somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহা ! শৈশব !

০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে আমি ছিলাম সেকেন্ড বয় আর রাজিব ছিলো ফার্স্ট। একটা ঘটনা আমাদের ক্লাসের সামনে প্রায়ই ঘটতো। সেটা হলো ক্লাসের বাইরে ক্লাসের ফার্স্টবয় আর সেকেন্ড বয় কান ধরে
দাঁড়িয়ে আছে!!(এই ঘটনা ক্লাশ নাইন টেনেও ঘটেছে)। টিচার রা তাদের ছাড়াই অন্যদের নিয়ে ক্লাস করছে। বিমল স্যার তো মুড খারাপ থাকলে ক্লাসে ঢুকেই বলতো, এই তোরা বাইরে যা। আর মাযহার স্যার ঐসব কান ধরা আর ক্লাস থেকে বের করাতে বিশ্বাসী ছিলো না। তার স্ট্যাটেজি ছিলো মাইরের উপর ঔষধ নাই। এখন নাকি সরকার নিয়ম করেছে শারিরীক শাস্তি নিষিদ্ধ, বোধকরি আমার বন্ধু রাজিবই সবচেয়ে বেশী আফসোস করেছে ডিসিশান টা শোনার পর। বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি ওখানেও চলছে আমাদের শয়তানি এবং এটা নিয়ে আমাদের বিন্দু মাত্র খারাপ লাগাও ছিলো না। হালকা খারাপ লাগতো যখন জুনিয়র ক্লাসের যেসব মেয়েদের সামনে নায়ক হওয়ার চেষ্টা করতাম তারা সামনে দিয়ে মুচকি হেসে যেতো। তবে এইসবেও রাজিবের কোনো ভাবলেশ হতো না।

আমার শৈশব কাটে পতেঙ্গায়। বিল্ডিং এর ছাদে উঠলে সাগরের ঢেউ এর শব্দ শোনা যেতো আর দেখা যেতো পতেঙ্গা সী বিচ। বাসা থেকে আধ কিলোমিটার দূরে ছিলো পতেঙ্গা সী বিচ। বিচের পাশেই ছিলো আমাদের কলোনীটা। দেখা যেতো ফ্রেন্ডরা মিলে প্রতিদিন বিকেলে চলে যেতাম সী বিচে বা সকালে আব্বুর সাথে হাটতে হাটতে....বন্ধুরা মিলে বিচে ফুটবল খেলা আর খেলা শেষে সাগরের নোনা পানিতে দাপাদাপি .....এগুলো ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার স্যাপার। বীচ রোডে বসে সেইসব আড্ডা এখনও মনে হয় খুব বেশীদিন আগের কথা না। কলোনীর ভেতরেই স্কুল, মসজিদ।

আমার পিঠেপিঠি ছিলো রাসেল ও ছোট আপু। রাসেলের চেয়ে আমি দুই বছরের বড় আর আপু আমার চেয়ে দুই বছরের। ফলশ্রুতিতে দুইজনের সাথেই বিভিন্ন ব্যাপারে আমার লেগে থাকতো।রাসেলের সাথে আমি বড় ভাই সুলভ একটা ভাব নেয়ার চেষ্টা করতাম আর ও তার পাত্তাই দিতো না !! মারামারি হতো প্রতিনিয়ত এবং আমিই হারতাম।যদিও আমার যুক্তি ছিলো বড় ভাই বলে ছেড়ে দিলাম, তোর মতো ছোট হলে আমিও ছাড়তাম না !! ওর আর ওর ফ্রেন্ডদের অত্যাচারে কলোনীর মানুষজন থাকতো অতিষ্ট। কারো গাছের ডাব, আম, পেয়ারা,বড়ই চুরি হয়েছে তো রাসেলদের ব্যাচ দায়ী। কারো পুকুরের মাছ চুরি হয়েছে তো রাসেলদের ব্যাচের দোষ ।যদিও এ কাজ কলোনীর মোটামোটি সব ব্যাচই কমবেশী করতো। আমরাও তাদেরকে পেছন থেকে উতসাহ দিয়ে তাদের সাথে বসে খেয়ে টেয়ে পিঠ চাপড়ে এসে আন্কেলদের নির্বিকার ভাবে বলতাম, এভাবে তো চলা টাফ !!! আরে বাবা খাইলে আপনাকে এসে বল্লেই তো হয়।আপনি কি কখনও মানা করেছেন !!!তবে এটাও ঠিক যার গাছের ফল চুরি করতে হতো না সেটার দিকে ছেলেপেলেরা কেউ ফিরেও তাকাতো না। অদ্ভূত শৈশবের সাইকোলজি!!!

কলোনীতে স্কুলের পাশেই ছিলো একটা বিশাল পুকুর। মানিকের কাজিন আসছে গ্রাম থেকে , সে আবার জাল দিয়ে মাছ ধরায় ওস্তাদ। তো ওস্তাদ আসছে তাকে তো কাজে লাগাতে হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম একদিন রাতে ঐ পুকুরের মাছ চুরি করা হবে তারপর তা দিয়ে পিকনিক। যথারীতি প্ল্যানমাফিক কাজ। সে কি প্ল্যান!! সবাইকে বলা হলো কালো টি-শার্ট পড়ে আসতে এবং খালি পায়ে আসতে আর মানিকের দায়িত্ব ছিলো জাল আর মাছ রাখার জার আনতে। রিমন আর মানিকের কাজিন নামলো পুকুরে।রিমনের নামই আমরা দিয়েছিলাম জাইল্যা(জেলে) !! পানির মধ্যে অনেক্ষণ ডুবে থাকার আর বিরতিহীন সাঁতার কাটার এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিলো তার।যাই হোক প্ল্যান মাফিক মাছ ধরা হলো এবং ডিসিশন হলো আমার আম্মুকে দিয়ে রান্না করানো হবে আর খাওয়া হবে আমাদের ছাদে। আম্মুর কাছে নিতেই যথারীতি হাজারটা কোশ্চেন এবং জেরা। নির্বিকার ভাবে বল্লাম অপুদের পুকুরের মাছ, আমরা পিকনিক করবো বলায় আন্কেল দিয়েছে!! ভালো কথা, রান্না হলো, খাওয়া হলো, পিকনিক হলো। দুইদিন পর অপুর আম্মু আসলো আমাদের বাসায় অন্য কি একটা কাজে, আম্মু আন্টিকে বল্লো ওনাদের পুকুরের মাছের কথা!!! সব শুনে আন্টি তো আকাশ থেকে পড়ে। বাসায় গিয়ে অপুর উপর চল্লো ধোলাই!ও মার খেলো আন্টিকে না বলে ফ্রেন্ডদের নিয়ে পুকুরের মাছ চুরি করার অপরাধে আর আমি খেলাম মিথ্যা বলার অপরাধে!!!

আব্বুকে প্রায়ই স্কুলে যেতে হতো আমার জন্য। তার মধ্যে শুধু একবারই বাসায় আসতো হাসিমুখে যেদিন একাডেমিক প্রাইজ গিভিং সেরেমনী থাকতো আর বাকি সময় কোনো না কোনো অভিযোগ শুনে। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটা প্রাইজ আমার জন্য বরাদ্দ ছিলো, সেটা হলো যেমন খুশি তেমন সাজা !!! আর কিছুই পারতাম না, না দৌড়, না জাম্প। অবশ্য এটাতেও যে পুরষ্কার পেতাম টা ভাইয়ার কোরিওগ্রাফির কারণে না আমার অভিনয়ের কারণে কে জানে । একবার ভাইয়া আমাকে সাজালো এইডস্‌ রোগী, এমনভাবে সাজ দিলো আর ট্রেনিং দিলো যে আমি দাঁত মুখ খিঁচে পড়ে আছি তো আছিই, কোনো নড়াচড়া নেই!! স্কুলের বড় আপা এসে আমাকে বেশ কয়েকবার ধাক্কা দিলো । আমি ভাবলাম আপা তো বিচারক, মনে হয় পরীক্ষা করছে!! আমিও নড়ি না। পরে তো ভয় পেয়ে আপার চিল্লা-ফাল্লা শুরু যে আমি ফেইন্ট হয়ে গেছি, বজলু মাথায় ঢালার পানি আনো !!!!

কিছু কিছু ক্লাশে টিচাররা পড়া নিতো শুধু প্রথম নয়/দশ জনের আর ততক্ষণে আমার আর রাজীবের দায়িত্ব ছিলো ক্লাশের বাকীদের পড়া নেয়া। না পারলে টিচারকে জানানো তারপর উত্তম মধ্যম। এত বিশাল গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্বের খাতিরে ক্লাসমেট মহলে আমার আর রাজিবের কদরও ছিলো আকাশচুম্বি। আমাদের সাথে ক্লাসের বাইরে ঝামেলা ? ওকে , কালকে স্কুলে যাও, মজা টের পাবা !!! আমরা দুইজনেই ছিলাম ছোটখাটো আর দূর্বল টাইপ। কিন্তু তাই বলে বিকেলে ফুটবলের মাঠে ল্যাং মারবা ? স্কুল খুলুক !!! আর খেলাধূলায় আমরা মোটেও পারদর্শী না হওয়া সত্ত্বেও সব টিমেই আমাদের জায়গা হতো !!! কে যাবে এত ঝামেলায়। প্রতিদিন পড়া শেখার চে্যে ঐ দুই গাধাকে নিয়েই খেল্‌ !!! এখন মনে হয় দূর্নীতি আর ব্ল্যাকমেইলিং শেখার জন্য বয়সও লাগে না ট্রেনিং ও লাগে না , ক্ষমতা আর সময়ই মানুষকে তা অটো শিখিয়ে দেয়!!!

স্কুলে পিটি স্যার ছিলো বীরেন্দ্র স্যার, হাতে সবসময় বেত। স্যারের চলার পথে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড দেখলেই স্যার ঐ বিশাল বেত দিয়ে বাড়ি দিয়ে নির্বিকার ভাবে চলে যেতো। যে মারটা খেতো সেও একবার চোখ বুলিয়ে দেখতো মারটা কে দিয়েছে ? পিটি স্যার মেরেছে দেখলে কোনোভাবে ঐ জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে দৌড় !!! দাড়াঁনো যাবে না, দাঁড়ালে আরও খেতে হবে !! স্যার থাকতেন আমাদের স্কুলের ফুটবল টুর্নামেন্টের রেফারী। বিশাল একটা ভূরী নিয়ে স্যারের দৌঁড়াদৌড়ি ছিলো দেখার মতো। দু:খের ব্যাপার হলো স্যারের হাতে কার্ড থাকার পরও আমরা ফাউল করলেই দৌড়ে এসে বেতের বাড়ি!!! এ নিয়ে আমরা হেডস্যারের কাছেও গিয়েছিলাম যে আমাদের লাল কার্ড দেখানো হোক !! স্যারও পিটি স্যারকে বুঝিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার, পিটি স্যারও বেশ কয়েকবার বলেছিলেন কার্ড ব্যবহার করবেন। কিন্তু কিসের কি ?? যাই হোক, পিটি স্যারের ছেলে বিপিন ও পড়তো আমাদের ক্লাশে এবং ঘটনাক্রমে পরীক্ষার হলে তার সিট পড়তো আমার পাশের টেবিলে। স্যারও খুব ভালো মতো জানতো আমি হেল্প না করলে তাঁর ছেলেরও পাস পসিবল না। তাই দোষ করেও স্যারের বাড়ি পড়তো না আমার গায়ে!! আমাদের ধারণা ছিলো স্যার মারার আগে দেখতো না কাকে মারা হচ্ছে কিন্তু আমি খুব ভালো মতোই জানতাম স্যার দেখতো না শুধু ভালো মতোই দেখতো!! আমিও স্যারের সামনে আর কোনো প্রকার ভয়টয় পেতাম না। সুবিধাভোগী কি জিনিষ ঐ শিখতেও যে বয়স লাগে না তাও তখনই শিখে গিয়েছিলাম :)




চলবে ................
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১২:০০
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×