somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিঙেল (ছোট গল্প)

১৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


#ছোটগল্প

ডিসক্লেইমার আগে দেইঃ ইহা একটি কাল্পনিক ঘটনা। আমার অলস মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র। বাস্তবতার সাথে মিল নেই। ছবিতে থাকা রায়হান ভাই ও ভাবীর সাথেও এই গল্পের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
---------------------------------

সেইন্ট মার্টিন আসবো লিখে একটা ট্রাভেল গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলাম।
অনেকেই কবে যাচ্ছি কোন বাস, কোন শীপ ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চেয়ে কমেন্ট দিলো। আমিও সহজ মনে সব উত্তর দিলাম।
সেটা সমস্যা না। ইনবক্সেও কয়েকজন নক দিলো। কেউ কেউ অফার করলো তাদের সাথে যেতে, কেউ কেউ বললো ফিরে যেন আপডেট দেই।
এক সুন্দরী এর মেসেজ ছিলো এরকম।
বাসের সিট নং কত?
টাইম আর বাস এর নাম তো পোস্টেই ছিলো। সিট নং কেন জানতে চাইলো! বলে দিলাম। বললো সিঙেল যাচ্ছেন?
দায়সারা জবাব দিলাম হ্যা।
মেয়ে কিছু বললো না। শুধু বললো সেইন্ট মার্টিন এ দেখা হবে ভাইয়া। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছি। এক্সেপ্ট করে নিয়েন।
আচ্ছা বলে মেসেঞ্জার থেকে বের হয়ে গেলাম।

নির্ধারিত তারিখে বাসে উঠতে লেইট হয়ে গিয়েছিলো। বউ এর মাথা গরম। জ্যামে পড়ে বাস মিস করি করি, এদিকে গরমে অস্থির।
বাস ৮ টায় ছিলো। জ্যাম পেড়িয়ে ৮ টা ১০ এ উঠি।
তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ রেখে সিটে বসে পরি। বাস চলছে মৃদু শব্দে গান চলছে বাসে।

বাস কিছুক্ষন চলার পরেই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে পাশে বসা আমার বৌকে বললো "এক্সকিউজ মি", আপু, আপনি কি সামনের ঐ সিটে বসেবন? ওটা আমার।

আমি ভালো করে তাকাতেই দেখি এটা সেই ফেইসবুকের সুন্দরী টা। যাকে সিট নং বলেছিলাম। সিঙ্গেল যাচ্ছি বলেছিলাম।
আমার বৌ আমার দিকে তাকিয়ে আবার মেয়েটাকে বলবো আপনাকে এই সিট ছেড়ে দিবো কেনো?
মেয়ে যা বললো আমি মাথা লুকানোর জায়গা পাচ্ছিলাম না।
মেয়ে বলে আসলে আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড এক সাথে বসতে চাচ্ছি। টিকেট আলাদা করায় সিট ও আলাদা পরে যায়।
প্লিজ আপু।
বৌ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো আপনার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে যান, আমি সিট ছাড়বো না।
সুন্দরী যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলো তুমি ভেবনা ম্যানেজ করছি আমি।
আমি দাড়ান, ওয়েইট, শোনেন বললেও সে ততক্ষনে তার সিটে চলে গিয়েছে।
বউ এর প্রশ্নবান এর সম্মুখীন হয়ে বোঝানোর ট্রাই করছি সে যা ভাবছে আসলে তা না।
২ মিনিট পরে একটা ছেলে এসে বলে ভাইয়া আপনি সামনের সিটে যান, আমি এখানে বসি।
ইচ্ছে থাকুক আর না থাকুক, না বললাম।
লোকটা বললো ঐ সিটে আপনার বান্ধবী মাধবীলতা আছে।
মাধবীলতা কে? জিজ্ঞেস করতেই বঊ খেকিয়ে উঠলো, এখন তো চিনবাই না।
বৌ পাশে তাই গার্লফ্রেন্ড কে চিনতেছো না। যাও ঐ সিটে যাও। আমার ধারে কাছে আসবা না।
মাধবীলতা তার সিট থেকে বললো পাশে তোমার বৌ? আর আমারে বলো সিঙেল।

বাসের লাইট সব জ্বলে উঠলো, বাস যাত্রীরা সবাই ব্যাপারটা বুঝে গেছে।
পেছেন থেকে কোনো ছোকড়া আওয়াজ দিচ্ছে এতো দেখি নাসির ভাই প্রো ম্যাক্স।
অসহায় হয়ে পেছনে চাইলাম। প্রায় সবাই আমাকে দেখে হাসছে। কে বললো বুঝলাম না।
সামনে ফিরতেই দেখি মাধবীলতা কন্টাকটরকে কিছু বলছে।
মাধবীলতা আবার এসে বললো আমাকে না বললেন বর নিয়ে না আসার জন্য!
ভোদাই হয়ে ভাবলাম এইটা কখন কইলাম! আজিব?
কয়েকজন উৎসুক লোক কাছাকাছি এসেছে।
আমি আস্তে আস্তে বললাম " ফাও বাশ কি এমনই"।
এক লোক প্রশ্ন করলো আপনি বঊ নিয়েও সিঙেল হন কিভাবে!
পেছন থেকে কেউ বললো "ভাই সিঙেল আর ভাবী সিঙেল, খরচ কমানোর জন্য টুইন শেয়ার এ একটা রুম নিয়েছে"।
বউ এর দিকে তাকিয়ে তার চেহারা দেখে মুখে কিছু বললাম না।

আবারও কেউ আওয়াজ দিলো।
মাইনসে বৌ এর সাথে গার্লফ্রেন্ড ও রাখে, আর আমাগো উপর ঠাডা পরে।
সামনে থেকে কেউ বললো আজ গরীব বলে না আছে বউ, না আছে গার্লফ্রেন্ড।

বিশ্বাস করেন, আমি এখন ফাডা বাশের চিপায়। এর চেয়ে খারাপ ফাডা বাশ দুনিয়াতে নাই।
কন্টাকটর সাহেব সবাইকে শান্ত করলেন
বাঙালী এই টাইপের ইস্যু তে খুব মজা পায়।
সিটে বসলেও আওয়াজ দিয়েই যাচ্ছে।
সব ধরনের আওয়াজই কানে আসছে।

* ভাই কেমনে পারেন? শিখাইয়েন।
*দিন তো আপনার ভাই।
*এক মহিলা বললো দুনিয়াটা শেষ হয়ে গেলো।
* কেউ বললেন এগুলো আখিরাত এর আলামত।
মধাবীলতা তার মত করে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছে।
বউ এর দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছিনা।
তবুও অনেক বলে কয়ে বোঝানোর ট্রাই করলাম। অবশেষে চুপ হইয়া থাকলো।
পুরো বাসই যেন চুপ। গান বেজে যাচ্ছে এই পথ যদি না শেষ হয়..... এই গান আর বাজার সময় পেলো না?

কোন মতে সেইন্ট মার্টিন গিয়ে পৌছাই।
ভাবলাম নিরিবিলি এইবার বৌ ম্যানেজ করার ট্রাই করা যাবে। রুমের পাশেই বীচ। সুযোগ বুঝে বুঝিয়ে বললেই ম্যানেজ হবে। আমি ডাক দিতেই সে রুম থেকে বের হয়ে সামনে বীচের কাছে এসে দাড়ালো। পিছু পিছু আসলাম।
কিন্তু অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়।
মাধবীলতা এখানেই উঠেছে।
মুখ ভেঙচি দিয়ে রুমে গেলো।
বউ আমার দিকে তাকিয়ে বললো এই ছিলো তোমার মনে!

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কিছু না বলে বীচে হাটতে শুরু করলাম। কোথায় যাচ্ছি জানিনা। একটু আগাতেই ২ টা ছেলে দুর থেকে বললো
- ভাই কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনাদের ঠিক চিনলাম না।
-ভাইয়া আমরা গতকাল আপনার বাসে ছিলাম।

আচ্ছা বলেই হেটে চলে আসলাম। এরাই হয়তো আওয়াজ দিচ্ছিলো। এখনও আওয়াজ দিচ্ছে। "ভাই ক্যামনে পারেন"।

এক মেয়ে আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। নিশ্চিত বাসে ছিলো। ও মুখো আর হলাম না। হোটেলেই ফিরি।
ফিরতে গিয়ে দেখি বঊ আর মাধবীলতা ২ জনই বীচের সামনে পাশাপাশি দাড়ানো।
মিসাইল আর গ্রেনেড পাশে দেখে আমি সোজা সাগরে হাটা দিলাম।
এই সেইন্ট মার্টিন এর সাগরই পারে আমাকে বাচাতে।
জুতো পরেই সাগরে নামতে যাবো। পেছন থেকে এক ছেলে হাত ধরে বলে দুলাভাই আত্মহত্যা মহাপাপ।
দুলাভাই বলে কোন শালা বলে পেছনে তাকালাম। আমার হাত ছাড়েনি।
৩২ দাত বের করে হাসছে। মুখটা পরিচিত। নিশ্চয়ই বাসে এই ছেলেও ছিলো।
পরক্ষণেই মনে পরলো এই ছেলে তো মাধবীলতার পাশের সিটে ছিলো।
ততক্ষনে বৌ আর মাধবীলতা চলে এসেছে।
বৌ এর মুখে হাসি কেন!!
পাগল হয়ে গেলো নাকি?
মাধবীলতাও হাসছে।
হাসতে হাসতে বললো, যাও তোমাকে ছেড়ে দিলাম। আমি আরেকটা ম্যানেজ করে নিয়েছি, দুলাভাই।
দুলাভাই? একবার বলে বয়ফ্রেন্ড একবার বলে দুলাভাই!!
বৌ এইবার বললো ওর নাম সিনথিয়া। আমার ছোট বেলার বান্ধবী। আমরা সেইন্ট মার্টিন যাচ্ছি শুনে সেও এই ডেটে যাবে জানায়। পরে আমি সব জানাই, ওরা সেই হিসেবে বাস আর রুম বুকিং করে। সেইম শীপে টিকেট পায়নি।
ওরা মানে, মানে এটা হচ্ছে সিনথিয়ার বর রাজীব ভাইয়া।

ওয়েইট, মানে মাধবীলতা তোমার বান্ধবী আর উনি তার বর?
তিন জন এক সাথে সম্মতি দিলো।
সিনথিয়া বললো, ভাইয়া স্যরি। প্লানটা আমার ছিলো। ফেইক আইডি দিয়ে নক দিয়ে একটা ঝামেলা করে পরে চমকে দিবো।
বৌ ও বললো আমিও স্যরি।
আমি বললাম যাও ক্ষমা করে দিলাম শুধুমাত্র এই জন্য যে সিনথিয়া অনেক সুন্দরী।
সবাই উচ্চ শব্দে হেসে দিলো।
আমাদের পাশ দিয়েই বাসের সেই ছেলে দুইটা যাচ্ছিলো, আসলে বোঝার ট্রাই করছিলো কি হচ্ছে।
চোখে চোখ পরতেই ছেলেটা বললো "ভাই ক্যামনে পারেন! "
এবার আমারা সবাই জোরে হেসে দেই
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×