somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী(৩)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে ৭২ সাল। ততদিনে কুখ্যাত কংগ্রেস আরও অনেক কুখ্যাতি নিয়ে ক্ষমতায় বসল । নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন হলো। সিপিএম এর শীর্ষ নেতা জ্যোতিবসু পর্যন্ত হেরে গেছেন বরানগরে । কংগ্রসের শাসন শুরু হলো রাজ্যে । খুব সামান্য স্থিতাবস্থা এলেও পুরোপুরি শান্তি এলোনা । অবশ্য এর মধ্যে যেটা সুখবর তা হলো চরম খাদ্যাভাবটা বেশ কিছুটা মিটে গেছে। ভারতে এই সময়টাই সবুজবিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু পঃবঙ্গে চিন বিপ্লবের ছায়ায় তৈরি সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষি বিপ্লবের ডাক দেয়া হয়েছে। অথচ ৭০ সালের প্রথম কটা বছর পাশের পূর্বপাকিস্থানে শুরু হয়ে গেছে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রক্তাক্ত আন্দোলন। আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে ঐ আন্দোলন সম্পর্কে কোনো কার্যকরী উৎসাহ কোনো কম্যুনিস্ট পার্টি--এমন কি চিনের চেয়ারম্যানকে নিজেদের চেয়ারম্যান বানিয়ে বিপ্লবের ডাক দেয়া সদ্যগঠিত সিপিআই(এমএল)ও দেখায়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়টা বিপ্লবীরা এই বঙ্গে বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের উদ্দ্যেশে ইস্কুল পোড়ানো,মুর্তিভাঙ্গা,শ্রেণীশত্রুর নামে পুলিশের কনস্টেবল,হোমগার্ড---এমনকি ব্যাক্তিগত শত্রুতার কারণে যথেচ্ছ নিরীহ মানুষকে হত্যা করার মত মৌলিক কাজগুলো করছিলো। আর ঐ মুক্তিযুদ্ধটাতো জাতীয়তাবাদী একটা ঘটনা মাত্র। আবার বাঙালি জাতীয়তাবাদ!----না না এই বঙ্গে বিপ্লবী বাঙালিরাতো কবেই আন্তর্জাতিক হয়ে পড়েছে---তারা আবার এসব সংকীর্ণতাবাদী,সংশোধনবাদী--পশ্চাদপদ কর্মকান্ডে থাকে কী করে!

তবুও বামপন্থার নিকেশমূলক কর্মসুচিটা তলে তলে বাড়ছিলো। তারই ফলশ্রুতি কাশীপুর বরানগর হত্যাকান্ড। প্রায় ২৪ ঘন্টাব্যাপী চলা এই হত্যাকান্ডে প্রচুর বামপন্থী রাজনীতির মানুষ নিহত হন। তখন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশংকর রায়। সেই হত্যাকান্ডের বিচার তখনও হয়নি। হয়নি পরবর্তীকালের বাম জমানাতেও। আর ঐ হত্যাকান্ডের সংগে সংগেই নকসালপন্থী বিপ্লবীদের সশস্ত্র বিপ্লবের কর্মকান্ড তখনকার মত শেষ হয়ে যায়।

আমার কলেজ জীবনটা ঘিরে ছিলো ঐসব কর্মকান্ডে। সেই বাল্যকাল থেকেই খাওয়াপরার চিন্তাটা তখনও তাড়া করছে। তার উপর যুক্ত হয়েছে বিপ্লব। তার কারণে পড়াশোনা ব্যাপারটা প্রায় শেষ হতে চলেছে। কারণ কলেজগুলোকে তখন বলা হতো বিপ্লবী নিয়োগ কেন্দ্র আর জেলখানাগুলোকে বলা হতো বিপ্লবের শিক্ষা কেন্দ্র । অথচ পুলিশের আঁচ বাঁচিয়ে চলতে হবে। জেলে গেলে ভবিষ্যৎ শেষ। মধ্যবিত্ত কল্পনাপ্রবণ ছাত্ররা এই দ্বিবিধ টানাপোড়েনের মধ্যে কাটাতো। আমিও তার থেকে মুক্ত ছিলাম না । বিপ্লব নিয়ে তখন অনেক ভাবনা, অনেক প্রশ্ন । কিন্তু কে তার উত্তর দেবে? যে কোনো প্রশ্নোত্তরের জন্য ত মাও প্রণীত 'রেডবুক' রয়েইছে। ওখান থেকে উত্তর খুঁজে নাও। উত্তর খুঁজে হাতে তুলে নাও অস্ত্র । ঝাঁপিয়ে পড় একশানে। শ্রেণীশত্রুর রক্তে রাঙিয়ে তোলো হাত । অথচ সেই বইটাওত সাঙ্ঘাতিক ভাবে নিষিদ্ধ। ঐ একটা বই কারোর কাছে পেলে শুধু ঐ বইটার জন্যই তাকে 'মিসা'য় কমপক্ষে ৩ বছরের জন্য জেল খাটতে হতে পারে। সব ব্যাপারটাই অদ্ভুত ভাবে কথক নির্ভর বা বানীনির্ভর। লিখিত যা কিছু তার কিছু প্রকাশ্য দেয়াল লিখন । আর রয়েছে নকসালপন্থীদের মুখপত্র 'দেশব্রতী'। 'দেশব্রতী'ও একই রকম নিষিদ্ধ। শুধু শোনা যেত যে অমুকে ওটা পড়েছে। ব্যস্‌ ঐটুকুই।

উদ্ভ্রান্ত তরুণ প্রজন্মের জন্য কোনো দিশা ছিলোনা। তারমধ্যে কাশীপুর-বরানগরের হত্যাকান্ডের পর সব রংএর কম্যুনিস্টরাই দিশেহারা। শুধু সিপিআই ছাড়া । তারা তাদের পুরোনো লাইন মেনে জাতীয়কংগ্রেসের সংগে জোটবদ্ধ । পঃবঙ্গের ময়দানে তখন যুবকংগ্রেসী গুন্ডাদের তৎপরতা। অবশ্য একটা সময় যখন তারা প্রকৃতই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো তখন কংগ্রেসী সরকারের দ্বারাই একটা ব্যাপক ধরপাকড়ের ব্যবস্থা হলো। এভাবেই সময় ৭২ থেকেও এগিয়ে চললো । ছত্রখান নকসালদের যারা কোনো মতে মৃত্যু ও পুলিশের হাত থেকে বেঁচে গেল তারা দেখলো চিনের নগ্ন পাকিস্তান প্রীতি । পররাস্ট্র নীতির ক্ষেত্রে চিন বরাবরই সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারত বিরোধী । শুরুতে উস্কানী দিলেও নকসালদমনের সময় তারা টু শব্দটি করেনি। তখন জানার উপায় ছিলোনা, তবে আরো কিছু পরে জানা গেল যে 'সাংস্কৃতিক বিপ্লবের' নামে সেখানে আরো ভয়ংকর এক বিপ্লব ঘটানো হয়েছিলো। ক্ষমতার একছত্রকরণের লিপ্সার দ্বারা পরিচালিত এই বিপ্লবের সময়ই চিনে তথাকথিত মাওবাদের বিরুদ্ধতার চারাগাছ রোপিত হয়েছিলো। আমাদের বঙ্গের বামপন্থীদের এসব বুঝতে আরো অনেক সময় চলে যায়।

সত্তর দশকের ৭৫ সনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিতে একটি মারাত্মক ভুল চাল দিয়ে জারী করে বসলেন 'জরুরী অবস্থা । আর সেই কারণে পরবর্তী ৭৭ সালের নির্বাচনে তিনি শোচনীয় ভাবে পরাস্ত হন।

৭২ এর পর থেকে এই বঙ্গে এই পাঁচ বছরে যে রাজনৈতিক দলটি ভেতরে ভেতরে নিজেদের সংগঠিত করে তুলেছিলো তার নাম সিপিআই(এম)। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত ২০১০ সালেও তারা ক্ষমতায়। পঃঙ্গে তারাই সংসদীয় বামপন্থার মূল চালিকা শক্তি। একটি আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশের কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় এই দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার কুফলে তারা আজ নিজেরাই আক্রান্ত। ক্ষমতার অভ্যাসে দ্বিধাগ্রস্থ তারা সব সিদ্ধান্তই বিলম্বে নিয়ে থাকে । এরজন্য ভুল স্বীকার করার হাস্যকর সৌজন্য দেখাতেও পিছপা হয়না। ক্ষমতায় থাকার জন্য ইদানীং তারা যেটা করছে একদিকে ধর্মীয়মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোষ অন্যদিকে সফ্‌ট প্রশাসনের নামে যা খুশী তাই করার অধিকার দিয়ে আইনশৃঙ্খলাকে পঙ্গু করে রাখা।

একটা সময় ভাবা গিয়েছিলো বামপন্থীদের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, এবং কেরালা ছাড়া ছড়িয়ে পড়বে অন্যান্য রাজ্যগুলোতে। এই তিনটি মাত্র রাজ্যে বামপন্থীদের টিঁকে থাকা এবং বিশাল ভারতবর্ষের অন্যকোথাও তার কোনো চিহ্ন না থাকা একটা ভাবনার বিষয় । (চলবে)click this link click this link/2
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×