দেশের কাহিনী
দেশে ড্রাইভিং শিখার জন্য ধানমন্ডি এলাকার এক নামকরা ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হলাম। ক্লাস রুম লেসন নিতে হলো, তারপর রাস্তায় নামাবে তারা। রাস্তায় চালানো শিখাবে ৮ ঘন্টা। কোর্স ফি দিতে হলো ৮০০০ টাকা। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পর ৯ মাস পরে আমাকে পরীক্ষার ডেট দিলো। ড্রাইভিং স্কুল থেকে থেকে জানালো হলো, ৩০০ টাকা খরচ করলে তারা পরীক্ষার ডেট আগিয়ে এনে দিতে পারবে। খরচ করলাম ৩০০ টাকা। ২ মাসের মাঝে পরীক্ষার ডেট পেলাম।
৮ ঘন্টা গাড়ি চালানো আর ৪ ঘন্টা ইনক্লাস লেসন নিয়ে আমি মোটামোটি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টার সময় জোয়ার সাহারার বিআরটিসির ডিপোতে গেলাম সকাল বেলা, ড্রাইভিং স্কুলের মানুষেরাই আমাকে নিয়ে গেল পরীক্ষাস্থলে। লাইন ধরে দাড়িয়ে ঘন্টা খানেক দাড়ানোর পর রিটেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বসতে পারলাম। আরো ১ ঘন্টা পর রিটেন পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো। তারপর আবার লাইনে দাড়ালাম ভাইভা দেওয়ার জন্য। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ভাইভা পাস করে শেষ মুক্তি পেলাম দুপুর ১টায়। এরপর রোড টেস্ট বাকী আছে।
দুপুর একটার দিকে ড্রাইভিং স্কুলের মানুষটা বললো, স্যার রোড টেস্ট দিতে দিতে বিকাল ৪টা-৫টার লেগে যেতে পারে। আজকে যদি শেষ করতে না পারে তারা, তবে কালকে হয়ত আবার আসতে হতে পারে। এর চেয়ে বরং আপনি আমাকে ৩০০ টাকা দেন, আপনাকে পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। চলেন বাসায় ফিরে যায়।
বৈশাখের গরমে এটা একটা লোভনীয় অফার। ৩০০ টাকার বিনিময়ে ৪ ঘন্টা রোদের মধ্যে দাড়ানো থেকে মুক্তি। যথারীতি আমি লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। পুরোপুরি জেনুইন, বিআরটিএ তে গিয়ে ছবি তুলতে হলো, চিপওয়ালা লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। ১০০% জেনুইন।
দেশের রোড টেস্টের কোন অভিজ্ঞতা আমার হলো না। পরিচিত একজনের কাছে শুনলাম, তাকে জাস্ট বললো, গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেখাতে। গাড়ি চালু করলো, আর পরীক্ষায় পাস সে।
বিদেশের কাহিনী
আমাকে প্রথমে রিটেন টেস্ট দেওয়া লাগল। রিটেন টেস্ট দেওয়ার জন্য ১০০ পৃষ্ঠার নিয়ম কানুনের বই পড়তে হলো। তারপর রোড টেস্ট। রোড টেস্ট দেওয়ার আগে ১২ ঘন্টা ইনস্ট্রাক্টর থেকে লেসন নিলাম। বুঝলাম, দেশে ৮০০০ টাকা দিয়ে ধানমন্ডির স্কুল থেকে তেমন কিছুই শিখা হলো না। তারা শিখিয়েছিল শুধু গাড়ি চালানো, কিভাবে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করতে হয়, কিভাবে হেডলাইট চালাতে হয়, সেই সাথে ডানে আর বামে গাড়ি ঘুড়ানো, এক্সিলারেশন আর ব্রেক, ধানমন্ডি লেকের আশেপাশে হালকা গাড়ি চালানো। আর কিছু না। পার্কিংটাও শিখায় নাই ঠিক মত।
বিদেশে এসে উপরের সবগুলো শিখলাম প্রথম লেসন এ। এরপর বাকী সময়গুলো শুধু গেল নিয়ম কানুন মেনে গাড়ি চালাতে।
বিদেশের পরীক্ষায় পার্কিং টেস্ট দিতে হবে আর ২০ মিনিট রাস্তায় চালাতে হবে। পরীক্ষায় পাস নাম্বার বলে কিছু নাই। ২০-৩০ মিনিটের পরীক্ষায় ভুলের সংখ্যার হিসাব নেয় শুধু। প্রতি ভুলের জন্য অপরাধভেদে ৫,১০,২০, ৫০ নাম্বার কাটা যায়। ৪০ কিংবা ৪৫ এর বেশি নাম্বার কাটা গেলেই ফেল।
১ম বার: একটা স্টপ সাইন এ আমার গাড়ি পুরোপুরো থামানো হয় নাই, রোলিং স্টপ ছিল। একেবারেই ৫০ নম্বর কাটা গেল অতএব আমি ফেইল।
২য় বার: ২-৩ টা ছোট খাটো ভুল। গাড়ি রাস্তার হলুদ মার্কে লেগেছে, টার্ন নেওয়ার সময় একটু ওয়াইড ছিলো। ছোটখাটো ভুল, অতএব আবার ফেইল।
৩য় বার: রাইট টার্ণ নেওয়ার সময় পথচারী এর রাস্তা পার হবে কিনা, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা না করেই চলে গিয়েছি। অতএব আবার ফেইল।
এরপর আমার প্রাকটিস করা শুরু করলাম, আরো ১৬ ঘন্টা চালালাম।শুধুমাত্র হাত পাকানো আর নিয়ম কানুন ঝালাই করার জন্য।
৪র্থ বার: এইবার আমি পাস করলাম। ১০০% একুরেট, কোন ভুল নাই।
বিদেশে এসে একটা লাইসেন্স পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো। গাড়ি কমবেশি সবাই চালাতে পারে, নিয়ম কানুন মেনে চালানোটাই আসল ব্যাপার।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫৩