somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনা-মনমোহন চুক্তি: 'খোমনী ২০১১' বই থেকে

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসিনা-মনমোহন চুক্তি: যার যা লোকসান

"বাংলাদেশ ও ইনডিয়া রাষ্ট্রের ভিত্তি ও গন্তব্য অভিন্ন ধার্য করে সই হলো হাসিনা-মনমোহন চুক্তি। পোশাকি নাম ‘উন্নয়ন সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি’। দুই রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা এখন থেকে উন্নয়ন আকাংখা একত্রে, একই দিকে চালিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বহু দেশ ও জাতির রাষ্ট্র ইনডিয়ার ভেতরকার বিভিন্ন দেশ ও জাতির রাজনৈতিক ভিত্তি ও উন্নয়ন আকাংখা বৈচিত্র ও বিভিন্নতা এ চুক্তিতে আমলে নেয়নি ইনডিয়ার কংগ্রেসি সরকার। অন্যদিকে নানা জাতি-সংস্কৃতি ও ভাষার এ বিশাল ভারতবর্ষে আধুনিক একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা যে ইনডিয়া রাষ্ট্রের চেয়ে শতভাগ আলাদা হয়ে আছে; এই বিষয়টি শতভাগ উপেক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। জাতিরাষ্ট্র হিসাবে স্বশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পরে উনিশশ বায়াত্তর সালেও এমনধারা গাফলতি ও উপেক্ষার ওপর দাঁড়িয়েই মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের উত্তরপূর্বে দক্ষিণ এশিয়ার সাতবোন অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই অব্যাহত থাকার কারণে ইনডিয়ার কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী নিজেদের শাসনভূক্ত এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল জুড়েই ছয় দশক ধরে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রাখছে। এই অবিরাম জরুরি অবস্থার মধ্যেই ইনডিয়ার কেন্দ্রীয় শাসকশ্রেণী রাষ্ট্রটিকে পরাশক্তি হিসাবে তৈরি করার মনজিল ঠিক করেছে। সে মনজিলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তারা অর্থনৈতিক এবং সামরিক কৌশলগত উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে, দেশটির বেশির ভাগ মানুষ নানা কারণে এই উন্নয়ন ধারণা ও প্রক্রিয়ার সাথে একমত নয়। শহরাঞ্চলের বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে পুঁজিবাদী উন্নয়নের তীব্র বিরোধিতা থাকার কারণেই দেশটিতে উন্নয়ন বিরোধী স্বশস্ত্র মাওবাদীরা শক্ত জনভিত্তি গড়তে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদী উন্নয়ন ধারনার বিরোধিতা না করলেওÑ ইনডিয়া শাসিত সাতবোন অঞ্চলের জনগণ দিল্লির দখলদার শাসনের বিরোধী।
আত্মপরিচয় ও রাজনীতির পরিসরে নিজেদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের মানুষ পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারণাকে প্রত্যাখান করেছে। আবার এই মানুষেরা অদৃষ্টবাদী নিরাশ জনগোষ্ঠীও নয়। নিজেদের বৈষয়িক উন্নতিতে বাংলাদেশের মানুষ সচেষ্ট বরাবর। একইসাথে আঞ্চলিক কিম্বা বৈশ্বিক পরিসরে পরাশক্তি হবার আকাংখাও দেশে অনুপস্থিত।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী দেশের মানুষ ও সম্পদ বরাবরই বিশ্ব পুঁজির পরিগঠনের স্বার্থে ব্যবহার করতে সচেষ্ট রয়েছে। বিদ্যমান উৎপাদন সম্পর্ককে পুঁজিতান্ত্রিক করে তোলার চেষ্টায় রত রয়েছে শাসকগোষ্ঠী। ভৌত অবকাঠামো ও বুদ্ধিবৃত্তিতে বদল আনার প্রচুর প্রচেষ্টা চলেছে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির ছাঁচে পরিগঠিত না হয়ে রাজনৈতিক অর্থনীতিকেই নিজের মতো করে রূপ দিতে বিরতিহীনভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। যদিও রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবসময়ই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে এই চেষ্টা ভ-ুল করার চেষ্টা করেছে। এ অবিরাম ও তীব্র চাপের মুখেও কখনোই নিয়ন্ত্রন মেনে নেয়নি মানুষের বাসনা।
বাংলাদেশের মানুষ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসকদের অধীনতা না মেনে ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত ১০০ বছর ধরে স্বশস্ত্র লড়াই করেছে। বৃটিশ উপনিবেশি শাসনের শেষ ৯০ বছরে বাংলাদেশের মানুষ বৃটিশদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রধান হাতিয়ার জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির দাবিতে লড়াই করে গেছে। যে দাবির প্রশ্নে জওহর লাল নেহেরুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস নেতিবাচক ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের মুসলমান ও নিুবর্ণের হিন্দুরা শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি সমর্থন করেছিল। আর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের প্রজন্ম নিজেদের তারুণ্যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে কলকাতার রাস্তায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের সমর্থনের জোরেই মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান বৃটিশদের কাছ থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা পেয়েছিল। আর বৃটিশদের প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত আপসকামী ছিল, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইনডিয়া স্বাধীনতা লাভ করে এর একদিন পরে।
জমিদারি প্রথা বাতিলের বিষয়ে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পাকিস্তান রাষ্ট্রে শামিল হয়েছিল। কিন্তু পরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে কখনোই সমর্পিত হয়নি মানুষ। জমিদারি প্রথা বাতিলের দাবির মধ্যেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের বাসনার রাজনৈতিক রূপান্তর। ২৪ বছর পাকিস্তানে থাকার সময়েই আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মমর্যাদার ইস্যুতে আন্দোলনকে স্বাধীনতার যুদ্ধে উন্নীত করে তারা নিজেদের একাট্টা অবস্থানকেই রাজনৈতিক গন্তব্যে পরিণত করে নিয়েছিল। গন্তব্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র।
দুইশত বছরের সংগ্রাম ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপুল ত্যাগ ও সাহসের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এ ভারতবর্ষে ইনডিয়া ও পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে আছে রাষ্ট্রদর্শন ও নাগরিকের আকাংখার জায়গা থেকে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪০ বছর পার হতে চলেছে, বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। তলাহীন ঝুড়ি গালি পাওয়া দেশটিকে শ্রম-বিকাশের মাধ্যমে সম্পদ ও সক্ষমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলছে কোটি কোটি বাংলাদেশীর মজুর হাত। বিশ্ব পুঁজির উন্নয়নের ধারনা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে নিজেরা সমর্পিত হয়ে যাবার চেয়ে প্রাণপণে আত্মউন্নতি করার ওপর যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কাজেই বায়াত্তরের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি কিম্বা দুইহাজার এগারো’র হাসিনা-মনমোহন চুক্তিতে ইনডিয়া ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গন্তব্য মেনে নেবে বাংলার মানুষ; এমন সম্ভাবনা খুবই কম।"

খোমনী ২০১১ বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ৯৭ নম্বর স্টলে। দাম ৯৫ টাকা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×