শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এই লিখাটা একটু স্পর্শকাতর। অনেকের হয়ত পছন্দ না হতে পারে। তবে আমি যা লিখছি, এর প্রত্যেকটা ঘটনার নাড়ী নক্ষত্র আমার জানা আছে, কিছুটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।
পরিবার ১:
তানজীর ও রেখা, দুইজনই সন্মানজনক উচু পদে চাকুরী করে। খুব সুন্দর সংসার। নিজের বাড়ী, গাড়ী সবই আছে। তানজীরের বাবাও ভালো চাকুরী করতেন, কিছুদিন আগে মারা গেছেন। কোন কিছুর অভাব নাই। তারপরও কিছু একটা কমতি রয়েছে যা ভোগাচ্ছে রেখা কে। সেটা হলো, শ্বশুরবাড়ীকে আপন করে নেওয়া। তানজীর এর মা এখনো ছেলেকে নাবালক জ্ঞান করে থাকেন এবং মায়ের কথাই সংসারের বেদবাক্য, এটা মেনে নিয়েই রেখাকে সংসার করতে হচ্ছে।
ঘরের বাইরে কর্পোরেট জগতে রেখার একটা আলাদা পরিচিত আছে। একটা কর্পোরেট অফিসের উঁচুপদে কর্মরত। কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকলে মনটা ছোট হয়ে যায়। ঢাকায় বিশাল বড় ফ্ল্যাট কিন্তু নিজের কোন আত্মীয়স্বজন এলে একবেলা থাকে না। বিয়ের ৩-৪ বছর পরও কি রান্না হবে, কিংবা কি বাজার করতে হবে, সেটার কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রেখার নাই।নিজের কোন গেস্টকে একবেলা দাওয়াত দিতে পারে না।
পরিবার ২:
আরিফ আর কূহ, এরাও চাকুরী করে। বেশ ভালো চাকুরী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবস্থা সম্পন্ন বলা যায়। এদেরও একই অবস্থা। আরিফের মায়ের খবরদারী সব সময়। কথায় কথায় নিজের ছেলেকেও গালাগালি করে। সেটা কূহ'র খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু বলতে পারে না। কূহ যদি কোন তরকারী রান্না করে, শাশুড়ি চোখ বন্ধ করে বলে দিবে , সেটা ভালো হয় নাই। শাশুড়ি সবসময় চায় আরিফ তার কথামত চলুক। কূহ প্রানন্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শাশুড়ির মন জয় করতে। নিজের চাকুরী বেতনের টাকার একটা বড় অংশ খরচ করে শাশুড়ীকে একটা সেটা গিফট দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোন লাভ হয় না। ৪ বছর হয়ে গেল, এখনো আপন হয়ে উঠতে পারে নাই।
পরিবার ৩:
আসিফ আর তানিয়া, তারা থাকে বিদেশে। আসিফ তার পরিবার নিয়েই বিদেশে থাকতো। তানিয়াকে বিয়ে করে দেশ থেকে নিয়ে গেছে। বিয়ের পর তানিয়া একটা চাকুরী জোগাড় করলো। এরপর শাশুড়ি তার ছেলের বউ থেকে বাসাভাড়া নেওয়া শুরু করলো। একসময় মনে হলো, ছেলে তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে, তারপর খবরদারীর মাত্রা বেড়ে গেল।
খবরদাড়ীটা এমন, বেডরুমের দরজা লাগানো যাবে না, এমনকি রাতের বেলাও। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, আসিফ আর তানিয়ার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তানিয়া অনেক চেষ্টা করেছিল, আলাদা বাসা নিয়ে থাকবে, কিন্তু আসিফ রাজী হয় নাই। তানিয়ার ভাষ্য "আসিফের মেরুদন্ড নাই"
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদিও ঘটনা আলাদা, তবে এইরকম আরো ৩-৪টা পরিবারের ঘটনা জানি, কিন্তু সবগুলোর সূত্র অন্যখানে। প্রত্যেকটা পরিবারে ছেলেটা হল তাদের মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ছেলের যখন বিয়ে হয়, তখন মায়েদের মনে একটা অনিশ্চয়তা ভর করে। মা সবসময় মনে করতেন, ছেলে তার কথার বাইরে যাবে না। বিয়ের পর মনে হয়, তার ছেলে এখন অন্যজনের কথা শুনছে। এই অনিশ্চয়তাটুকু থেকেই অনেক সংসারে অশান্তি শুরু হয়। যদি শেষকালে মাকে ফেলে ছেলে চলে যায়, যদি আলাদা বাসা নিয়ে চলে যায়? মা একা কিভাবে থাকবে?
কিন্তু মা-দের এটাও বুঝা উচিত, ছেলে যখন বিয়ে করে, তার নিজের একটা সংসার হয়েছে। তার দৈনন্দিন রুটিনেরও একটু পরিবর্তন আসতে পারে। এই পরিবর্তন টুকু হয়ত অনেক মা মেনে নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে ছেলের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। মা এবং বউ এর মাঝে ব্যালেন্স করে ছেলেকে চলতে হবে। যারা চলতে পারে না, তাদের সংসারে অশান্তি আসে।
ছেলের বউদেরও বুঝা উচিত, মা হয়ত ৩০ বছর ধরে সংসারের কতৃর্ত্ব ধরে রেখেছেন, সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করা উচিত নয়।
মায়ের উচিত, ছেলের বউ এসেছে, তাকে আস্তে আস্তে সংসারের কতৃর্ত্ব বুঝিয়ে দেওয়া।
শহরের কথা শুনলেন। এইবার গ্রামে যাই।
শুনতে হয়ত খারাপ খারাপ লাগবে। ছেলে দুবাই থাকে। বিয়ে করার জন্য দেশে আসতে চাইছে, কিন্তু মা-বাবা নিষেধ করেছে, এত কম বয়সে (২৮ বছর) কিসের বিয়ে? আসলে মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে মা-বাবার। যদি বিয়ের পর ছেলে আর যদি সংসারের খরচ না দেয়?
যেসব পরিবারে ২-৩টা ভাইবোন আছে, সেই পরিবারে এই সমস্যটা কখনো দেখবেন না। শুধুমাত্র ছেলেকে বিয়ে করানোর পর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা থেকেই এই সমস্যা গুলো তৈরী হয়।
আমার কথা:
লেখাটা কোন মা-বাবাকে আঘাত করার জন্য নয়। লেখাটা লিখেছি সেইসব একমাত্র ছেলেদের জন্য, যারা মা এবং বউ এর সম্পর্কে ব্যালেন্স করে চলতে পারে না তাদের জন্য। মা আপনজন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই বলে নিজের স্ত্রীকে অমর্যাদা করাও উচিত নয়। সুখে থাকতে গেলে এই দুইজনকেই খুশি রাখতে হবে।
কেউ যদি ভিডিও আকারে এই রকম মা-ছেলের সম্পর্ক দেখতে চান, তবে "বুবুনের বাসর রাত " নাটকটা দেখতে পারেন।
Disclaimer : এটা কোন নাটকের প্রচারণা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ ভোর ৫:৪৪