somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২)

১১ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব:
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ১)

আমাদের পাঠক্রমের অন্তর্গত ছিল বাৎসরিক field trip। মানে বছরে একবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে পাথরের পাঠ। এতে শারীরিক ধকল ছিল ষোলোআনা। কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল বেড়াতে যাবার মজা। তবে যেকোনো জিনিসই প্রথমবার একটু সমস্যার। অজানার ভয়। আমার যেমন ভয় ছিল, 'এতগুলো মেয়েও আমাদের সঙ্গে যাবে?! আমরা একসাথে রাত কাটাবো???' কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। তবে উত্তর পেতে দেরি হয় নি। আমার এক সহপাঠিনীর বাবা এলেন আমাদের প্রধান অধ্যাপকের সাথে দেখা করতে। রাশভারি চেহারা।
-"দেখুন আমাদের একটু রক্ষণশীল পরিবার। আমার মেয়ে আগে কখনো বাড়ির বাইরে রাত কাটায়নি।এখানে এতগুলো ছেলের সাথে...Field-এ না গেলে কোনো অসুবিধা আছে?"
অধ্যাপকের ঠান্ডা গলায় উত্তর ছিল, "আমাদের এখানে সব ভদ্রঘরের ছেলেরা পড়তে আসে, সঙ্গে দুজন শিক্ষক থাকবেন, তা ছাড়া প্রতি বছরই আমরা যাই। আজ পর্যন্ত্ কোনো সমস্যা হয়নি। এরপরও আপনি যদি আপনার মেয়েকে না পাঠান তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, শুধু যে যে বছর আপনার মেয়ে যাবে না সে সে বছর ও পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে পারবে না। কারণ field trip বাধ্যতামূলক।"
সেই যে ভদ্রলোক গেলেন, তারপর ওনাকে দেখলাম আমাদের যাত্রার দিন ষ্টেশনে; মেয়েকে ছাড়তে এসেছিলেন।
Field-এ আমাদের ছোট ছোট চারজনের দলে ভাগ করে দেওয়া হত। ঐ দল একসাথে মাঠে-ঘাটে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যেবেলা report বানাতে হত। তারপর রাতে বাকিদের সাথে মিলে হত ফুর্তি। নিয়তির লিখন ছিল কিনা জানি না, প্রথমবারই আমি আর অন্তরা এক দলে পড়েছিলাম, যা কিনা পরের দুবছরও বজায় ছিল। এভাবেই আমরা পারস্পরিক নির্ভরতার সিঁড়ি বেয়ে প্রথমে সখ্যতা ও পরে গভীর বন্ধুত্বে উপনীত হয়েছিলাম। আমাদের এই সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে অনুঘটকের কাজ করেছে আমাদের সহপাঠীরা। বিশেষ করে সুমনের কথা মনে পড়ে। স্বভাব রসিক ছেলেটা আমাদের সম্পর্কের প্রাথমিক আড়ষ্টতার বরফ গলাতে সাহায্য করেছিল। মনে আছে first year field-এর গোটা সময়টা ও যতক্ষণ জেগে থাকত, একটা রোদচশমা পরে কাটিয়েছিল যার ডানদিকের কাচটা ছিলনা। অন্তরা একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল," তুই এরকম sunglass কেন পরিস রে? একটা ভাল sunglass পরলেই তো পারিস।" সুমনের ঝটিকা উত্তর ছিল,"তাহলে তো আর এই অসাধারণ কেতটা মারা যাবে না। দিনের বেলা বামদিকের রঙিন কাঁচ দিয়ে দেখি আর রাতে ডানদিকের ফাঁকটা দিয়ে। দুটোই এক চোখে।"
-"এক চোখে দেখতে অসুবিধা হয় না?"
-"কি যে বলিস! মেয়েদের চোখ মেরে মেরে চোখ সেট হয়ে গেছে।"
আমরা তিনজনেই হেসে গড়িয়ে পড়েছিলাম।
field থেকে ফিরেও আমাদের একসাথে পড়াশোনা করার অভ্যাসটা থেকে যায়। আমাদের সাথে অনুজও পড়ত - কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে, কখনো প্রধান পাঠাগারে, কখনো ক্লাসের শেষে ফাঁকা ঘরে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলত হালকা হাসি, টুকরো কথা আর খুচরো খুনসুটি।
(চলবে...)

পরের পর্ব:
চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৩)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৫৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×