somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম - ৪

০৮ ই জুন, ২০১১ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানি রাহিম
আস সালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

.......পূর্বে প্রকাশিত লেখার সূত্র ধরে.....


[এর আগের পর্বটি রয়েছে এখানে:
Click This Link ]

"The Open Road of Islam" হচ্ছে "Islam at the Crossroads" বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম। এই অধ্যায়ের নামটা নিজেই হচ্ছে একটা worldview! ইহুদীরা এবং হিন্দুরাসহ অনেক ধর্মাবলম্বীরাই মনে করে থাকেন যে, কেবল জন্মগতভাবে তাঁদের মাঝে জন্মগ্রহণকারীরাই তাদের ধর্মাবলম্বী হতে পারেন অথবা উল্টোটাও যে, একবার যখন কেউ তাদের ধর্মে জন্মগ্রহণ করেন, তাদের আর অন্য কিছু হবার উপায় নেই - এজন্য RSS বা VHP শ্রেণীর কট্টোরপন্থী হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনের একট বিখ্যাত স্লোগান হচ্ছে: "Once a Hindu, is always a Hindu"। অর্থাৎ, একবার যে হিন্দু ছিল, সে সব সময়ের জন্যই হিন্দু - এই যুক্তিতে তারা অনেকদিন আগে ধর্মান্তরিত হওয়া সাঁওতাল বা দলিতদেরও আবার শুদ্ধ করে হিন্দু বানানোর চেষ্টা করে থাকে। ইসলামে ব্যাপরটা সম্পূর্ণই আলাদা। ইসলামের দরজা পৃথিবীর মানচিত্রের যে কারো জন্য সব সময় খোলা - যে কেউ চাইলে ইসলামের "আদর্শভিত্তিক" জাতির একজন সদস্য হয়ে যেতে পারে। আবার, বাবা মুসলিম বলেই কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে চিরতরে মুসলিম থাকতে পারে না। প্রাথমিকভাবে, একটা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে "মুসলিম" বলেই জ্ঞান করা হয়! তবে বড় হয়ে সে যদি ইসলামের মৌলিক কোন বিষয় অস্বীকার করে, তবে তাকে একজন "মুরতাদ" বা "কাফির" সাব্যস্ত করা হতে পারে বৈকি।

এই অধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিতে গেলে নীচের কথাগুলো আসে:

It lies in human nature that, nations and civilizations which are politically and economically more virile exert a strong fascination on the weaker or less active communities, and influence them in the intellectual and social spheres without being influenced themselves. Such is the situation today with regard to the relations between the Western and the Muslim worlds.

অর্থাৎ: "এটা মানব প্রকৃতির স্বভাবজাত যে, ঐ সব জাতি ও সভ্যতা, যারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশী সক্রিয়/সবল, সেগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও কম সক্রিয় সম্প্রদায়গুলোর আদর্শে ও স্বপ্নে পরিণত হয় এবং নিজেরা কোনভাবে প্রভাবিত না হয়েই দুর্বল জাতিগোষ্ঠীগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক বলয়ের উপর দারুণ রকমের প্রভাব বিস্তার করে। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্কের অবস্থাটা আজ সেরকমই।"

একটা জাতি বা দেশ যখন আরেকটা দেশকে যুদ্ধে পরাজিত করে, সেই দেশটাকে দখল করে নেয়, তখন বিজিতরা সব সময় বিজয়ী জাতিকে সমীহের চোখে দেখে, এমন কি যদিবা সেই সমীহের সাথে ঘৃণা মিশ্রিতও থাকে। আপনি দেখবেন ইংরেজ শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ তৎকালীন ভারতীয় গণসাধারণেরা, সাধারণভাবে ইংরেজদের ঘৃণাই করতো, আর আর তথাকথিত "সুকুমার বৃত্তির" অধিকারীদের তো পরাধীনতার শৃঙ্খলকে স্বভাবতই আরেক ধাপ বেশী ঘৃণা করার কথা। কিন্তু তবু, দেখবেন রবীন্দ্রনাথের মত "মহাপুরুষেরা" সাদা-চামড়া প্রভুদের কি অবলীলায় "তেল" মেরেছেন - জনৈক "সাদাচামড়া প্রভু"র স্তব-স্তুতি করতে গিয়েই নাকি "জনগণমন অধিনায়ক জয় হে, ভারতভাগ্যবিধাতা..." রচনা করেছিলেন তিনি।

প্রয়াত আলজেরিয়ান স্কলার মালেক বেননাবী, কেন কোন জাতি অন্য আরেকটি জাতির উপনিবেশে পরিণত হয়, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বলেছেন যে, যারা উপনিবেশে পরিণত হয় তাদের চরিত্রে colonizability বলে একটা বিশেষ গুণ থাকে বলেই তারা colonizable বা তাদের উপনিবেশে পরিণত করা যায়। এটা ঠিক যে, (সহজে) colonizable নয়, এমন জাতিগোষ্ঠী খুঁজতে গেলে তাদের বেশীর ভাগই পাওয়া যাবে, "আদর্শগত মুসলিম জাতির" অন্তর্ভুক্ত যে সব ethnic জাতি রয়েছে, সে সবের ভিতর - যাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে আফগান, তুর্কী ও চেচেন জাতিগোষ্ঠী, তবু, মুসলিমদের যে সমস্ত দেশগুলো দীর্ঘদিন উপনিবেশ হিসেবে পশ্চিমাদের পদানত ছিল, সেগুলোর গণসাধারণের মনে 'প্রভু"দের শ্রেষ্ঠত্ব একরকম মুদ্রিত হয়ে রয়ে গেছে। মুহাম্মাদ আসাদের সুরে সুর মিলিয়ে দু'টো উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই: প্রথমটি বেশ ক'বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধুর বড় ভাই লিবিয়া গেলেন ইংরেজীর অধ্যাপক হিসেবে। তার এক বন্ধুও একই সময়ে একই যোগ্যতা ও চাকুরী নিয়ে ঐ একই দেশে গেলেন। যাবার সময় আমার বন্ধুর বড় ভাই সরাসরি লিবিয়া গেলেন, আর তার বন্ধু লন্ডন হয়ে গেলেন। লন্ডনে তার ঐ বন্ধু একটা "কেবল attending" course-এ যোগ দেন। ঐ course শেষে তাকে একটা certificate of attendance দেয়া হয়। লিবিয়া পৌঁছে চাকুরীক্ষেত্রে যখন প্রয়োজনীয় সনদ-পত্রাদি জমা দিলেন, তখন কি মনে করে যেন তিনি ঐ certificate of attendanceও জমা দেন। ঐ "রাণীর মাথা" খচিত certificate-এর বদৌলতে তিনি নির্ধারিত বেতনের চেয়ে ১০০ ডলার অধিক বেতনে চাকুরীতে যোগ দেন। এটা লিবিয়ার কোন একান্ত ব্যাপার নয়। যারা সৌদী আরবের চাকুরীর বাজার সম্বন্ধে জানেন, তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে, একজন পশ্চিমা মানুষ, কেবল তার সাদা-চামড়ার গুণে সেখানে কেমন সমাদৃত হয়ে থাকেন। অথচ, ইসলামের ফরজ/ওয়াজিব পর্যায়ের একটা মূলনীতি হচ্ছে "আল-ওয়ালা ওয়া আল-বারাহ্" - "কে আপনার বন্ধু, সুহৃদ, আপনজন ও নিরাপত্তাদানকারী -আর - কে আপনার শত্রু বা ঘৃণার পাত্র" তার নির্ধারণ! এই নীতিমালার আলোকে এমনিতেই যে কোন মুসলিমের, অপর মুসলিমের কাছে অগ্রাধিকার ও ভালোবাসা পাবার কথা - যা অবিশ্বাসীদের কখনো পাবার কথা নয়। আর একজন মুসলিম ও একজন বিধর্মীর যদি একই যোগ্যতা থাকে, তবে তো কথাই নেই! স্বজাতি সম্বন্ধে হীনমন্যতা ও ঔপনিবেশিক শক্তির অপর সভ্যতাকে উন্নততর মনে করা থেকেই যে এসব বৈষম্যের সূত্রপাত হয় - তা বলাই বাহুল্য। এবার আরেকটি উদাহরণ দেব। আমি একসময় যখন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করতাম, তখন আমাদের জুনিয়র একটা বাংলাদেশী ছেলেও সেখানে ছিল। ছেলেটি ভালো করে বাংলাও বলতে পারতো না - মুখ খোলার ৩০সেকেন্ডের ভিতই যে কেউ বুঝতে পারতো বাংলাদেশের কোন অঞ্চল থেকে তার আগমণ। ঐ ছেলেটিও যখন দেশে ফিরে এলো, তখন প্রথম দিকে হ্যাট পরতে শুরু করলো । শুধু সে কেন, ৩ মাসের জন্য ইউরোপ আমেরিকা বেড়াতে গিয়েও অনেকে "প্রভু"-দের অনেক অভ্যাস/বদভ্যাস সাথে করে নিয়ে আসেন। বিজিতের বিজয়ীর মত হতে চাওয়া, এক কালের ঔপনিবেশিক "প্রভু"-দের মত হতে চাওয়া বা তাদের মত হতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখা ইত্যাদি থেকেই এমনটা ঘটে! অথচ, এদেশে বছরের পর বছর থাকার পরেও ক'জন বৃটিশ বা আমরিকানকে দেখেছেন/শুনেছেন যে, দেশে ফিরে গিয়ে রাতে, ঘরে relax করতে, শোবার আগে লুঙ্গি পরে? অথবা, চিত্ত বিনোদনের জন্য মমতাজের গান শোনে - আমরা যেভাবে ব্রায়ান এডামস বা শাকিরার গান শুনি?! আমি এদেশে কাজ করা এমন বিদেশী সাদা-চামড়া ইউরোপীয়র কথা জানি, যার পানি আসতো ফ্রান্স থেকে - এদেশের পানি সে ছু'তো না!

আমরা উপরে যা আলোচনা করলাম, আমরা দেখবো যে, Islam at the Crossroads গোটা বই জুড়েই এটা একটা প্রধান theme। হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসা, নিজেদের ঐতিহ্যকে জানা, বোঝা এবং তা যে এযাবতকালের পৃথিবীর সকল ঐতিহ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও কার্যকরী ঐতিহ্য তথা জীবনব্যবস্থা - তা অনুধাবন করার তাগিদ ও অনুপ্রেরণা দেখতে পাওয়া যাবে সারা বই জুড়ে।


[ইনশা'আল্লাহ্ চলবে.....]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×