somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার অগ্নি সারথির ব্লগ- "মারমা জাতিস্বত্ত্বা এবং জুম্ম জাতীয়তাবাদঃ..." কিছু দ্বিমত

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সর্বপ্রথম প্রিয় ব্লগারকে তার পরিশ্রমী গবেষণা ও ব্লগের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি। লেখক দীর্ঘ একটি ব্লগ প্রকাশ করেছেন। অনেক বড় লেখা। এই সময় এত বড় লেখা মানুষকে খাওয়ানো একটা যোগ্যতা। সেক্ষেত্রে ব্লগার সফল। আমিও পাঠক হিসেবে একটা দারুন সময় কাটালাম।

যাই হোক। লেখাটির কিছু বিষয়ে দ্বিমত জানাতেই এই ব্লগ। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে মন্তব্য বক্সে মতামত জানিয়ে আসলেই মন ভরে না।

প্রথম দ্বিমত আদিবাসী শব্দে

যদিও লেখক তার প্রতিমন্তব্যে একাধিকবার এই শব্দের ব্যবহার নিয়ে তার যুক্তি তুলে ধরেছেন। লেখকের যুক্তি দুটি- ১, প্রবলেমেটিক সাইন ('আদিবাসী';) এ প্রকাশ এবং ২- আত্মপরিচয়ের অধিকার। প্রথমত, লেখক শব্দটিকে প্রবলেমেটিক সাইনে প্রকাশ করে এখানে বিতর্ক থাকার দিকটি স্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত, ঐ শব্দ ব্যবহারের কারন হিসেবে বলেছেন, ঐ জাতিস্বত্বাগুলো যদি এই নাম ধারন করতে চায়, তাহলে তাদেরকে এই নামে ডাকা যেতেই পারে। এছাড়াও এক্ষেত্রে লেখক একটি মন্তব্যে মতামত দিয়েছেন যে, সরকারী ভাবে উপজাতি লেখা হলেও, কোন জাতির পরিচয় নির্ধারনের অধিকারী কারা, তা নিয়ে তার সংশয় আছে। এই ছিলো তার ব্যাখ্যা।

এবার আসি, আদিবাসী বা ইন্ডিজেনাস শব্দ নিয়ে কিছু বিষয় প্রসঙ্গে।

এটা অবশ্যই সভ্যতার মানদন্ডে পড়ে যে, যে কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের পরিচয় নির্ধারনের অধিকার রাখে। কী নামে তারা পরিচিত হবেন সেটা তাদের একান্ত ব্যাপার। কিন্তু একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে, কোন ''আইনত টার্ম'' ইউজের ক্ষেত্রে অবশ্যই তা শুধুমাত্র ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে না। কোন ব্যাক্তি নিজের নাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা পোপ অথবা কোন জাতি নিজেদের নাম এলিট আর্মি রাখতে গেলে অবশ্যই এখানে কিছু বিবেচনাও যৌক্তিক হয়ে উঠবে।

আদিবাসী শব্দে সমস্যা কোথায়?

প্রথমত, প্রবলেমেটিক সাইন আমাদের দেশের কত শতাংশ মানুষ বুঝেন সেটাও বিবেচনায় রাখা জরুরি।

দ্বিতীয়ত, জাতীসংঘে 'আদিবাসী' বা ইন্ডিজেনাস শব্দ নিয়ে আলাদা কনসার্ন আছে। আদিবাসীদের অধিকারের উপর জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র : ধারা ৩ -- 'আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার' অংশে বলা হয়েছে-

"United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples: Article 3 -- Right to Self-determination

Article 3 -- Right to Self-determinationIndigenous peoples have the right of self determination. By virtue of that right they freely determine their political status and freely pursue their economic, social and cultural development."

ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আছে। এই অধিকারের বলে তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে (অর্থাৎ তারা কি কোন দেশের মধ্যে থাকবে, না সেই দেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করবে -- সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, যেমন উপজাতিরা কি বাংলাদেশের মধ্যে থাকবে, না বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে কিংবা পরবর্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের সমতলীয় উপজাতি এলাকা যুক্ত করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠন করবে -- তা একান্তই উপজাতিদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে) এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনুসরণ করবে।


-এই ধারার আলোকেই বিনা রক্তপাতে পশ্চিমা দেশগুলোর ও জাতীসংঘের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সম্প্রতী সময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে পূর্বতীমুর। যা অখন্ড ইন্দোনেশিয়ার অঞ্চল ছিলো। 'আদিবাসী' শব্দ চর্চার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করেই এক শ্রেনীর মানুষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দক্ষীণ এশীয় এজেন্ট হিসেবে এদেশে সক্রিয় বলে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।


তাই শুধুমাত্র একটি জাতি নিজেদের একটা নামে পরিচিত করাতে চাওয়ার কারনে ঐ নামে ডাকার ভদ্রতা 'আদিবাসী' শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারেনা। অন্যদিকে এই দেশে এ জাতীয় শব্দের যেকোন প্রকারের প্রচলনও বিপদজনক।

আদিবাসী বনাম উদবাস্তু-

ব্লগার অগ্নি সারথির লেখার শুরুতেই মারমাদের ইতিহাস এসেছে। বার্মার অসহিস্নু অবস্থার কারনে, সর্বোচ্চ ৪০ লাখ পর্যন্ত মারমা উদবাস্তু কক্সবাজারে এসে উঠতে বাধ্য হবার করুন ইতিহাস বর্নিত হয়েছে। একই ইতিহাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগ উপজাতীয়দের জন্য প্রজোয্য। এখানকার বেশির ভাগ গোষ্ঠীই বার্মা অঞ্চল থেকে এসেছেন বলেই বর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এটা মোটেও আশ্চর্যজনক কিছু নয়। কিংবা ব্যাখ্যাহীন কোন বিষয় নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বার্মার জাতিগত জনগোষ্ঠী থাকার কারনে সংস্কৃতি বার্মিজ অধ্যুষিত হয়েছে। এক সময়ের উদবাস্তুদের নামের সাথে আদিবাসীর মতন ভূমিপুত্র পরিচয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবাহী পরিচিতি জুড়ে দেয়ার প্রবল আপত্তি তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। আজকের বার্মিজ রোহিঙ্গারাও কক্সবাজারের কিছু বনভূমি সাফ করে বসবাস শুরু করেছে। এরা সবাই উদবাস্তু। এখন থেকে দুইশ বছর পর রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে ঐ বনভূমিময় অঞ্চলে আগে এসে বসতি গড়ার অজুহাতে 'আদিবাসী' পরিচয় দাবী করলে যে হাস্য রসিকতার সৃষ্টি হবে, আজ পার্বত্য উপজাতিদের দাবিতেও ঠিক সে রকম পরিবেশের সৃষ্টি হবার কথা। দুঃখজনক হল, লেখক বর্নিত 'আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা-অবিচ্ছিন্নতার রাজনীতিতেই' আমাদের মিডিয়া প্রধান ভূমিকা রাখছেন বলে, হাসির বদলে বাঙ্গালীদের কান্নার কারন তৈরি হয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের তদানিন্তন বৃটিশ গভর্ণর তথা প্রথম Deputy Commissioner Mr.T.H Leween ( মিঃ টি, এইচ,লুইন), তার লিখিত গ্রন্থ " The Hilltracts of Chittagong and the dwellers There in" এর ২৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় উল্লখ করেন যে, " A greater portion of the hilltrives at present living in the Chittagong hills undoubtedly came about two generation ago from Aracan. This is asserted both by their own traditions and by records in the Chittagong colllectorate".অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাসিন্দা উপজাতীয়দের অধিকাংশ নিঃসন্দেহে প্রায় দুই পুরুষ পূর্বে আরাকান থেকে এসেছে। তাদের ঐতিহ্য আর চট্টগ্রামের রাজস্ব দপ্তরে রক্ষিত দলিলপত্র দুই সূত্রে প্রমাণিত যে, তারা আরাকানী।


দ্বিতীয় দ্বিমত- পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী বসতি বনাম ১৯০০ কনভেনশন।

ব্লগার লিখেছেন-
"পার্বত্যবাসীর সহজ-সরল জীবন যাত্রায় অন্য কেউ যেন ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ব্রিটিশ সরকার তৈরি করেছিলেন CHT REGULATION ,1900 Act। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত হয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হয়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পূর্ব পাকিস্তানের উপর নিরভরশীল’ এই যুক্তি দ্বার করিয়ে রেডক্লিফ কমিশন, চাকমা রাজা দ্বারা শাসিত স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চলকে যুক্ত করে পাকিস্তানের সাথে। আর সেই থেকে শুরু পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালীদের অবাধ অনুপ্রবেশ । ১৯৪৭ এর আগে যে পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালী বাস করত না বিষয়টা তেমন নয়, তবে সংখ্যায় তারা খুব ই অল্প ছিল। আর তারা সেখানে বসবাস করত চাকুরী অথবা ব্যবসার খাতিরে।"

এক্ষেত্রে টি এইচ লুইনের উদ্ধৃতিই তুলে ধরছি-

এইসব এথনিক জাতিগোষ্ঠী আরাকান হতে বিতাড়িত হবার পর পার্বত্য চট্টগ্রামেরর পাহাড়ের পাদদেশসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহন করলে বার্মার আরাকান রাজা বৃটিশ গভর্নর টি, এইচ, লুইন কে একটি চিঠি দিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করেন।

T.H Leween এর লিখিত গ্রন্থ " The Hilltracts of Chittagong and the dwellers There in" এর ২৯ পৃষ্ঠায় এই চিঠির উদ্ধৃতি রয়েছে, " Duncan, Chakma, and kieocopa, Lies, moring and other inhabitants of Aracan have now absconded abd taken refuge near the mountains within your border. " অর্থাৎ, দুমকান, চাকমা, কুকি, লুসাই, মুরং এবং অন্যান্য অনেক আরাকানী স্বদেশ ত্যাগ করে আপনার সিমান্তের পাহাড়গুলির আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে।

তাছাড়া, বৃটিশ সরককার কর্তৃক ১৯০০ সালে প্রণীত আইনেও চাকমা ও মগদের উপজাতি, (আদিবাসী পাহাড়ি নয়,) বরং 'অভিবাসী পাহাড়ি' বলে অভিহিত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১/১৯০০ এর ৫২ ধারায় উল্লেখ আছে যে, " Immigration in to the Hilltract...Save as hereinafter provided no person other than a Chakma, Moghor a member of any hilltrives indigenous to the Chittagong Hilltracts, The Lushain hills, the Aracan Hilltracts or the state of Tripura shall enter or reside within the Chittagong Hilltracts. Unless he is inpossession of a permit granted by Deputy Commissioner at his discretion. অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসন... নিম্মোক্ত ব্যবস্হাবলী থাকা ব্যতিরেকে চাকমা, মগ অথবা এমন কোন উপজাতিয় সদস্য যে পার্বত্য চট্টগ্রামের লুসাই পাহাড়, আরাকান অঞ্চল অথবা 'ত্রিপুরা রাজ্যের আদিবাসী' বলে পরিচিত এমন লোক ব্যতিত অপর কোন পাহাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ অথবা বসবাস করতে পারবেনা, যদি না জেলা প্রশাসকের প্রদত্ত কোন অনুমতি পত্র থাকে।

এর দ্ধারা ষ্পষ্টত যে, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়িরা এদেশের আদিবাসী নয়, বরং তারা অভিবাসী, উদ্বাস্তু, ভিনদেশের বাসিন্দা মাত্র। আর ভূমিপুত্রদের থেকে উদবাস্তুদের রক্ষার জন্যই ঐ আইন। ফলে ঐতিহাসিক ভাবেই পার্বত্য অঞ্চলের ভূমিপুত্র ও উদবাস্তু নিয়ে বিতর্কের সমাধান হয়ে আছে।

কলোনিয়াল দখলদার ইংরেজরা এদেরকে বহিরাগত উদবাস্তু হিসেবেই ভূমিপুত্রদের অনুমোদনের বাইরে গিয়ে আধিপত্যের জোর খাটিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় দেয়। ১৯০০ কনভেনশন ভূমিপুত্র মানুষদের থেকে উদবাস্তু বার্মিজদের রক্ষা কবচ। একই সাথে তাদেরকে অবৈধ ভাবে আশ্রয় দেয়ার কলোনিয়াল আইন। কক্সবাজারের বসতিহীন বন্যভূমি গুলো রোহিঙ্গারা দখল করছে। ঠিক তেমন করে এই বার্মিজ জাতিগোষ্ঠীও উদবাস্তু অবস্থায় এসে আমাদের পাহাড় দখল করেছিলো। আজ ইউএন যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় ক্ষুব্ধ বাঙ্গালীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তাদের রক্ষা করছে, ঠিক একই ভাবে ইংরেজরা পার্বত্য চট্টগ্রামেও তা করেছিলো। আজ থেকে মাত্র ৮ বছর আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা নিজেদেরকে উপজাতি পরিচয় দিতো। সেভাবেই তারা শান্তি চুক্তিও করেছিলো। তখন আদিবাসী বলে কোন শব্দের অস্তিত্বই এদেশে ছিলোনা। সর্বপ্রথম এই শব্দের প্রচলন ঘটানোর সময় রাজা দেবাষীশ নিজেও এর প্রতিবাদ করেছিলেন। এখন জাতীসংঘের ধারা জানার পর সম্পূর্ণ অবৈধ এক উচ্চাকাংখা থেকে আজ তারা এই পরিচয় পেতে উঠে পড়ে লেগেছেন!

তৃতীয় দ্বিমত-


দ্বিমত না বলে, বলা যায় অসন্তুষ্টি। লেখক তার ব্লগে একপর্যায়ে শান্তি বাহিনীর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। একই ভাবে তাদের অব্যাহত সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি এখন পর্যন্ত কীরুপ বিভীষিকা তৈরি করে রেখেছে তারও খানিক স্বরুপ তুলে ধরেছেন। কিন্তু যেভাবে স্পেসিফিক উপজাতীয় গণহত্যার কথা তুলে ধরেছেন, তদ্রুপ উপজাতিদের নৃশংসতা ও নিরস্ত্রের ওপর চালানো দৃষ্টান্তহীন জংলি গণহত্যার কথাগুলো তুলে ধরলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরো পরিস্থিতির নিরোপেক্ষ বর্ণনার দাবী পূরণেই সহায়ক হত। যদিও একটি মন্তব্যে তিনি এ নিয়ে তার অজানার কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন।


চতূর্থ দ্বিমত-

স্থানীয় বাঙ্গালীদের সেটেলার বলা প্রসংগে লেখক পুরোপুরি উপজাতিদের অবস্থান থেকে সেটেলার বলার কারন ও এই শব্দের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অথচ বার্মা থেকে আগত ঐতিহাসিক বার্মিজ উপজাতিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা 'বার্মিজ সেটেলার' হিসেবে উদ্ধৃত করে থাকেন এবং এই পরিচয়ের যথার্থ ইতিহাসও তিনি তুলে ধরতে পারতেন।

মূলত, বৃটিশ কলোনিয়ালদের দ্বারা আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রাপ্ত বার্মিজ উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গোটা বাংলাদেশকেই কলোনিয়াল বলে থাকে। অবাক করা ব্যাপার হল, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই ব্যাপারে আমাদের দেশীয় মিডিয়াতে স্বতঃপ্রণোদিত কোন তৎপরতাও নেই। এক সময়ের উদবাস্তু ও আশ্রয়প্রাপ্তরাই যখন ঐ অঞ্চলের ভূমিপুত্রদেরই উল্টো কলোনিয়াল দাবি করে, তাদেরকে সেটেলার বলে ডাকে, তখন এর জবাব আসা প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তার বদলে আদিবাসী শব্দের সাথে সাথে ঐ অঞ্চলে সেটেলার শব্দেরও প্রসার ঘটানো হচ্ছে। আর তাকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার কাজও হচ্ছে!

পঞ্চম দ্বিমত- রাজা

ইংরেজরা যখন দলে দলে বার্মা ছড়ে আসা উদবাস্তুদের আশ্রয় দিয়েছিলো তখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো ব্যবসায়িক। তারা চেয়েছিলো এদের মত পাহাড়বাহীদের দিয়ে পাহাড় আবাদ করতে। ফলে সমতল দখলের পাশাপাশি পাহড় থেকেও তারা খাজনা আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই ভূমিপুত্র বাঙ্গালীদের তরফ থেকে আগত বিদেশী বিরোধী প্রতিরোধকে নস্যাৎ করতেই ১৯০০ কনভেনশন সৃজন। পাহাড়ের খাজনা আদায়ের জন্য তাদের ভেতরেই সার্কেল চিফ বানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। যারা ছিলো ট্যাক্স কালেকটর (জমিদার নয়)। বহিরাগত হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে উদবাস্তু উপজাতিদের মাঝে কাউকেই জমিদারী প্রদান করেনি দখলদার ইংরেজরা। একজন ট্যাক্স কালেকটর কি করে কিং বা রাজা হতে পারে? তাছাড়া খোদ চাকমা নামেই কোন জাতির অস্তিত্ব নেই। এই দলটি হল বার্মার থেট/থেক সম্প্রদায়ের উগ্র অংশ। মগ দস্যুদের মত জাতি হতে একটি আলাদা থাকা দস্যু শ্রেণীর গোষ্ঠী। দেখুন বার্মার এথনিক গ্রুপগুলোতে 'চাকমা' বলে কিছু নেই-
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_ethnic_groups_in_Myanmar

পরিশেষে লেখকের উদারতার জন্য ধন্যবাদ না দিলে সেটা ঠিক হবেনা। একটি মন্তব্যে লেখক স্বীকার করেছেন যে, উপজাতিদের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি যতটা উদ্গ্রীব ছিলেন বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে ততটা ছিলেন না। আমার মনে হয়েছে, এই আত্মস্বীকৃতি টি পাঠকের মাঝে পার্বত্য বিষয়ে জানার উৎসাহকে ধরে রাখবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের গতি-প্রকৃতি ও ইতিহাস নিয়ে আরো নতুন নতুন তথ্য খুজে বের করতে চাইবেন তারা।



পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে চরম বার্মিজ জাতীয়তাবাদে আবদ্ধ কিছু জাতীগোষ্ঠী। এরা পুরো অঞ্চলকেই বার্মিজ অধ্যুষিত রাখতে তীব্র সচেষ্ট, এর পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে ইংরেজ দ্বারা সুবধাপ্রাপ্ত স্থানীয় কালেকটার ও ক্ষমতাশীল শ্রেণীটি। আধুনিক কালে স্বাধীনচেতা বাঙ্গালীরা এদের সামন্তবাদী প্রথায় আনুগত্যের ক্ষেতে অনীহা দেখাবেন, বলেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বার্মা ও ইন্ডিয়ান ৭ রাজ্য থেকে বার্মিজ সংস্কৃতির লোকজন সহজেই বসতিহীন অঞ্চলগুলোতে এসে বাড়ি বানাতে পারলেও, বাঙ্গালীরা প্রতীরোধের শিকার হন। অথচ একটি স্বার্বভৌম দেশে প্রতিটি নাগরিক সমান ও ন্যায্য অধিকার লাভ করেন। এইসব উদবাস্তু উপজাতিদেরকেও এই অঞ্চলের ইতিহাসে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ সৃষ্টি পর নাগরিকত্ব দিয়ে বরন করা হয়েছে। কিন্তু ঐ অঞ্চলের কতিপয় ক্ষমতাবিলাসী ব্যাক্তির কারনে ঐ দিক থেকে নৈতিক সাড়া আসেনি।

৩০ লাখ বাঙ্গালীর রক্তে রঞ্জিত সমগ্র বাংলাদেশ হোক নিরাপদ বাংলাদেশী স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক। কেটে যাক সকল বহিঃশক্তির আগ্রাসন। শান্তির দেশে মানবিক সাহায্য অব্যাহত থাকুক। সততা ও মানবিকতা গুলো দূর্বলতা বলে চিহ্নিত না হোক। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন পূর্ববর্তী প্রজন্মের দয়াকে ভুল হিসেবে নিন্দা করতে না পারে! তা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্বও এই প্রজন্মের! সংগ্রাম ও সততার নিদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ বেঁচে থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×