somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মাংস টোকাই আর রকির দূর্ভাগ্য "

২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরবানীর দিন সকাল বেলা ঈদের নামায পরেই রকি গরু কাটাকুটি করতে পাশের বাসার আঙ্কেলের বাসায় গেল। তাকে কাজ দেয়া হয়েছে মাংস পিস পিস করে কাটা। হাড় এর জন্য একজন লোক আছে যিনি নিজেকে কসাই বলেই ১৫০০ টাকার বিনিময়ে এই গরু সাইজ করার কাজ নিয়েছে।
রকি এই লোককে চেনে সে আসলে মাছ বিক্রি করে। হিসেব করলে সে মাছের কসাই হতে পারে। হাড় কাটা যে কঠিন জিনিস তা এই মাছ বিক্রেতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

রকি একটা কাল টি শার্ট আর থ্রী কোয়ার্টার পরেছিল। কাটাকুটি তে অনেক ঝামেলা। তাছারা রক্ত ছিটেফোটা মাংস এসে কাপড়ে লাগে। তাই নস্ট হলেই এই ২ টাই হোক।

রকি সাধারনত মাংস এর ঝামেলায় আসে না। কিন্তু গত বছর এই আংকেলের মেয়ে ইলা এসে সবাইকে নাস্তা দিয়েছিল। সবাই হাতমুখ ধুতে গেল। কসাই রকি আর ইলা ছাড়া আর কেউ নেই।
ইলা রকি কেঈ চা বিস্কুট দিয়ে বললো ভাইয়া খান।
একি এলাকায় থাকার কারনে চেনা আগে থেকেই জানা টা কেবন পুরোপুরি নেই।
রকি বলল চা না হয় খেলাম বিস্কুট খেতে গেলে হাতের যে অবস্থা রক্ত টক্তও খেয়ে ফেলতে হবে।
ইলা বলল ভাইয়া হাত ধুয়ে এসে খান।
রকি বলল না থাক। ক্ষুধা লাগছে যদিও, থাক চা খাই শুধু। এখন হাত ধুতে গেলে মাংস কাটতে দেরি হয়ে যাবে।
ইলা আবার তাকে তার নিজ হাতে ২ টা বিস্কুট রকির মুখে পুরে দিয়েছিল।

আহা, এই বিস্কুট গুলোর স্বাধ যেন অমৃত ।
আজও কি চা বিস্কুট পাওয়া যাবে কিনা ভাবছে।
১১ টার দিকেই চা এল সাথে বিস্কুটও ছিল , শুধু ইলা এল না। তার মা এসে দিয়ে চলে গেল।
রকি এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে চা খেয়ে উঠে গেল।
২ টার দিকে মাংস প্রসেস শেষ । রকি মাংস এনে দিলে তা ৩ ভাগ করে এক ভাগ বিলিয়ে দেয়া হচ্ছিল। আর এক ভাগ আত্মীয় দের বাসায় বাসায় পৌঁছে দেয়ার ভার রকির উপর পরল। রকি আর ড্রেস চেঞ্জ করলো না। সামান্য রক্ত আর মাংস এর ছিটেফোটা লাগা ড্রেস পরেই বের হল।

মোট ৪ টা বাসায় যেতে হবে।
রকি তার ১ম বাসায় যেতেই মাংস নেয়ার জন্য ভীড় দেখতে পেল। একটু জটলা হয়ে গিয়েছে।
রকি যেতে পারছে না।
এর পরে রকি বলল ভাই সাইড দ্যান, ভিতরে যাইতে দ্যান।
মোটা কাল মত এক লোক ঘোত ঘোত কইরা কইলো আমি আগে আইছি আমি আগে যামু তুই পিছে থাক, লাইন ভাইনংগা আগে যাইতে চাস।
এই লাইনের আরেক মহিলা আস্তে আস্তে কইলো, আমরা বুড়া হইয়াও লাইনে থাহি আর ওগো বয়স কম, ধৈর্য ও কম। লাইন ভাইনংগা যাইতে চায়। হায়রে মানোস।

রকি আর শুনতে পারলো না। ব্যাগ হাতে রিটার্রন গেল ২য় বাসার দিকে। বাসার গেট লাগানো, সে কলিং বেল টিপ্লো, বাজছে না। নস্ট মনে হচ্ছে।
হাত দিয়ে কড়া নারলো, একি সাথে বলল, বাড়িতে কেউ আছেন?

এবার ভেতর থেকে এক পিচ্চি চিল্লাইয়া কইলো, মাংস দেয়া শ্যাষ, অন্য বাসায় যান।
রকি আবার নক করলো, রাগ লাগছে পিচ্ছিটারে কষিয়ে একটা দিতে পারলে ভাল হইতো । বজ্জাত।
২য় বার করা শুনে গেট খুলতে খুলতে বলল আরে বললাম তো অন্য বাসা থেকে মাংস নেন।
দরজা খুলে বলল, আরে রকি ভাইয়া!
রকি কথা বারালো না, ফুপু বাসায় থাকলে এইটা দিয়া আয় যা, এর পরে মাংস এর প্যাকেট বের করে দিল।
আর কথা বারাইলো না।

পরের বাসায় যাচ্ছে, পথে রকির ক্রাস সূচির সাথে দেখা। রকি এই মেয়ের জীবনের গল্পের নায়ক হতে চায়। খুব বেশি পাত্তা যদি পায় না। এই মেয়ের পেছনের লাইন অনেক বড়।

-আরে সূচি যে, কেমন আছ।
-ভাল ভাইয়া আপনি?
-ভাল, কোথায় গিয়েছিলে?
-এখানেই আমার একটা বান্ধবীর বাসায়।
-ইলা দের বাসায়?
-জ্বি ভাইয়া।
এমন সময় সেই কাল মোটা ব্যাটা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রকিরে দেইখা কইলো ঐ বাসায় এহনো মাংস দিতাছে, গেলে পাবি। রকি ওই ব্যাটার দিকে ভয়ংকর ভাবে তাকাইতেই ব্যাটা ভাইগা গেল।
সূচির দিকে তাকালো, সূচি অন্য দিকে তাকিয়ে হেসেই যাচ্ছে।
রকি বলল আচ্ছে যাও তাহলে আমি মাংস গুলো দিয়ে আসি।
সূচি হাসতে হাসতেই বলল আচ্ছা ভাইয়া।

রিকি এবার ৩য় বাসায় গিয়ে গেটে দাড়িয়েই মাংস দিয়ে বের হয়ে আসছে, তা দেখে সকালেই সেই মহিলা রকিকে জিজ্ঞেস করলো, কি মাংস কি দিতাছে? পাইছোস?
মহিলার সাথে আরো ৮/৯ জনও আছে।

রকি আর কিছু কইলো না। আস্তে বাইর হইয়া গেল।

৪র্থ বাসায় গিয়া মাংস দিতে গিয়া দেখে ইলা এই বাসায়। রকির খালার মেয়ের সাথে কথা বলছে।
রকি গিয়ে বলল, আপু কেমন আছন?
সুমি আপু বলল ভাল রে। তুই কেমন আছিস?
-ভাল আপু। ইলা তুমি এখানে?
ইলা বলল সুমি আপু আসতে বলল তাই আস্লাম।
ইলার মুখটা হাসি হাসি। রকির মনে হল আহা এই হাসি দেখেই তো ছেলেরা ফাসে।
ইলা হাসি হাসি মুখেই বললো ভাইয়া, আপনার সাথে কি সূচির দেখা হয়েছিল?

রকি থতমত খেয়ে ইলার হাসির আসল কারন বুঝলো।
কোন মতে হ্যা হয়েছিল বলেই চলে এল।
হইসে আর না। ১ম প্যাকেট টা আর দিতে গেল না। আম্মু দিয়ে আসবে।

বাসায় গিয়ে আম্মুকে বললো এই প্যাকেট তুমি দিয়া আইসো।

আম্মু বললো, আচ্ছা কিন্তু তোরে এমন লাগতেছে ক্যান।
-কেমন লাগতাছে?
- মনে হইতাছে মাংস টোকাইয়া আসলি, ড্রেস চেঞ্জ কর। গোসল কর। এভাবে এতক্ষন থাকে কেউ।

রকির মনে হল আজ সব কিছুর জন্য তার কপালই দায়ী। কার মুখ দেখে যে উঠেছিল!
পরেই মনে পরে গেল দাত ব্রাস করার সময় আয়নায় নিজেকেই আগে দেখেছিল।

গোসল করে ফ্রেস হয়ে টিভির রুমে রকির ছোট বোন বসে বসে ফেইসবুক দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে ।

কিরে হাসছিস ক্যানো?
-ভাইয়া দেখ সূচি আপু কি লিখেছে। পরলে তুমিও হাসতে হাসতে মারা যাবে।
-কি লিখেছে?
-এক্টা রম্য গল্প "মাংস টোকাই আর আমাদের পাড়াতো ভাই"।

রকির মাথা ঝিম ধরে গেল।
সে সূচির জীবনের গল্পের নায়ক না হলে একটা গল্পের নায়ক ঠিকই হয়েছে।

রকির "বুকের ভেতরটা কেমন মোচর দিয়ে হাহাকার করে উঠলো, হায়রে মানুষ"


আমার ফেবুতেও (fb.me/payel420x) এটা একি সাথে প্রকাশিত হয়েছে।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×