somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুমিতের অনু স্বপ্ন

২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বচ্ছতোয়ার হাতে এখন অনেক সময়।একমাত্র কন্যার অনেকদিন আগে বিয়ে হয়ে গেছে।ষাট ছুঁই ছুঁই স্বামী দেবতা সামনের ডিসেম্বরে অবসর নেবেন।কেন্দ্র সরকারের পদস্থ ইজ্ঞিনিয়ার,কাজ পাগল মানুষটি সারাক্ষন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।সকালবেলা অজিতেশের অফিসে চলে যাওয়া আর সারাদিন পরিচারিকা ভানুমতির সঙ্গে সময় কাটানোয় জীবনটা বড্ড একঘেয়েমি লাগে।সেদিন
দুপুরে হঠাৎ আমেরিকা প্রবাসী কন্যার পূজোয় আসার খবর পেয়ে, মনে যেন একটা আনন্দের স্রোত বয়ে গেল।হাতে থাকা স্মার্ট ফোনটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে ভেসে এল সুমিতের প্রোফাইল পিকচার।

নাকের ডগায় নেমে আসা চশমাটা ঠিক করতে করতে, ঠিক দেখছি তো!হ্যাঁ,সেই সুমিত!বহু বছর আগে কলেজ জীবনের উদ্দাম দিনগুলি যেন মুহূর্তে চোখের সামনে ভেসে এল।সুমিতের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডে কুহেলী চক্রবর্তীর নাম পেল।অজিতেশের কলিগের স্ত্রী কুহেলী। একই পাড়ায় থাকলেও তেমন যোগাযোগ নেই।যদিও কয়েকবছর আগে অজিতেশের অফিসের পিকনিকে অনেকক্ষন কথা হয়েছিল।তারপর রাস্তাঘাটে দেখা হলে সামান্য কুশল বিনিময়। অফিসে অজিতেশ বস্ হওয়ায় স্বচ্ছতোয়া কুহেলীকে তেমন আগবাড়িয়ে কথা বলেনা। ফলে আজ সুমিতের পরিচয় কনফার্ম করতে কুহেলীকে কল করতে গিয়েও পিছিয়ে এল।

সুমিতের টাইম লাইন দেখতে গিয়ে স্বচ্ছতোয়ার মন চিকচিক করে উঠলো।এইতো কলেজ-বিদ্যাসাগর,সাল-১৯৮৩, বিশ্ববিদ্যালয় -কলকাতা,সাল-১৯৮৫।মনের মধ্যে একটা শিহরণ দোলা দিয়ে উঠলো।সেই কলেজস্ট্রীট,হাতিবাগান,ঘন্টার পর ঘন্টা কফি হাউসে কাটানো প্রেসিডেন্সীর গেট থেকে গ্রীষ্মের দুপরে লেবুজল খাওয়া,একটু নিরিবিলির খোঁজে হিন্দুস্কুলের সুইমিংপুলে বসা প্রভৃতি মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠলো।

আর দেরি না করে, স্বচ্ছতোয়া সঙ্গে সঙ্গে সুমিতের কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো।স্বচ্ছতোয়ার নামটি খুব বড় হওয়ায়,কলেজে সুমিত তাকে তোয়া বলে ডাকতো।আজ এতগুলি বছর পরে স্বচ্ছতোয়ার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়ে সুমিতের মাথায় যেন তালগোল পাকিয়ে গেল।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা।চশমার কাঁচটি ভালো করে মুছে নিল।এবার আর ভুল হলনা।তারই কলেজ বন্ধু তোয়ার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলো।

কিছুপরে সুমিতের পুরানো ছবিতে পটাপট লাইক আসতে লাগলো।বেশকিছু ছবিতে আবার কমেন্টও এল।তোয়ার দেওয়া কমেন্টের সৌজন্য লাইকদিয়ে সুমিতও তোয়ার টাইমলাইনে একেরপর এক ছবিতে লাইক দিতে লাগলো।
ম্যাসেনজারে তোয়াকে অ্যকটিভ দেখলো।
-হাই,সুমিত কেমন আছ?
-ভাল,তুমি কেমন আছ?
-তোমাকে দেখে প্রাণ পেলাম।আজ কত বছর বাদে তোমার সঙ্গে দেখা।
-কেন, তুমিতো তোমার স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেনা?
-আমরা ওখান থেকে বহুদিন আগে চলে এসেছি। অজিতেশের বাবা মারা যাবার পর ওর মা ওকে আর ওখানে যেতে দেয়নি।সেখান থেকে আমাদের এদেশে পাকাপাকি ভাবে থাকা
-তোমরা এখানে কোথায় থাকো?
-বেহালাতে, তোমরা?
-সল্টলেক,১৪নম্বর ট্যাঙ্ক।
-আজ আমার একটু তাড়া আছে,সুস্থ থেকো।

পরেরদিন বিকালে স্টেশনে বসে ফোনটা অন করতেই তোয়াকে আবার অ্যাকটিভ দেখলো।আজ সুমিতই প্রথমে লিখলো,
-কি করছে?
-তুমি যা করছো,তুমি এখন কি করো?
-পাতি স্কুল শিক্ষক। ছেলেমেয়ে কজন?
-একটি মেয়ে,তোমার?
-আমার একটি ছেলে।
-ছেলে কি করে?
-ইজ্ঞিনিয়ার,ব্যাঙ্গালুরুতে থাকে।তোমার মেয়ে কি করে?
-মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, ওরা আমেরিকায় থাকে।আচ্ছা, কুহেলী তোমার কে হয়?
-আমার পিসতুতো বোন।হঠাৎ কুহেলীর খোঁজ?
-না,এমনি।
-ট্রেন ঢুকছে,রাখছি।

পরেরদিন ঠিক ঐ সময় সুমিত স্টেশনে বসে আছে, এমন সময় ব্যাগের মধ্যে ফোনটি কেপে উঠলো।ভাইব্রেশনে ছিল।তোয়া ম্যাসেনজার কল করেছে।আজ এত বছর পর তোয়ার কল পেয়ে ফোনটি রিসিভ করতেই,সুমিতের স্বপ্ন ভঙ্গ হল।সামনের দুটি দাঁত নেয়।মুখের ত্বক গেছে গুটিয়ে।উপরন্তু একটা কালচে ছোপ মুখটাকে আরও কদাকার করে তুলেছে।মাথায় সামান্য কিছু চুল, তা সবই সাদা।এক আকাশ হতাশায় নিতান্ত সৌজন্য সূচক তোয়ার কথার উত্তর দিয়ে,পাল্টা কিছু জানতে চাইলোনা।

ফোনটি রেখেদিয়ে সুমিত মাথা ধরে বসে পড়লো।সেদিনের সেই রুপ লাবণ্যময়ী তোয়াকে আজকে কিছুতেই মেলাতে পারছেনা।রাতে বাড়ি ফিরে সুমিত পুরানো কথা ভাবতে লাগলো। সেদিন অনার্সের সবে রেজাল্ট বার হয়েছিল,তোয়া এসে জানালো বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছে।পাত্র NRI আমেরিকায় থাকে।সুমিত কফি হাউসের শেষ ডেটিংএ হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে নিজেকে উপহাসের ছলে বলেছিল,একজন প্রবাসী ইজ্ঞিনিয়ারের সঙ্গে বাংলা অনার্সের নিতান্ত এক ছাত্রের! এহেন প্রতিযোগিতায় নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া তার যে আর কোন উপায় ছিলনা।আজ তার মুখের অবয়বের চেহারা দেখে সে যেন আৎকে উঠলো।সদ্য কেনা স্মার্ট ফোনটি আর ব্যাবহার করবেনা বলে মনস্থির করলো।এই তোয়াকে আর কোনদিন সে দেখতে চায়না।তার কলেজ জীবনের তোয়াকে সে হৃদয়ে নিরাপদে রাখতে চায়।

( উপরের ছবিদুটি আমার ছাত্র শ্রীমান সুজিত কুমার দাসের আঁকা)

২০ মার্চ ২০১৮
বারাসাত
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×