somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরীচিকা ( পর্ব - ১৩ )

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রেসিডেন্ট সাহেব অত্যন্ত ভদ্রলোক। তিনি আমাকে নিরাশ করেনি। বাবার খবরে উনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে যথাসম্ভব সাহায্যও করলেন। উনি আমার নিকট শেফালী ম্যাডামের বাবার খবরও জানতে চাইলেন। আমি যেটুকু জানি বলাতে নিজে থেকেই বললেন,
-দেখি ,আজ একবার ফোন করে ম্যাডামের বাবার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব ।
- হ্যাঁ স্যার, যদি সময় পান তাহলে একবার খোঁজ নেওয়াটা দরকার। আমি অবশ্য আমার বাবাকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে ওদিকে আর খোঁজ নেওয়ার সুযোগ পায় নি।
- হ্যাঁ ঠিকই ! আপনার নিজের বাবা যেখানে অসুস্থ আপনি আর খবর নেবেনই বা কি করে !
চলে আসার সময় উনি আবার বললেন,
- চৌধুরী বাবু ! আপনার বাবার চিকিৎসার জন্য যে টাকা দিয়েছি, এটা কাউকে বলবেন না। প্রত্যেক মাসে আপনি যেমন বেতন পান নেবেন ; আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যতটা বেশি সম্ভব পরিশোধ করার চেষ্টা করবেন। বিদ্যালয় চালাতে গেলে আমাদেরকে মানবিক হতে হয় ঠিকই, তবে জানাজানি হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠান চালানো সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিউত্তরে মুখে কিছু না বলে আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম এবং শরীরী ভাষাতে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রুমে ফিরে এলাম।

আমার হঠাৎ আগমন , মনমরা ভাব আবার পরের দিন বাড়ি ফিরব শুনে হোস্টেলের সবাই কৌতুহলি হলেও আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে নির্লীপ্ত থেকে পরদিন সকালে সরাসরি নার্সিংহোমে চলে আসি।
বাবা মোট সাত দিন নার্সিংহোমে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট সাহেব অভিজ্ঞ মানুষ ; টাকার অঙ্কটি আমাকে মুখে বলতে হয়নি। আনুমানিক খরচ হিসাব করে একটি বড় এমাউন্টের টাকা সেদিন উনি আমাকে দিয়েছিলেন। যে টাকাটা দিয়ে নার্সিংহোমের বিল মিটিয়ে,ঔষধ কিনেও আরো কিছু রয়ে গেছিল। বাবাকে ছুটি করিয়ে বাড়িতে নিয়ে পরের দিন বাড়িতে থেকে মা- বোনকে ঔষধ পত্র খাওয়ানোর যাবতীয় নিয়ম কানুন বুঝিয়ে আরো একদিন পরে আমি আবার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে ভাবছিলাম আরও দুটো দিন যদি বাবার পাশে থাকতাম , তাহলে খুব ভালো হতো । কিন্তু ইতিমধ্যে প্রায় এগারো দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে আমি স্কুল থেকে চলে এসেছি । এমতাবস্তায় আর অনুপস্থিত থাকাটা বিবেকে বাঁধলো । পাশাপাশি মুখের কথাতে যে মানুষটি এতগুলি টাকা দিয়ে দিলেন ; তার প্রতিষ্ঠানের সামান্যতম ক্ষতি না করার চিন্তা ও এক আনুগত্যবোধের অভিব্যক্তিতে সাড়া দিয়ে নিজেকে স্কুল মুখী করলাম।

স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম শেফালী মাডাম এখনো ফেরেননি । ওনার বাবার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য মনের মধ্যে একটি প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল । দু একজনকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেও তেমন কোন সদুত্তর পায়নি । এদিকে আমার বাড়িতেও যেহেতু বাবার শারীরিক অবস্থা খুব সুবিধার ছিল না । কাজেই সব মিলিয়ে প্রথম কয়েক দিন স্কুলের কোন কাজেই একেবারে মন বসাতে পারিনি । বারবার বাবার কথা মনে পড়তো ; আর নিজেকে খুব বিষন্ন লাগতো। সময় যেন কিছুতেই কাটতে চাইছিল না । চল্লিশ মিনিটের ক্লাস গুলিকে খুব দীর্ঘ মনে হতো । একেকটি দিনকেও কতই না বড় মনে হতো ।

উল্লেখ্য সাথে সাথে স্কুলের পুরানো কথা মনে করে মিলিদি বা রমেনদাকে একটু এড়িয়ে চলতাম। অন্য সময় সাধারণত দেখা হতো না বা সুযোগও তেমন ছিল না । খাওয়ার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটাও কথা না বলার চেষ্টা করতাম। একদিন রমেনদা জিজ্ঞাসা করল,
- মাস্টারদা একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
-হ্যাঁ! নিশ্চয়ই। বলো কি জানতে চাও?
-সেদিন হঠাৎ করে চলে এলেন, কিছু বললেন না। আবার পরদিন সকালে চলে গেলেন। তার পরে ফিরে এসে তো আমাদের সঙ্গেও কথা বলছেন না । কি যে ব্যাপার আপনার আমারা তো কিছু বুঝতে পারছি না....
- তুমি ঠিকই ধরেছ। আসলে বাবার শরীর খারাপ দেখে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে নিজেকে এতটা হতাশ বা বিষন্ন লাগছিল যে কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না । সারাক্ষণ বাবার কথা মনে পড়ছিল। রাতে স্থির করেছিলাম যে পরদিন সকালে বাড়ি ফিরে যাব। প্রেসিডেন্টসাহেবকে জানিয়ে তাই সেদিন চলে গেছিলাম।
-কি বলছেন ! আপনার বাবাও অসুস্থ ! কি হয়েছে উনার ?
-হ্যাঁ , ওনারও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ।
-এখন কেমন আছেন ?
-অবস্থার কিছুটা উন্নতি' হয়েছে । ওষুধ পত্র চলছে। খুব রেস্ট্রিকশনে থাকতে হবে। বাকিটা কপাল !
- ও ! এইজন্য আপনাকে গত কয়েকদিন ধরে খুব মনমরা মনমরা দেখছি !
আমি প্রতিউত্তরে মুখে কিছু না বলে আবার একটু শুকনো হাসি দিতেই ; রমেনদা বলে উঠলো,
- ঠিকই তো বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে বাইরের কাজে একদম মন বসেনা। আপনার মনের অবস্থা আমি ঠিক বুঝতে পারছি, মাস্টারদা!
রমেনদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মিলিদি টেবিলে ভাত রেখে জিজ্ঞাসা করল,
-আপনি সেই যে শেফালী ম্যাডামের সঙ্গে চলে গেলেন ; সেখান থেকেই কি ওনার সঙ্গে ছিলেন ?
-এ কেমন কথা হলো মিলিদি ?
-না না মাস্টারদা, খারাপ ভাবে নেবেন না প্লিজ ! আসলে আমি বলতে চেয়েছি সেই দিন থেকে হসপিটালে ছিলেন কিনা ।
- না আমি এতদিন ওখানে ছিলাম না । প্রথম দুদিন ছিলাম ঠিকই, কিন্তু একটি অসুবিধার জন্য সেই যে বাড়িতে চলে গেলাম , সেখান থেকেই পড়লাম আরেকটি বিপদে। এবার আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এরমধ্যে বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে হোস্টেলে এলেও মন বসেনি । যে কারণে পরেরদিন সকালে বাড়ি চলে যায়। এবার বাবা একটু সুস্থ হতেই কয়েকদিন আগে আবার চলে আসি ।
-আপনার বাবাও তাহলে অসুস্থ হলেন ? কি হয়েছিল ওনার?
- হ্যাঁ ! রমেনদার সঙ্গে সেটাই আলোচনা হচ্ছিল। আমার বাবারও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে । তবে শেফালী ম্যাডামের বাবার মত অতটা সিরিয়াস নয়, এই যা ।
-এখন কেমন আছেন ?
-অনেকটা সুস্থ হয়েছেন । তবে ভীষণ রেস্ট্রিকশনে থাকতে হবে। আচ্ছা! মিলিদি তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল।
-আমার সঙ্গে ! কি কথা আছে বলতে পারেন ।
- প্রথম থেকেই দেখছি ,তুমি সবার সামনে ঘোমটা দাও না। কেবল আমাকে দেখলেই বড় করে ঘোমটা টানো । কিন্তু কেন ? কেন এমন করো ? অথবা সত্যি করে বলোতো তুমি কে ?
-আপনি আমাকে দেখতে চান ? তাহলে দেখুন আমাকে চিনতে পারেন কিনা ।
বলেই সামনের ঘোমটা সরাতেই আমি চমকে উঠলাম !!
-অ্যা অ্যা অ্যা... ! মিতালী দি ! তুমি তো সেই মিতালী দি না..
-এইতো ! তাহলে চিনতে পেরেছেন দেখছি।
- হ্যাঁ ! চিনতে তো ঠিক পেরেছি ; কিন্তু মিতালী থেকে মিলি নাম নেওয়ার কারন কি ?
- সে অনেক কথা ...

চলবে...

বিশেষ দ্রষ্টব্য : ১- আজকের পর্বটি বিশিষ্ট কবি ও লেখক আমার প্রিয় বন্ধু লতিফভাইকে উৎসর্গ করলাম।

২-দশম ব্লগ দিবসে সকলকে অগ্রিম শুভেচ্ছা ভালোবাসা ও অভিনন্দন রইল।





সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৭
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×