somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম - ৩

২৯ শে মে, ২০১১ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহিম
আস সালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

.......পূর্বে প্রকাশিত লেখার সূত্র ধরে....
[এর আগের পর্ব দু'টি রয়েছে এখানে:
Click This Link


"পূর্বকথা" বা Foreword-এ এর পরপরই মুহাম্মাদ আসাদ বলেন যে, তিনি তখন এটাও অনুধাবন করেন যে, ইসলামের শিক্ষা যে "আদর্শ সম্ভাবনা"-র কথা বলে, বর্তমান মুসলিমদের বাস্তব অবস্থা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন এবং তারা সেই লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি অনুধাবন করেন:

"I realized that the one and only reason for the social and cultural decay of the Muslims consisted in the fact that they had gradually ceased to follow the teachings of Islam in spirit. Islam was still there but it was a body without a soul." (Page#10, Islam at the Crossroads - Muhammad Asad)

অর্থাৎ: "আমি বুঝলাম যে, মুসলিমদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের একমাত্র কারণ হচ্ছে জীবনের মূলমন্ত্র হিসাবে ইসলামের শিক্ষাকে গ্রহণ করা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাওয়া। ইসলাম যদিও তখনো ছিল, কিন্তু তা ছিল আত্মাবিহীন একটা কায়ার মত।"

কথাগুলো তখন, ১৯৩৪ সালে বলে থাকলেও, আজো মুসলিম উম্মাহর অবস্থা তার চেয়ে ভালো কিছু নয় - বরং তা আরো খারাপ আকার ধারন করেছে। আসাদ এখানে এবং অন্যত্রও, ইসলাম যে "body and soul"-এর দ্বীন বা "শরীর ও আত্মার" দু'টোরই ধর্ম - এই সত্যটার উপর জোর দিতে চেয়েছেন। একদিকে, ইসলাম বলতে কেউ যেন কেবল কিছু যান্ত্রিক "rituals" বা "নিয়ম কানুন" মেনে চলা বা কিছু নির্দিষ্ট নিয়মে ওঠা-বসা করা না বোঝে - সেটা যেমন গুরুত্বপুর্ণ, তেমনি কেবল মনে মনে ঈশ্বরের প্রতি "গভীর শ্রদ্ধা" ও "ভালোবাসার" দাবী করাকেও কেউ যেন যথেষ্ট মনে না করে - সেটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রথম ধারা হচ্ছে ইহুদীসুলভ "formalism"-এর, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে খৃস্টানসুলভ "laxity"-র - সবকিছু মনে মনে করে, আসলে মনগড়াভাবে সবকিছু করা। একটা জীবন, এই আমাদের জীবনটাই, যেমন "body and soul" বা "দেহ এবং আত্মা" মিলে বাস্তবতা লাভ করে, তেমনি দ্বীন ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাত্রায়, শরীর এবং মনকে যুগপথ আল্লাহর কাছে, আল্লাহর বিধানের কাছে সর্বান্তকরণে সমর্পন করতে হয়। আপনি কি ভাবতে পারেন যে, (শারীরিক নামায, রোজা, দাড়ি রাখা বা পর্দা করা ছাড়া) কেউ বলবে: আমি মনে মনে নামাজ পড়ি, মনে মনে রোজা রাখি, মনে মনে দাড়ি রাখি অথবা মনে মনেই পর্দা করি - "মনের পর্দা আসল পর্দা, বাইরের পর্দা হটাও রে!" সেক্যুলারপন্থী অর্ধ-পুরুষরা তেমন বলতে চাইলেও, আমরা জানি ইসলামে তার কোন স্থান নেই। আবার উল্টোটা দেখুন - সঠিক "নিয়ত" বা intention ছাড়া আপনার নামায হয়ে যেতে পারে কেবলই ওঠা-বসা করা ব্যায়াম, রোজা হতে পারে কেবলই উপোস করা, দাড়ি রাখা হতে পারে পপ-স্টারদের সর্ব-সাম্প্রতিক ফ্যাশন, আর বোরখা হতে পারে কেবলই গোপনে/নিভৃতে লোকচক্ষুর অন্তরালে ব্যভিচার-অন্ত-অভিসারে যাবার একটা মাধ্যম! আজকাল যেমনটা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে বা বসুন্ধরা সিটির "ফুড-কোর্টে" দেখা যায় - অনেকেই এটাকে "ইসলামী ডেটিং" বলতে চান (নাউযুবিল্লাহ্)। কিন্তু আসলে কি তাই? "ইসলামী ডেটিং" বলে কিছু থাকতে পারে?? না! এখানে বোরখা কেবলই ব্যভিচারের ক্ষেত্র প্রস্তুতের একটা tool।

বাস্তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশে ইসলামের "body and soul" বা "দেহ এবং আত্মা" জীবনযাত্রার proper representation না দেখলেও, আদর্শ ইসলামী জীবনটা কেমন হতে পারে বা হওয়া উচিত, তা তিনি ঠিকই visualize করতে পেরেছিলেন। কি দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন - এধরনের প্রশ্নের উত্তর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, এই অধ্যায়ে তিনি আরো বলেন:

"It was not any particular teaching that attracted me, but the whole wonderful, inexplicably coherent structure of moral teaching and practical life-program. I could not say, even now, which aspect of it appeals to me more than any other. Islam appears to me like a perfect work of Architecture. All it's parts are harmoniously conceived to complement and support each other; nothing is superfluous and nothing lacking; and the result is a structure of absolute balance and solid composure." (Page#11, Islam at the Crossroads - Muhammad Asad)

অর্থাৎ:"ইসলামের কোন একটা নির্দিষ্ট শিক্ষা যে, আমাকে আকৃষ্ট করেছিল এমন নয়; অদ্ভুত সুন্দর, নৈতিক শিক্ষা ও বাস্তব জীবনের কার্যক্রমের অবর্ণনীয় পর্যায়ের সঙ্গত এই কাঠামোর সম্পূর্ণটুকুই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। এমন কি এখনো আমি বলতে পারবো না যে, এর কোন দিকটা আমার কাছে অন্যান্য দিকের চেয়ে বেশী আবেদনময় মনে হয়। ইসলামকে আমার স্থাপত্যের একটা নিখুঁত কাজের মত মনে হয় - যেখানে এর সকল অংশই এমনভাবে সমন্বিত যে, প্রতিটি অংশকেই অন্য অংশের পরিপূরক হিসাবে কাজ করার কথা এবং অন্যান্য অংশকে সমর্থন করার কথা চিন্তা করে যত্ন করে স্থাপন করা হয়েছে; এখানে বাড়তি কিছুই নেই অথবা কোন কিছুর অভাবও নেই; যার ফলাফল হচ্ছে নিরঙ্কুশ ভারসাম্য এবং শক্ত গাঁথুনির একটা কাঠামো।"

সত্যকে কি অদ্ভুত সুন্দর উপায়ে ভলোবাসা ও অনুভব করা - সত্যের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্বের কি দারুণ সুন্দর অভিব্যক্তি ও অনুভূতি!

অধ্যায়ের শেষে, এই বইখানা ঠিক কি এবং কেন লেখা - তা বলতে গিয়ে তিনি বলেন:
It does not pretend to be a dispassionate survey of affairs; it is the statement of a case, as I see it: the case of Islam versus Western Civilization. And it is not written for those to whom Islam is only one of the many, more or less useful, accessories to social life, but rather for those in whose hearts still lives a spark of the flame which burned in the hearts of the Companions of the Prophet - the flame that once made Islam so great as social order and a cultural achievement. (Page#12, Islam at the Crossroads - Muhammad Asad)

অর্থাৎ: "এখানে (এই বইয়ে) এমনটা ভান করা হয়নি যে, বইখানা হচ্ছে কর্মকান্ডের আবেগহীন একটা জরিপ-কাজ; বরং আমি যেমন বুঝি, এটা হচ্ছে একটা মামলার এজহার: ইসলাম বনাম পশ্চিমা সভ্যতার এটা কেইস (বা মামলা)। আর এই বইটি তাদের জন্য লেখা নয়, যারা ইসলামকে কেবলই সামাজিক জীবনের অনেকগুলো উপকারী অনুষঙ্গিক বিষয়ের একটা মনে করেন, বরং এটা তাদের জন্য লেখা, যাদের অন্তরে সেই আলোক-শিখার রেশ এখনো জীবন্ত রয়ে গেছে, যা কিনা একদিন নবীর (সা.) সাহাবীদের অন্তর আলোকিত করেছিল - যে আলোক-শিখা ইসলামকে এক সময় সামাজিক বিন্যাস ও বিধান এবং সাংস্কৃতিক অর্জনের এক অপূর্ব দৃষ্টান্তের মর্যাদা দিয়েছিল।"

আসুন তাহলে, আমরা "পূর্বকথা" বা Foreword অতিক্রম করে মূল বইয়ে প্রবেশ করি!



[ইনশা'আল্লাহ্ চলবে.....]
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×