somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম-রী-চি-কা!

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শফিক আজকে অনেকদিন পর হাঁটতে বেরিয়েছে।

‘রমনার ধার ধরে হাঁটতে নাকি ভালোই লাগে’- নারিতা বলেছিলো কথাটা। ওরা তখন থার্ড ইয়ারে পড়তো। সেই বয়সে যা হয়, ওদের মাঝে তাই ছিলো। লাগামহীন ভালোবাসা, কিন্তু সীমাবদ্ধ স্বপ্ন। পাশ করার পর শফিক মাত্র বছর পাঁচেক দেশের বাইরে ছিলো। ফিরে এসে নারিতার সাথে যখন দেখা হয়, তখন নারিতার দুইটা বাচ্চা। ওদের নিয়েই ব্যস্ত সারাদিন। ওর হাজবেন্ড সরকারি চাকুরে।

নারিতার বাচ্চাগুলা দারুণ সুইট। ওদের অনেকক্ষণ আদর দিয়ে বিদায় নিলো শফিক। কিন্তু রাস্তায় নামতেই প্রশ্নটা উদয় হলো মাথায়।

‘মাত্র পাঁচটা বছর ও আমার অপেক্ষা করতে পারলো না!’- ভাবতে ভাবতে হাঁটছে শফিক। প্রায় লাখ দশেক টাকা করে নিয়ে এসেছে ও বাইরে থেকে। এমনিতে জবটা ভালোই। সবই নারিতা আর ওর নতুন সংসারের জন্য। সংসার তো চাইলে অন্য কাউকে নিয়েও করা যাবে! নারিতা পারলে আমারও তো পারার কথা। (কষ্ট পাচ্ছে না মন। আশ্চর্য্য!-ভাবলো শফিক)। কিন্তু মনটা কেন যেন বাঁধ মানতে চাইছে না। ভালোবাসা কি শুধুই মরিচীকা? আসে কিন্তু ধরা দেয় না?? খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে আজ।

আশে পাশে তাকায় ও। সবাই ব্যস্ত। ভালোবাসার টাইম কই?কিন্তু শফিকের যে ভালোবাসার সংজ্ঞা চাই-ই চাই। কোথায় মিলবে ভালোবাসার দেখা? রমনা? হতে পারে। ভাবতে ভাবতেই ঢূকে পড়ে রমনায়। হাঁটতে থাকে রমনার একপাশ থেকে। আজকে উত্তরটা নিয়েই যেন বাড়ি ফিরবে সে.........

--এই আইস্ক্রিম খাবো!
মেয়েটার বায়না শুনে হাসলো ছেলেটা। আইস্ক্রিম কিনলো দুটা। মেয়েটা একা খাবে না, তাই দুইটা নিতেই হলো ছেলেটাকে। ওদের হাসিমুখ দেখে কেন জানি ভালো লেগে গেলো শফিকের।ওদেরকে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে যায় শফিকের। আইস্ক্রিম খেতে খেতে নতুন সংসারের গল্প জুড়ে দেয় ওরা। হঠাৎ-ই মনে হলো শফিকের--ভালোবাসা হয়তোবা মরিচীকা নয়। ভালোবাসা মানেই হয়তো নতুনের স্বপ্ন দেখা।

--বাবা চকোলেট খাবো!
- না বাবা, বেশী চকোলেট খায় না, দাঁতে পোঁকা ধরবে।
--উহু! খাবো, খাবো।
-উফ্‌! এত জিদ করো কেন সোনা? বললাম না, চকোলেট বেশী খায় না। গতকালকেই তো খেলে, আবার কালকে কিনে দেবো।
--না,না,না...খাবোই খাবো। খাব্বো...
বাবাকে বাধ্য হতেই হয় চকোলেট কিনে দেওয়ার জন্য। কংক্রিটের বিশ্রাম চেয়ারে বসে সবই দেখে শফিক। আনমনেই হেসে উঠে ও। মুচকি হাসিটা মিলিয়ে যেতেই ভাবে- ভালোবাসা মানেই হয়তো সন্তানের কাছে বাবার নতজানু হওয়া।

-ওই খাবি?
--না। তুই খা। আমার খিদা নাই।
-এট্টু খাঁ! বহুত আছে।
--কইলাম তো খামু না। প্যাঁচাল পারস ক্যাঁ খালি? ভাদাইম্যা জানি কোনহানকার!

বাসি একপাতা খিঁচুড়ি নিয়ে টোকাই ভাই-বোনের ঝগড়া দেখে অবাক হয় শফিক। ক্ষুধার্থ দুইজনেই। কিন্তু পেটে পাথর বেঁধে বোনটা তার ছোট্ট ভাইটাকে একা খাবারটুকু খেতে অনেকটাই বাধ্য করে। মেয়েটার বয়স কত? ১৩/১৪ হবে। ছেলেটা হয়তো ৫/৬ বছর। রমনায় এই বয়েসী একটা মেয়ে কি কাজ করে পেট চালায় শফিকের তা ভালোই জানা আছে। তবুও রাতের কষ্টের আর পরিশ্রমের ভাবনা উপেক্ষা করে মেয়েটা ছোট ভাইয়ের ক্ষুধাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে! যেন সব কষ্ট তার, আর উদরপূর্তি ভাইটার!! মেয়েটাকে দেখে ভালোবাসার সংজ্ঞা আবারো পরিবর্তন করে শফিক। ভালোবাসা মানেই হয়তো বোনের স্নেহ,মমতা,আদর।

-এই দেখো, এটা কড়ই গাছ। দেখে যাও, এমনটা ঢাকাশহরে কমই দেখতে পাবে।

হুল্লোড় করে একগাদা ছেলেমেয়ে রীতিমতো উঁড়ে আসে গাছটার নিচে। ৯ম/১০ম শ্রেণীর স্টুডেন্ট হবে হয়তো। স্যার বোধহয় গাছ চেনাতে নিয়ে এসেছেন। হুড়োহুড়িতে একজন পড়ে গিয়ে ব্যাথাও পেলো!স্যার দৌড়ে এসে অবলীলায় বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর পার্কের বেঞ্চিতে বসিয়ে রুমাল দিয়ে ক্ষতটা মুছে দিলেন। শফিক অভিভূত হলো। বাকি স্টুডেন্টদের সাথে দাঁড়িয়ে ও নিজেও শিখলো কি করে ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করতে হয়। ড্রেসিং করা দেখছে আর ভাবছে শফিক। ভালোবাসা কি তাহলে গুরুজির শিক্ষা?

দারুণ দোটানায় পড়ে যায় শফিক। এক ভালোবাসার এত্ত রূপ! সংজ্ঞা হিসেবে কোনটাকে ধরে নেবে সে? কনফিউসিং। চরম কনফিউসিং!

সন্ধ্যায় রমনা থেকে বেরুবার সময় হঠাৎ-ই শফিক বুঝে যায়- ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আসলে কি! ভালোবাসাকে আসলে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। সেটা হতে পারে প্রেমিকার আবদারে, বাবার শাষণে, ভাইয়ের আঁকুতিতে কিংবা শিক্ষকের উদ্বেগে।

রমনার অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরুবার সময় শফিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে। নারিতার জন্য আর কখনোই কাদবে না সে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২
১৩টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×