এক
’এই ছুরিটা হাতে পেলে সবার আগে কাকে খুন করবি?’
’আসলাম’ । নিমিষেই উত্তর দিয়ে দাঁত কেলিয়ে মিলন দা’র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছিলাম।
এই আসলাম আবার সুইডেন আসলাম নয়। আবাহনীর স্ট্রাইকার আসলাম। শালার জ্বালায় সবসময় উৎকন্ঠিত থাকতে হয়। সারাটা সময় মোহামেডানের ডি বক্সের আশে ঘোরাফেরা করে আর সুযোগ পাইলেই মিস নাই......
আমি মোটেও কথার কথা বলছিনা। আবাহনী মোহামেডানের কোন এক ম্যাচে আবাহণীর এক সমর্থক ইয়া বড় এক ছুড়ি হাতে এমেকাকে আক্রমন করেছিল। ভাগ্যিস পুলিশ ছিল বলে রক্ষে, নইলে ১০ মিনিটের জন্য হলেও বিশ্বকাপে খেলতে হতোনা এমেকার।
তারপর কত রোদ বৃষ্টি ক্ষয় হয়ে কত কিছু ঘটে গেল। মিলনদার ছেলে প্রীতমও দেশি বেশ সাবাল হয়ে উঠছে।
’প্রীতম, এই মুহুর্তে কাউকে খুন করতে বললে সবার আগে কাকে রাখবি’
'.................................'
ধ্বরনী দ্বিধা হও। যার নাম বলল তার কথা এখানে লিখতে সাহস পেলামনা। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের বড় মাপের নেতা, নামের আগে ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রপেই পরিচিত। মাঝে মাঝে উল্টা পাল্টা কথা বলে প্যাঁচ লাগাতে ওস্তাদ..................
আমাদের কৈশোরে আক্ষরিক অর্থেই আবাল ছিলাম। তাইতো আবাহনী, মোহামেডান, কাকাবাবু, ফেলুদা, কিশোর থ্রিলার- এই জাতীয় আবালীয় কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতাম। দেশ, জাতি গণতন্ত্র নিয়ে মোটেও ভাবার সময় ছিলন। আজকালকার সাবালীয় পোলাপান কিন্তু সেরকম নয়। রাজণীতি গণতন্ত্র, সংলাপ, তফসিল টিকফা, রামপাল নিয়ে ওদের ভাবনা দেখলে সত্যিই মতি ভাইয়ের মতো বলতে ইচ্ছে করে ..........পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।
দুই
ছিইছির জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আমার কোন উত্তেজনা না থাকলেও মুহিবুল মামার উত্তেজিত ফোনে বেশ উত্তেজিত হতে হল।
’ কাল বিকালে পুলাপান নিয়ে পার্টি অফিসে আয়, তারপর বাকী সব কমুনে’
’ মামা, আমার পুলাতো এখনও হাটা শিখে নাই’- নির্লিপ্ত উত্তর দেই।
’ আরে ফাইজলামী বন কর, নমিনেশন পাইতে যাইতেছি, শো-ডাউন করতে হবে। বন্ধুবান্ধব যা পারস নিয়ে আয়’
বাড়তি ঝোলের আশায় কি করে জানি ছাত্রবস্থায় জাতীয় পার্টির সাথে ভীড়ে গেছেন মুহিবুল মামা। কিন্তু সুদীর্ঘ ২৪/২৫ বছরে শুধু ঝোলই জুটেছে, এবার মনে হয় মাংসের দেখা মিলতে পারে। জিরো আওয়ারে মুহিবুল মামার আবার উত্তেজিত ফোন।
’বুঝলি, নমিনেশন যদি একবার পাই তাহলে নিশ্চিত এমপি’
’ কেমনে কি, মামা’, হিসাব কিছুতেই মিলাতে না পেরে বলি।
’ আরে আমার আসনে আওয়ামী লীগ এমনিতেই দুর্বল। আর তফসিল ঘোষণা হইছে মানে, বিএনপি আর আসবোনা। এখন ধর বিএনপির সব ভোটতো আমিই পামু’
’কস্কি মমিন’, মুখের সাথে ফোনের দুরত্ব বাড়াতে বাড়াতে বলি।
মুহিবুল মামার উৎফুল্ল মুখবদন কল্পনা করতে করতে সময় চ্যানেলে দেখি তার চেয়েও উৎফুল্ল পল্লী বন্ধুর মুখ।
’ ......লীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়, কাজেই এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভাল কিছু করবে’ - সহাস্য বদনে পল্লীবন্ধু সাংবাদিকদের সামনে তার চিরায়ত কবিতা আবৃত্তি করছেন। একটু মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলাম পল্লীবন্ধু শুধু কথার কথা বলছেননা, তার চোখও অজানা আশায় ভরপুর, শরীরেও একই প্রতিচ্ছবি। তার ভবানায় নিশ্চয় সেই বিষয়টিই, বিএনপি না আসলে তাদের বিপুল ভোট লাঙল মার্কায় পড়বে!
৮৮’র নির্বাচনে মুহিবুল মামার নাকি ব্যালটে সিল মারতে মারতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছিল। তবে সব ব্যালট বাক্সে ভরেননি, কিছু ব্যালট ভাগ্না, ভাগ্নের জন্য নিয়েও এসেছিলেন। আমরা সেই ব্যালট পেপার দিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলতাম। সেই স্বর্নযুগে ৮৬, ৮৮’র জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সব নির্বাচন ছিল ভোট ডাকাতির চরম উৎসব। শত শত কেন্দ্রে নিজেরা ইচ্ছেমতো নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সিল মারা, ফলাফল আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা ব্লা...ব্লা......। সেই পল্লীবন্ধুই আজ জনগনের প্রত্যেক্ষ ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির স্বপ্ন দেখছেন। একজন ভোট চোরের এই পরিবর্তন দেখে মতি ভাইয়ের কন্ঠে বলতে ইচ্ছে করে .....................পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।
তিন
আমাদের শিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে, পড়ার চাপে তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে নিজের চেয়েও বেশি ওজনের স্কুলব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাও, বিকালে কোচিং, রাতে বিভিন্ন বিষয়ে গৃহশিক্ষকের চাপে ওষ্ঠাগত প্রাণ। সেই দিন গেল বুঝি।
প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস শিশুদের নিশ্চয় পড়াশোনার অযাচিত চাপ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই। আমাদের সদাশয় মনতিরি আবার বলছেন ’ সীমিত আকারে হয়তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে..’ তিনি এখনও হতে পারে নিয়ে আছেন। যাই হোক দেশের ভবিষ্যত কোমলমতি শিশুদের জন্য এরকম সুবর্নউদ্যোগ দেখে মতি ভাইয়ের কন্ঠে বলতে ইচ্ছে করে ......................পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।