somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ১)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ও দাদা নামবেন তো!"
কন্ডাক্টরের ডাকে সম্বিত ফিরে এল। চট করে চিঠিসহ বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। আজ আমার কলেজ জীবনের শেষ পরীক্ষা।তিন বছর ধরে ভূতত্ববিদ্যায় যা শিখেছি তা আজ সমাপ্ত হবে। আর তার সাথে হবে আমার জীবনের আর এক চূড়ান্ত পরীক্ষা। এই তিন বছর ধরে, যে আস্তে আস্তে আমার জীবনের ধ্যান- জ্ঞানে পরিণত হয়েছে, তাকে আজ আমি আমার মনের কথা এই চিঠিটার মধ্যে দিয়ে জানাতে চলেছি।
অন্তরা আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সবাই ওকে এক অদ্ভুত সম্মানের চোখে দেখত। অথচ ও যে বিরাট কিছু দেখতে ছিল এমন কিন্তু নয়। প্রচুর যে কথা বলত তাও নয়। তবু কিছু একটা ছিল - ওর হাঁটা চলা কথাবলা সবেতেই একটা অসম্ভব ব্যক্তিত্বের ছাপ থাকত।
আজ শেষ দিন বলেই কিনা জানিনা, গত তিন বছরের বিভিন্ন ঘটনা চোখের সামনে দিয়ে ছায়াছবির মত চলে যাচ্ছিল।
মনে পড়ে যাচ্ছিল প্রথম দিনের কথা।
মফঃস্বলের সাদামাটা সরকারি ছেলেদের বিদ্যালয়ে আগাগোড়া পড়া কোনো ছেলের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনোটাই একটা বিরাট ব্যাপার। Uniform ছেড়ে যেমন-খুশি-সাজোর দুনিয়া, হঠাৎ স্বাধীনতার আস্বাদ, সর্বোপরি হঠাৎ চারদিকে এত মেয়ের উপস্থিতি আমায় আড়ষ্ট করে তুলেছিল। জড়ভরতের মত আমাদের বিভাগের নোটিশবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে রুটিন টুকছিলাম।
"Excuse me!" - নারীকন্ঠে ডাক শুনে পিছু ফিরে দেখি একটি বেঁটে খাটো গোলগাল মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
"UG 1-এর ক্লাসরুমটা কোথায় বলতে পারবেন?" বাবাগো!! কোথায় পালাই আমি! একে তো কি উজি না ইউজি কি হিজিবিজি বলছে, তার ওপর সম্বোধনে উত্তম পুরুষ? এত সম্মান জীবনে প্রথমবার। ঢোকগিলে বললাম, "আমি ঠিক বলতে পারব না। আমি এখানে নতুন।"
"First Year?"
প্রশ্নটা আক্রমণের মত শোনালো। কিন্তু এই শব্দবন্ধটা আমার চেনা। তাই দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম। মুখের ভিতরে একটা অদ্ভুত শব্দ করে সে বলল,"ভালই হল এতক্ষণ একা খুঁজছিলাম এখন দুজনে মিলে খুঁজি চলো।" এক ঝটকায় আপনি থেকে তুমিতে অবনমন ঠিক কতটা ভাল সেটা ভাবতে ভাবতে দেখি কখন আমি তাকে অনুশরণ করতে করতে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।
ক্লাস চলছে। মেয়েটি সপ্রতিভ ভাবে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করল,"Excuse me sir, এটা কি UG 1-এর ক্লাস?" শিক্ষকের সম্মতি পেয়ে গটগট করে ক্লাসে ঢুকে গেল। অগত্যা, আমিও পিছু পিছু ঢুকে পড়লাম। ও গিয়ে দেখি first bench-এই দিব্যি জায়গা করে নিল। আমি অতটা পারলাম না। Last bench-এ দুজন বসে ছিল তাদের পাশেই গিয়ে বসলাম। শুরু হল আমার কলেজ জীবন। পরের তিন বছরে বুঝলাম ছোটমামা কেন আমার কলেজে ভর্তি হবার কথা শুনে বলেছিল,"কলেজ! বাব্বা!! তা তোর ক-লেজ?" সত্যি সত্যি কলেজের ছেলেমেয়েদের একটা নয় বেশ কয়েকটা লেজ গজায়।
মজার ব্যাপার মেয়েটির সাথে আমার কোনো প্রথামাফিক পরিচয়ই কখনো হয় নি। এর, ওর, তার ডাক শুনে একে অন্যের নাম জেনেছি ও পরে সেই নাম ধরেই দিব্যি একে অন্যকে ডেকে কথা বলেছি, যেন কতদিনের চেনা। এটাই ছিল স্বাভাবিক। তারুণ্যের জোরে আমরা প্রথা ভেঙেছি নতুন প্রথা গড়ব বলে। (চলবে...)

পরের পর্ব:
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২)
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৩)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৫৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×