ছোটবেলাতে খুব সাইকেলের শখ ছিল।বাসার নিচে অনেক খোলা জায়গা ছিলো, অনেকে সাইকেল চালাতো, আর আমি শুধু দেখতাম। মাঝে মাঝে মা কে বলতাম, একটা সাইকেল কিনে দাও। শুধু শুনতাম, দিব, দিব, আগে সাইকেল চালানো শিখো, তারপর কিনে দিব। কিন্তু অন্য কারো থেকে ধার করে কিছু নেওয়া আমার পছন্দ ছিল না। তাই সাইকেল চালানো শিখা হয় নাই। ইচ্ছে ছিল, যদি নিজের একটা সাইকেল হয়, তবে সেটা দিয়েই সাইকেল চালানো শিখব। কিন্তু একটা ছাপোষা ফ্যামেলীতে সাইকেল অনেক বিলাসীতা। পরে একসময় বড় ভাই থেকে শর্ত আসলো, যদি স্কুলের পরীক্ষাতে বৃত্তি পাও, তবে কিনে দিব। তারা জানতো, এটা আমার জন্য একটা অসম্ভব শর্ত ছিল , এটা মনে করে আমার জন্য হয়ত এমন একটা শর্ত জারী করেছিল।
কিন্তু কোন এক অজানা কারণে অষ্টম শ্রেণীতে আমি এই শর্ত পূরণ করে ফেলি। কিন্তু আমি সাইকেল পাই নাই। আসলে ঐ সময়টাতে পারিবারিক/ অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, কখনো আর সাইকেলের কথা বলতে পারি নাই। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো অবস্থা। মুখ থেকে সাইকেল শব্দ আর বের হয় নাই।
সেই অজানা কষ্টটা অনেকদিন ধরে পুষে রেখেছি। সাইকেল চালানো আর শিখা হয় নাই।
কিছুদিন আগে বড়ভাবী বলছিলো, পাশের বাসার কিছু ছেলে সাইকেল চালায়, এটা দেখে আমার ৪ বছরের ভাতিজাটা সারাদিন সাইকলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা শুনে আমার নিজের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল আবার। তাই গতবছর বাড়ীতে গিয়ে পরদিন ই একটা সাইকেল কিনে এনেছিলাম, লাল সাইকেলটার দাম নিল ৪৫০০ টাকা । বিকাল বেলা, সে ঘুমাচ্ছিল। ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললাম, এই দেখো সাইকেল।
চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময় আর আনন্দ নিয়ে ভাতিজা বললো, "এটা আমার জন্য?"
তার এই আনন্দটুকু দেখে আমি আমার ছোট বেলার সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১১