somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দুপুরে, ধানমন্ডি লেকের পাশের রাস্তায়...

২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঁদিকে ইউ টার্ণ নিয়ে মোড় ঘুরলে ধানমন্ডির ৮ নম্বর ব্রীজ। ঘড়িতে পৌনে তিনটা বাজে... ব্রীজে ওঠার আগে জ্যাম, সারি সারি রিক্সা দাড়িয়ে আছে, আমিও বসে আছি রিক্সায়।

আমার বাঁদিকে ধানমন্ডি লেক, ফুটপাতের পাশে রেলিং দিয়ে ঘেরা... সেখানে এক নাটকীয় দৃশ্য দেখলাম রিক্সায় বসে বসে। নীল রঙের ড্রেস পরা এক তরুনীকে দেখলাম একজন তরুনের টি শার্টের কলার ধরে ঝাঁকাচ্ছে। তরুনটির হাব ভাব খুবই শান্ত, সে মোটেই উত্তেজিত নয়, এমন কি তরুনীটিকে নিবৃত্ত করার জন্যও সে কোন চেষ্টা করছে না, শান্ত ভাবে মেয়েটির কথার জবাব দিয়ে যাচ্ছে। যে কোন কারনেই হোক, মেয়েটি ছিল প্রচন্ড হাইপার, আবেগে প্রায় তার ফেটে পড়ার দশা, কিন্ত এই আবেগ কি ক্রোধ, নাকি হতাশা, নাকি অবিশ্বাস্য কোন প্রাপ্তিতে আত্মহারা সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।

আমার রিক্সা যখন তাদের খুব কাছাকাছি, তখন মেয়েটির গলার স্বর আমি শুনতে পাচ্ছিলাম... মেয়েটা তখন ছেলেটার কলার ঝাঁকিয়ে বলছে— ভালবাসা! কিসের ভালবাসা...? মেয়েটার গলায় ছিল আর্তি, ছিল প্রচন্ড আবেগ কিন্ত সে সব ছাপিয়ে উঠে মেয়েটার একটাই উদ্দেশ্য প্রকাশ পাচ্ছিল, মেয়েটা ভরদুপুরে জনারন্যে একটা নাটক জমাতে চায়।

[এ ধরনের মেয়েরা সঙ্গিনী হিসাবে বেশ বিপজ্জনক, আমার জীবনে এ রকম ঘটনা ঘটলে, আমি সে মেয়ের ত্রিসীমানায় আর পা বাড়াতাম না, বলাই বাহুল্য।]

আশেপাশের রিক্সাচালক এবং তার যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছিল। এই ঘটনায় জনমত কোনদিকে এবং কে কি ভাবছে তা জানার খুব ইচ্ছা করছিল। প্রথম প্রতিক্রিয়া আমার রিক্সাচালকের...

অস্ফুটে সে কিছু একটা বলছিল আর কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে বার বার পেছন ফিরে দেখছিল। আমি একটা হালকা ঝাড়ি লাগালাম... ঐ মিয়া, কি হইছে তোমার, সামনে দেখ...
আমার রিক্সাওয়ালাটি মাঝ বয়সী, ঝাড়ি খেয়ে মুখ ফিরিয়ে বলে... খুব ভালা হইছে সার, ব্যাটার আরো কিছু ছ্যাঁচা খাওনের কাম... আকাম নিচ্চয় কিচু একটা করছে...

আমার পাশের যে রিক্সাওয়ালা তাকেও দেখলাম বেশ উত্তেজিত... কি বুঝলা মিয়া, কামটা কেমন হইছে...
—খুব ভালা হইছে, আরও দু চার ঘা দেওয়া উচিত বেটারে... আমার প্রশ্নের উত্তরে রিক্সাচালকটি মন্তব্য করলো।

সামনের রিক্সায় মুরুব্বি গোছের এক চাচা মিয়া, তার সফেদ দাঁড়ি নাড়িয়ে বললো... মাইয়ার মতো মাইয়া হইলে কোন পুলাতো তার কাছে ঘেঁষতে পারার কথা নয়, পোলার কি দোষ...?
আমি কইলাম- কন কি চাচা, মাইয়া দোষ কি করছে, পুলাগো লগে মিলমিশ করা কি দোষের‌...?
চাচা কয়- অবশ্যই দুষের, মাইয়া যদি শক্ত থাকে, পুলারা তার কাছ ঘেঁষতে পারে?
--চাচা শুনেন, পোলারাতো মাইয়াদের কাঁছ ঘেষেই আছে, একলগে লেখাপড়া করতেছে, কাজ কর্ম করতেছে, তাই বলে পুলারা যা খুশি তাই করবো...? এই রকম দু চারটা পুলারে মাইর দেওয়াই উচিত, যাতে তারা বুঝতে পারে আর কোন মেয়েদের সাথে ধুনফুন না করতে পারে...

এই বিতর্ক খুব বেশি আগালো না, রিক্সা নড়াচড়া শুরু করাতে। এমন সময় সামনে দেখি একটা মিনিবাস, তাতে বেশ কয়েকজন কনস্টেবল। পল্লবী মীরপুর রুটের রিকুইজিশন করা বাসটা থানায় ফিরছে বলে মনে হলো। উৎসাহী এক কনস্টেবলকে দেখলাম মিনিবাস থেকে নেমে রিক্সার ফাঁকফোকর দিয়ে পেছনের দিকে এগিয়ে যেতে... আশেপাশের দু একজন রিক্সাওয়ালা বলে উঠল— দ্যান স্যার, হেগোরে একটা মিটমাট করে দেন।

আমার রিক্সাটা তখন পুলিশের মিনিবাসের কাছাকাছি, জানালায় বসা একটা কনস্টেবল উৎসুক হয়ে পেছনে তাকিয়েছিল... এমন সময় পেছন থেকে এক ভদ্রমহিলার চড়া গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম... ওই মিয়া এখানে পুলিশের কামটা কি? যার বুঝ হ্যারেই বুঝতে দ্যাও...

ভদ্রমহিলার চেহারা দেখতে পেলাম না, কিন্ত উনার কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছিলাম। পাশের মিনিবাসের জানালায় কনস্টেবলটার দিকে চোখাচোখি হতেই আমরা দুজনেই হাসলাম, আমি একটু কৃত্রিম ঝাড়ি দিয়া বললাম... ওই মিয়া, সব জায়গায় মাথা ঢুকাও ক্যান? এখানে পুলিশের কুনো কাম নাই, কইলাম...
কনস্টেবলটা হাসছিল... কি কন, রাস্তাঘাটে মারপিট করলে, পুলিশে সেটা দেখবো না? হোক না সেটা মোহাব্বতের মারপিট...
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×