষে ঈদের সময়, সে আমার খবর নিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার অভিমানের কারণে তেমন কথা হয়নি। আম্মু বিষয়টা জানতে পেরে বাবাকে ও ভাইকে জানায়, তারা আমার জন্য নতুন সম্পর্ক খুঁজে বের করে।
আমি একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে করি। কিন্তু সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে নয়, বরং ভোগবিলাসী হিসেবে দেখে। আমার মনের মানুষকে আমি তার মধ্যে খুঁজে পাইনি। এক সময় জানতে পারি, সে তার ভার্সিটির এক মেয়েকে ভালোবাসে এবং ফ্যামিলির চাপে আমাকে বিয়ে করেছে। আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পথে চলে যায়, এবং অবশেষে ডিভোর্স হয়ে যায়।
তখন আমার মনে হয়েছিল, যেন পৃথিবীটা অন্ধকারে ঢেকে গেছে। প্রথম প্রেমের সেই গভীর অনুভূতি, যা আমাকে আশার আলো দেখিয়েছিল, তা হঠাৎ করেই নিভে গেল। জীবনের এই কঠিন সময়ে, আমি আবার ভার্সিটিতে ভর্তি হই। নতুন জীবনে এক ফ্রেন্ড আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তাকে সবকিছু জানিয়ে দিই এবং পরিবারের অনুমতি চাই। সে তার পরিবারকে রাজি করিয়ে আমাদের বিয়ে হয়।
নতুন জীবনে আমরা খুশি ছিলাম। আমাদের একটি কন্যা সন্তান আসে, এবং আমরা সুখীভাবে বসবাস করি। আমার স্বামী আমার অতীত জানার পরেও আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং বোঝার চেষ্টা করে। সে আমাকে নতুন করে জীবন শুরু করার সাহস জোগায়।
এই লেখাটার মাধ্যমে আমি বলতে চাই, ভালবাসা কেউ কাউকে ঠকিয়ে সুখী হতে পারে না। ভালবাসা হলো পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার সম্পর্ক। প্রথম জীবনের প্রেমের ভাঙন আমাকে শিখিয়েছে যে, ভালবাসার সত্যিকার অর্থ হলো একে অপরকে বোঝা, সম্মান করা, এবং সেই অনুভূতির মর্যাদা দেয়া।
আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন সুখী আছি। যদিও প্রথম জীবনের প্রেমের সেই স্মৃতিগুলো এখনও আমার হৃদয়ে টিকে আছে, তবুও আমি নতুন জীবনের সুখ খুঁজে পেয়েছি। প্রেমের সেই প্রথম অনুভূতি কখনও ভুলবার নয়, কিন্তু জীবনের নতুন পথচলায় সঙ্গীর ভালোবাসায় আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখেছি।