somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেগা -বিপর্যয়

১০ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিকে একটি হিমশৈলের সঙ্গে আঘাত পেয়ে যখন ডুবে যায় আর এম এস টাইটানিক তখন তা হয়ে উঠেছিল ধনতন্ত্রের অহংয়ের একটি মস্ত বিপর্যয়ের মুহূর্ত৷ ২,২২৪ জন আরোহী ও কর্মীর মধ্যে ১৫০২ জনের সলিল সমাধি ঘটে সেদিন৷ আধুনিক যুগের অন্যতম বৃহত্ এই ট্র্যাজেডির কলঙ্কের দাম ছিল প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার , মানুষ এবং সম্পদের দাম না ধরলে , বেলফাস্টের হারল্যান্ড অ্যান্ড ওল্ ফ একসঙ্গে দু’টি জাহাজ বানাবার কন্ট্র্যাক্ট পেয়েছিল৷

১৯৯৭ সালে এই ট্র্যাজেডির উপর আধারিত জেম্ স ক্যামেরনের ‘টাইটানিক ’ ছবিটির বাজেট ছিল প্রায় ২০০ মিলিয়ন , উইকিপিডিয়ার মতে ছবিটির রোজগার প্রায় ২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে৷ পরিচালকের প্রায় প্রতিটি ছবিই আসলে সিনেমা -সংক্রান্ত প্রযুক্তির এক একটি পরীক্ষা ও তার চড়ান্ত প্রদর্শন , ‘টাইটানিক ’-ও তার অন্যথা নয়৷ বলা যেতে পারে ১৯১২ -র কলঙ্কের মোচন ঘটেছিল এই ছবির মারফত , এই টাইটানিক ডোবেনি৷ অতঃপর তার নির্মাণ , তার নির্মিতি, তার বাহুল্য , তার প্রাচুর্য ধনতান্ত্রিক ছায়াছবির ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে গিয়েছে৷ মহাবিপর্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্মাণের এই দৃষ্টান্ত সিনেমার ইতিহাসে একটি অবধারিত মাইলফলক হিসেবে থেকে গিয়েছে ও যাবে৷ ‘টাইটানিক ’ তখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালিজ্ মের শ্লাঘার মিনার৷

ডিজিটাল ইমেজ নির্মাণের যে পথ প্রদর্শন করল ‘টাইটানিক ’, তার ফলে ইলিউশন হয়ে উঠল এমনই বাস্তব যেমনটি অ্যানালগ যুগে সম্ভব ছিল না৷ স্পেকট্যাকলের বাংলা বোধ হয় করা যায় দৃশ্যাড়ম্বর , সেই রকম আড়ম্বর অতঃপর ঘন ঘন আসতে আরম্ভ করল হলিউডের পর্দায়৷ গুগলে শ্রেষ্ঠ ১০টি ডিস্যাস্টার মুভিজের সন্ধান করলে যে তালিকাগুলি আসবে তাদের সিংহভাগ ছবিই যে এই শতকে নির্মিত তা হলফ করে বলা যায়৷ প্রতিটি ছবিই স্পেশাল এফেক্ট্ স -এর জয়জয়কার , প্রতিটি ফ্রেমের মূল্য হাজার হাজার ডলার৷ বলিউড হলিউডকে নির্মাণ ও রোজগারে প্রায় ছুঁয়ে ফেললেও এই গোত্রের ছবি আরও ৷

অনেকদিন হলিউডের একচেটিয়া হয়ে থাকবে , এর মাধ্যমেই চলচ্চিত্র সাম্রাজ্যের একছত্র অধিপতির একমাত্র রণহুংকার , তা বলা যায়৷ একমাত্র হলিউডই পারে পর্দায় বিশ্বজোড়া বিপর্যয়ের পেশি প্রদর্শন করতে , যেখানে ইমেজ , প্রযুক্তি , পুঁজি প্রায় একাত্ম হয়ে তার নির্মাতা ব্যবস্থাকে বনের অপ্রতিরোধ্য রাজা হিসেবে ঘোষণা করে৷

এ আর নতুন কথা নয় , কোনও মৌলিক আলোকপাতও এটা নয় যে একমাত্র এই জাতীয় ছবিতেই আমেরিকার জাতীয় আত্মপরিচয়ের জয়জয়কার সম্ভব ; ভিনগ্রহীর আক্রমণ , আণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা --- এই সবের হাত থেকেই এসব ছবিতে আমেরিকানরা পৃথিবীকে উদ্ধার করে প্রায় শেষ মুহূর্তে, যার আগে অর্ধেক বিশ্ব ছাড়খার হয়ে গিয়েছে৷ সেই প্রসঙ্গ অনেক আলোচিত হয়েছে , কিন্ত্ত এক ধরনের অসমান্ত আলোচনা করতে চাইছি এখানে --- কেন এই সার্বিক বিপর্যয়ের প্রতি আমাদের এই টান , আমরা যারা বড়ো পর্দায় এই ছবিগুলি দেখবই ? রাজারাজড়াদের যে কত ক্ষমতা , তার জৌলুস যে কত--- সিনেমা কী ভাবে এখনও হলিউডের করতলেই পোষ্য , সে তো আছেই৷ কিন্ত্ত যে অবধারিত আতঙ্ক , যে অসহায়তা এইসব ছবি উদ্রেক করে --- বিশেষ করে সেই সব ছবি যা ‘টাইটানিক ’ বা ‘শিন্ডলার্স লিস্ট ’-এর মতো ঐতিহাসিক ঘটনার উপর আধারিত , অর্থাত্ যা ঘটেছিল এবং আবার ঘটতে পারে --- তার বাস্তবায়নের প্রতি আমাদের এই অমোঘ আকর্ষণ কেন , সে কি শুধুমাত্র এই দেখার জন্য যে শেষবেশ কিছু কল্পিত নায়ক যে ভাবে দুঃসময়ের অবসান ঘটাবে , তা কতটা অবিশ্বাসযোগ্য ? কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা তো তেমনই৷

আলবের কাম্যু -র ‘প্লেগ ’ এমনই এক বিপর্যয়ের উপর আধারিত উপন্যাস ছিল৷ ফ্রান্সের উপকূলবর্তী একটি শহরে ক্রমবর্ধমান মহামারীর একটি দলিল এই উপন্যাসের আতঙ্কই ছিল এই যে যত উপন্যাসটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তব হয়ে উঠবে , যতই ডিটেলের পর ডিটেল জমবে , ততই মহামারী হয়ে উঠবে ফ্যাসিবাদের অমোঘ রূপক৷ সন্ধেবেলায় ট্রামভর্তি মৃতদেহ শহরের বুক চিরে যখন যায় , তখন তা স্পেকট্যাক্ ল যতটা , তার চেয়েও দৈনন্দিনের মতো স্বাভাবিক বলেই হাড় -হিম করা আতঙ্ক তৈরি হয়৷ যেহেতু শহরে গোরস্থানের স্থান অকুলান , তাই বড়ো বড়ো গর্ত খুঁড়ে তাতে দেহ ফেলে চুন ঢেলে দেওয়া হয়৷ যেহেতু মৃত্যু অবধারিত তাই শহরের কথাশিল্পী তার কাজ করে তোলেন অতি ধীরে , এক একটি শব্দলিখনে অনেক সময় দেন তিনি৷ যখন শহরের মেয়র নিজের রোগগ্রস্ত সন্তানের দেহ তুলে দেন পরীক্ষামূলক প্রতিষেধকের গিনিপিগ হিসেবে , তখন তার শরীর হয়ে ওঠে শহরের মেটোনিমি প্রায়৷ তার হয়তো বেঁচে থাকার কথা ছিল কয়েক ঘণ্টা , সে বেঁচে থাকে আরও কয়েক দিন , ভাইরাস ও প্রতিষেধকের মধ্যে যুদ্ধের ফলে নতুন যন্ত্রণায় তার শরীর বেঁকেচুরে যায়৷ মানুষের কিছুই করার থাকে না বিশেষ , একদিন মহামারী থিতিয়ে যায়৷ আর শহরে যখন প্রাণ ও আলো ফিরে আসছে একটু একটু করে , তখন একটি টিলার উপর থেকে সেই শহরকে দেখতে দেখতে ভাবেন ডাক্তার রিউ যে ভাইরাস মরে না , হাইবার্নেট করে , দীর্ঘ শীতঘুম কাটিয়ে একদিন সে আবার জেগে উঠবে৷

হলিউডি বিনোদনের পাশে গত শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রসঙ্গটি আনলাম না৷ বক্তব্য এই যে ‘প্লেগ ’-এ বিপর্যয়ের হাত থেকে চিকিত্সাবিজ্ঞানের বিজয়ের কোনও মুক্তি নেই বলেই কি উপন্যাসটি এত অমোঘ ? বা , হলিউডি ছবিগুলির যে জগত -উদ্ধারের নিষ্পত্তি তা না থাকলেই কি তা উপরোক্ত উপন্যাসটির ধারে -কাছে যেতে পারত ? অবশ্যই পারত না৷ আখ্যানের তৃন্তির ইতর বিশেষের জন্য নয় , প্রকৌশলে পুঁজি ও প্রযুক্তির কোনও উপস্থিতি উপন্যাসটিতে ছিল না , উপন্যাসে থাকে না৷ সিনেমায় থাকে ; পর্দায় বিপর্যয়ের ভয়ঙ্করতা যখন পুঁজির জৌলুস ধারণ করে তখন তা হয়ে ওঠে মণিমানিক্যের মতো সুন্দর৷ ধ্বংস যে চমকপ্রদ , প্রলয় যে শিহরণ সঞ্চার করে , তার নির্মাণ যে ধনতান্ত্রিক দুনিয়ায় করতালিযোগ্য , এর সাক্ষ্য রাখে এই সব ছবির প্রদর্শনের ইতিহাস৷ এক সময়ে ফিউচারিজ্ম নামে একটি আভাঁ-গার্দ শিল্প -আন্দোলন শুরু হয়েছিল ইউরোপে বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে৷ প্রযুক্তি , গতি , হিংসার জয়গান গাওয়া এই আন্দোলনের বক্তব্য ছিল ---‘উই অল গ্লোরিফাই ওয়ার --- দ্য ওয়ার্ল্ডস অনলি হাইজিন -মিলিটারিজ্ম , প্যাটরিওটিজ্ম , দ্য ডেসট্রাকটিভ জেসচার অফ ফ্রিডম -ব্রিঙ্গারস , বিউটিফুল আইডিয়াস ওরথ ডাইং ফর , অ্যান্ড স্কর্ন ফর উওম্যান৷ ’ আন্দোলনটির অনেক পুরোধাব্যক্তিই স্বাভাবিক ভাবেই ফ্যাসিজ্ মের অনুগামী হয়ে যান৷ এটাই ভাবার , ডিস্যাস্টার গোত্রের ছবি কি আমাদের সে রকম শিল্পের দর্শকে রূপান্তরিত করে ? ধ্বংস দর্শনে এমন সামুহিক আনন্দ পাওয়া যেত রোমান অ্যাম্পিথিয়েটারে , পশু ও মানুষের মরণখেলা দেখে , তাই কি ফেরত্ আসে এখানে ? হয়তো পর্দায় ধ্বংসের অবিকল নির্মাণ আসলে আমাদের ৷

দেয় স্থান ও দূরত্বের আরাম ও নিশ্চিন্তি৷ ওইখানে যা ঘটছে তা আমার পরিসরে ঘটছে না , আমি নিরাপদ৷ ওসব অন্য কোথাও , অন্য কোনওখানে হয়৷ আপাতত আমি ওই প্রযুক্তির উত্কর্ষের বিষয়ী , যতই নিমজ্জিত হব অবধারিত বিপর্যয়ে , ততই বাড়তে থাকবে দূরত্ব --- স্থানিক ও কালিক৷ হিরোশিমা , ভোপাল , মোদীর নরক গুজরাট , নানকিং --- অন্য কোথাও ঘটেছিল৷ মনে রাখতে হবে , দর্শকসত্তার এই নিরাপত্তা চিরকাল ছিল না , দেশ ভাগ , সমকালীন দাঙ্গা ও পরবর্তী ধ্বংসাবস্থা নিয়ে বহুদিন ভারতীয় ছবি হয়নি , করা যায়নি৷ ১৯৬৫ -তে যশ চোপড়া নির্মিত ‘ওয়ক্ত ’ ছবিটি আসলে দেশভাগ নিয়েই , কিন্ত্ত সেখানে মেটাফর হিসেবে ছিল ভূমিকম্প৷

দু’টি ছবির প্রসঙ্গ আনা যায় , যেখানে ঘনিয়ে আসা বিপর্যয়ের আতঙ্ক বা দুঃসময়ের বা ধ্বংসের ঘণ্টাধ্বনি যেমন ভাবে আসে তা হলিউডের ছবির চোখের আরাম , দূরত্বজনিত নিরাপত্তা ও থ্রিলের আমোদ কোনওটাই দেয় না (যদিও দু’টি ছবিই প্রথাগত ভাবে --- ইমেজে ও নির্মাণে --- ‘সুন্দর ’)৷ মাইকেল হ্যানেকে পরিচালিত ‘দ্য হোয়াইট্ রিবন ’ (২০০৯ ) একটি নয়নাভিরাম ছবি , সাদা -কালোয় তোলা৷ জার্মানির একটি গ্রামে পিতৃতন্ত্র ও পুরোহিততন্ত্র প্রবল এবং নিষ্ঠাপূর্ণ৷ গ্রামের যাজক বেনিয়মী বালক -বালিকাদের হাতে শাস্তিস্বরূপ বেঁধে রাখেন একটি সাদা রিবন --- যে পবিত্রতা তারা লঙ্ঘন করেছে তার প্রতীক হিসেবে৷ যে কিশোরটি হস্তমৈথুন করেছে তার হাত প্রতি রাতে খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়৷ যে চিকিত্সকটি দয়ালু তিনি তাঁর প্রতিবেশিনীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন , তাঁর নিজের কন্যাসন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটিও সন্দেহজনক৷ স্কুলে একটি বালিকাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সমন করলে সে তত্ক্ষণাত্ আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে যায়৷ ফাঁকা করিডর ও বন্ধ দরজা অন্তরালের নিয়মভঙ্গের শাস্তির সাক্ষ্য রাখে৷ এমতাবস্থায় এই গ্রামে অদ্ভুত দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে --- আত্মহত্যা , অগ্নিসংযোগ , হিংসা ইত্যাদি ঘটে যার অনুসন্ধানে প্রায় ডিটেকটিভ গল্পের আকার ধারণ করে ছবিটি --- কিন্ত্ত কোনও রহস্যেরই সমাধান হয় না৷ অথচ একটা ইঙ্গিত থেকে যায় যে এই সব কিছুই হয়তো গ্রামের সেই সব অবদমিত বালক -বালিকাদেরই কীর্তি যাদের অব্যক্ত আবেগ ও অভিব্যক্তিহীন মুখমণ্ডল ছবিটিকে বোধগম্যতার অপারে নিয়ে যায়৷ ছবির শেষে সংবাদ পাওয়া যায় যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে , হয়তো এই গ্রামের প্রতিটি কিশোর -কিশোরীই আগামী দিনে ফ্যাসিজ্ মের অনুগামী হবে , এমন আতঙ্কের রেশ থেকে যায়৷ এই ছবিতে বিপর্যয়ের কোনও প্রকাশ নেই , তা কেবলই অবধারিত সম্ভাবনা হিসেবে থেকে যায়৷ যে প্রক্রিয়ার বীজ পাওয়া যায় ছবিটিতে তার অন্ত বা পরিণাম ছবিটিতে নেই , একটি গ্রামের গল্প থেকে মহাদেশব্যাপী সর্বনাশের হদিশ রেখেই ছবিটির নিষ্পত্তিহীন সমান্তি ঘটে , প্রলয়ের প্রস্ত্ততি ঘটে চলে দৈনন্দিনের স্বাভাবিকতাতেই৷

কিংবা , ২০১১ -য় মুক্তিপ্রান্ত লার্স ভন ট্রায়ারের ‘মেলাঙ্কলিয়া ’, যা আসলে হলিউডের ডুম্ স ডে বা অ্যাপোক্যালিপ্স -এর প্রতিতর্ক বলা যায়৷ ছবির বিষয় পৃথিবীর আসন্ন অবলুন্তি , ছবির নামচরিত্র আসলে একটি উপগ্রহ যা ধীরে ধীরে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে৷ বিষয়ের সঙ্গে তারকভস্কির ‘স্যাক্রিফাইস ’-এর মিল আছে , এবং তারকভস্কি যে এই পরিচালকের গুরুস্বরূপ তা এতদিনে স্বীকৃত৷ কিন্ত্ত আণবিক বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপটে রুশ মহাশিল্পীর ছবিটি যেমন পরিচালকের অল্টার -ইগো এক আবশ্যিক ভাবেই পুরুষ -চরিত্রের আধ্যাত্মিক আত্মাহুতির উপর নিবন্ধ (পরিচালকের শিল্পী -পৌরুষ ও অহং -এর মহীয়ান ভাব ছবিটির আস্বাদনে পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে বলে আমার মনে হয় ), ‘মেলাঙ্কলিয়া ’-য় নৈতিক স্তম্ভ হিসেবে থাকে একটি নারীর সত্তা ও মনন৷ নায়িকা জাস্টিন অবসাদগ্রস্থ , তার ইনস্টিঙ্কট বা জীবনানন্দের ভাষায় ‘বোধ ’--- প্রতিনিয়ত জানায় যে শেষের সে দিন আসন্ন , কিন্ত্ত কেউই যার তোয়াক্কা করছে না৷ একটি প্রাসাদোপম ইউরোপীয় বাড়িতে তার নিজের বিবাহ সে পণ্ড করে অস্বাভাবিক হয়ে যেতে যেতে৷ এই বাড়িটি এবং তাতে অ্যারিস্ট্রোকেসির সমাহার যে আসলে এক ধরনের ইউরোপের ধ্বংসাবশেষ তা বুঝতে সময় লাগে না৷ সভ্যতার জরা জাস্টিনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে , স্নায়ুতে স্নায়ুতে প্রবেশ করে , রাতের বেলায় আকাশের তলায় নতুন চাঁদের উদ্দেশে সে তার যোনি মেলে ধরে , সর্বনাশের আশায় হিস্টিরিয়াগ্রস্থ হয়ে সে তার বড়ো বোন ক্লেয়ারের সেবার শরণাপন্ন হয় (প্রসঙ্গত , জাস্টিন ও ক্লেয়ার নাম দুটি মার্কুই দি সাদের ‘জাস্টিন ’ ও জঁ জেনে -র ‘দ্য মেইড্ স ’ থেকে ধার করা )৷ এর পর যত সেই ক্ষণ ঘনিয়ে আসে , যতই আতঙ্কে ও বিষাদে প্রায়োন্মাদ ও আত্মঘাতী হয়ে ওঠে তার প্রিয়জনেরা --- আকাশে তখন দুটি চাঁদ , একটি ক্রমবর্ধমান --- তত শীতল ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে জাস্টিন , যেন এক অমোঘ শান্তি ও স্থৈর্য সে অর্জন করেছে৷ একদা উন্মাদ জাস্টিনই তখন প্রায় মাতৃস্বরূপ ধাত্রী তার পরিবারের , ধ্বংসকে যাতে তার ভয়ঙ্করতা , তার মহাজাগতিক সৌন্দর্যের চড়ান্তের সঙ্গেই সহজে বরণ করে নেওয়া যায় তার নিশ্চুপ দীক্ষা সে দিতে থাকে৷ মেলাঙ্কলিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে পৃথিবীর৷

এলিয়টের কবিতার নায়ক নিজেকে ল্যাজারাস বলে , যে নাকি মৃত্যু ও নরক থেকে ফিরে এসেছে , যে সাবধান করে দিতে চায় সবাইকে , কিন্ত্ত তার ভাষা কেউই বুঝতে পারে না হাসি -আমোদ -বোরডম -ক্লান্তির ঘেরাটোপে৷ ঘনিয়ে আসা বিপর্যয়ের চেতাবনিও সে রকমই দুর্বোধ্য , বা হয়তো তা ভাঁড়ের প্রলাপের মত হাস্যকর শুনতে লাগে৷ এখন টিভির পর্দা, সংবাদপত্রের শিরোনাম পড়লে নিজেকে বলি যে আমার কোনও অর্থ চিট্ ফান্ডে লগ্নি করা ছিল না , অতএব পাওয়া যাক গোটা দুই রগড় এ বার কোটিপতির কেচ্ছা -বিবরণে৷ ঘুমের মধ্যে দেখা দুঃস্বপ্নের সঙ্গে জাগরণের যোগ নেই , সারদার ক্ষতির অঙ্ক যতটা , তার সমমূল্যে নির্মিত বেশ কিছু ডিস্যাস্টার ছবির আরাম পাওয়া যেতে পারে , ও ধরনের বিপর্যয় পশ্চিমবঙ্গে ঘটবে না৷
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×