somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শারদীয় দুর্গা উৎসব প্রথম বাংলাদেশের যে মন্দির থেকে শুরু হয়েছিল

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(উপরের মন্দিরটিই রাজা কংস নারায়ণের নির্মিত প্রথম দুর্গা মন্দির )

হিন্দু ধর্মের সার্বজনীন দুর্গা উৎসব প্রথম যে মন্দির থেকে শুরু হয়েছিল সেই মন্দির এখন বাংলাদেশে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহিরপুর (বর্তমানে গ্রামটিকে তাহেরপুর বলা হয়) গ্রামে ১৪৮০খ্রীষ্টাব্দে বাংলা ৮৮৭ বঙ্গাব্দে রাজা কংস নারায়ন তার রাজ ভবনেই প্রথম শুরু করেন।

তাহিরপুর রাজবংশ বাংলাদেশের প্রাচীন রাজবংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রাজবংশের আদিপুরুষ ছিলেন মৌনভট্ট। পরবর্তীকালে এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজা কংস নারায়ণ। তাঁর আসল নাম ছিল মুকুন্দ, পরে তিনি কংস নারায়ণ নামটি গ্রহণ করেন।


(রাজা কংস নারায়ণের নির্মিত দুর্গা প্রতিমাটি ছিল স্বর্ণের তৈরী কিন্তু বর্তমানে যে প্রতিমাটি দেখা যাচ্ছে সেটা কয়েক বছর আগে ত্রিশ লক্ষ টাকায় নির্মিত ।)

রাজা কংস নারায়ণ সুলতানি আমলে চট্টগ্রামে মগ দমনে বীরের ভূমিকা পালন করেন। পাঠান আমলে কিছুদিন ফৌজদারের দায়িত্বও পালন করেন। মোগল আমলে এসে কিছুকাল বাংলা-বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মোগল সম্রাট আকবর তাকে ‘রাজা’ উপাধি দেন।

সম্রাট আকবরের সময় বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিজমার হিসাবের জন্য সম্রাট তোডরমলকে নির্দেশ দেন এবং তোডরমল কংস নারায়নকে নিয়ে একাজ শুরু করেন, পরে হঠাৎ সম্রাট তোডরমলকে বিশেষ কাজে দিল্লীতে ডেকে পাঠান এবং জমিজমা হিসাবের বাকি কাজ কংস নারায়ণ সূচারুরূপে সম্পন্ন করেন এবং সকল হিসাব-নকশা ইত্যাদি দিল্লীতে পাঠিয়ে দেন। সম্রাট তার কর্মদক্ষতায় খুশী হন। এসময় তিনি ভেবেছিল পরবর্তী সুবেদার নিযুক্ত হবেন কিন্তু সম্রাট তা না করে দূত মারফত কংস নারায়ণের জন্য নানাবিধ মূল্যবান খেলাত, “রাজা” খেতাব এবং সুবে বাংলার দেওয়ান হবার জন্য খবর পাঠান। যোগ্যতা থাকার পরও সম্রাট তাকে সুবেদার নিযুক্ত না করে দেওয়ান হওয়ার খবর পাঠালে কংস নারায়ণ মনঃক্ষুন্ন হয়ে খেলাত এবং “রাজা” উপাধি গ্রহন করে বয়সের অজুহাত দেখিয়ে দেওয়ান পদ থেকে পদত্যাগ করে নিজের জন্মভুমি তাহিরপুরে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার বিশাল জমিদারির উন্নতি সাধনের জন্য আত্মনিয়োগ করেন।


তাহিরপুর এসে জমিদারির উন্নতির পাশাপাশি রাজা কংসনারায়ণ ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করেন। পাপমুক্তি বা প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্তে মহাযজ্ঞে ব্রতী হওয়ার জন্য তিনি তাহিরপুর জমিদারদের কূল পুরোহিতদের পরামর্শ চাইলেন। উপস্থিত পুরোহিতদের মাঝে বিখ্যাত তান্ত্রিক রমেশ শাস্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। তিনি উক্ত সভায় বলেন, “শাস্ত্রে বিশ্বজিৎ, রাজসূয়, অশ্বমেধ ও গোমেধ এই চার বিধি আছে, কিন্তু বিশ্বজিৎ এবং রাজসূয় যজ্ঞ শুধু সার্বভৌম সম্রাট করতে পারবে কিন্তু আপনি যেহেতু তাদের অধিনস্ত ভূ-স্বামী তাই এর অধিকারী নন। এ ছাড়া অশ্বমেধ এবং গোমেধ এ দুইটি কলিতে নিষিদ্ধ এবং ক্ষত্রিয়ের কর্ম তাই তাও সম্ভব নয়। তখন কংস নারায়ণ ঐসব যজ্ঞ ব্যাতীত কলিতে আর কি যজ্ঞ করা যাবে তা জানতে চাইলে রমেশ শাস্ত্রী কলির মহাযজ্ঞ দুর্গোৎসব পালনের পরামর্শ দেন। কারণ দুর্গোৎসব সকল জাতি এটি সম্পন্ন করতে পারবে, এতে সকল যজ্ঞের ফল পাওয়া যাবে, সত্য যুগে প্রথম সুরথ রাজা এ যজ্ঞ করেছিলেন। রমেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য উপস্থিত পুরোহিতরাও সমর্থন দিলে রাজা এই যজ্ঞ পালনে সর্বসম্মতভাবে মনোনিবেশ করেন।

তান্ত্রিক রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজা কংস নারায়ন প্রথম এই দুর্গোৎবের আয়োজন করেন এবং রমেশ শাস্ত্রীই এই যজ্ঞের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের রাজবাড়িতে।


(বর্তমানেও বহমান আছে ইতিহাসের স্বাক্ষী সেই বারনই নদী)

পরের বছর তিনি একটি দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং সবার জন্য এই উৎসব উন্মুক্ত করে দেন। প্রথম দুর্গোৎসবেই রাজা সাড়ে আট লক্ষ টাকা মতান্তরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেন। রাজা কংসনারায়নের এই দুর্গোৎসব আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা লাভ করতে করতে একসময় সার্বজনীন পুজায় রুপ লাভ করে। বর্তমানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গোৎসব। যা সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা খুবই সম্মানের সাথে পালন করে থাকে।


(মন্দির প্রাঙ্গনে আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে কয়েক শত বছরের পুরানো এই গাছটি। এই গাছের নাম কেউ বলতে পারে না তাই এলাকার লোকজন এই গাছটির নাম দিয়েছে অচিন বৃক্ষ।

(তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×