[লিংক=যঃঃঢ়://িি.িংড়সবযিবৎবরহনষড়ম.হবঃ/ঢ়রঃঃুনড়ু13নষড়ম/ঢ়ড়ংঃ/23300]প্রথম পর্ব[/লিংক]
নীলার ডায়েরী থেকে
আমি নীলা। রফিক নামের এক ছেলেকে আমি আজ বিয়ে করলাম। আমি জানি না আমার এই বিয়ে কতদিন টিকবে। নাকি আগের মতো আমার স্বামী হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি আমার নষ্ট অথীতের কথা রফিককে বলতে। কিন্তু সে তা শুনতে চায়নি। ও যেন আমার প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা দু'জন যেন ক্রমেই মোহচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। মাত্র ৮ মাস ১২ দিন প্রেম করে ১৩ দিনের মাথায় বিয়ে করলাম। অংকের হিসাবে ১৩টাও তো আনলাকি!
রফিকের সঙ্গে আমার পরিচয়টা বেশ মজার। এক বৃষ্টির রাত। আমি দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায়। মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিচ্ছি। বৃষ্টির ছাট আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। এমন রোমান্টিক মূহুর্তে নিচে তাকিয়ে দেখি সাদা শার্ট পরা ফর্সা এক যুবক দৌড়ে আমাদের গেটের সানশেডে আশ্রয় নিল। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এই যুবকের ছুটে আসা দেখে আমার মধ্যে দুষ্টুমি খেলা করে। আমাদের বাড়ির বারান্দাটা এমন এক জায়গায় যেকান থেকে ওই লোকটিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। একটা সাদা কাগজের ভেতর পাথর পুরে ছুঁড়ে মারলাম। ভাগ্যক্রমে একেবারে ওই লোকটির সামনেই গিয়ে পড়লো কাগজটি। লোকটি আমার দিকে তাকালো। এরপর অবলীলায় কাগজটি হাতে নিয়ে পকেটে গুজলো। অনেকটা অবাক করার মতো লোকটি আর না দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে গেল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বোধ হয় লোকটির মাথায় লেগেছে। সারারাত এই ছোট্ট ঘটনাটা ভুলতে পরলামনা। অপরাধবোধে ভুগলাম।
এরপর থেকে বারান্দায় এলেই মনে মনে ওই লোকটিকে খুঁজতাম। ১৬ দিনের মাথায় আরেক বৃট্টর দিনে আবার লোকটি এলো। এবার আর সানশেডে দাঁড়িয়ে নয়। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকতে দেখেও আমি রাগ করলামনা। অন্য সময় এমনভাবে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে হয়তো খুব রাগ করতাম। কিন্তু সেদিন করলামনা। আমি ছাতা নিয়ে নিচে নামলাম। গিয়ে সেদিনের জন্য ক্ষমা চাইলাম। মনে মনে ভাবলাম, ইস পাথরটা লাগলে কি হতো?
লোকটি হাসলো, আমিও হাসলাম। ছাতাটি বাড়ির দারোয়ানকে দিয়ে দু'জন বৃষ্টিতে ভিজে পরিচয় বিনিময় করলাম। বৃষ্টিতে ভিজে দু'জনে হাঁটছি। আশে পাশের লোকজন বাঁকা দৃষ্টিতে আমাদের দেখছে। অনেকটা অস্বাভাবিক হলেও এভাবেই প্রেমে পড়েছি রফিকের। এরপর এলিফ্যান্ট রোডের কফি হাউসে ডেট করা। কখনো কার্জন হল চত্বরে। সবসময় রফিক আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তারপর সে বাসায় যেত। কখনো জানতে চাইতো না আমার পরিচয়, আমার অতীত। প্রতিদিন রফিক যে বাসায় আমাকে নামিয়ে দিত সে বাসাটি যে আমার নয়, সেও আগে তাকে বলা হয়নি। বলেছি বিয়ের অনেক পর অনেক মিথ্যে মিশিয়ে।
আমি গুলশানের বড় বাড়ির আসলে কেউ ছিলাম না। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানায়। বাবা-মার একমাত্র সন্তান আমি। অনেক সুখের সংসার ছিল আমাদের। এলাকার মধ্যে একমাত্র হিন্দুবাড়ি আমাদের। আমি সেই হিন্দু পরিবারের এক মেয়ে। বাবার কাছে শুনেছি আমার জন্মের সময়েও এলাকাজুড়ে আমাদের বংশের মামা চাচারাই এ গ্রামে থাকতো। কিন্তু সংখ্যা লঘুদের ওপর অত্যাচারে কেউই টিকতে পারেনি। একে একে সবাই পাড়ি জমায় ভারতে। থেকে যান শুধু বাবা। এলাকার সবচেয়ে বড় মুদি দোকানটা বাবার। প্রতিদিন অনেক টাকার কেনা বেচা। গ্রামে জায়গা জমির অভাব নেই। মফস্বলে খরচ কম বলে আমাদের জায়গা জমিও বাড়ে। এরপরর হঠাৎই এক রাত। স্থানীয় জঙ্গী বাহিনীর আক্রমন। বাবা-মার মৃতু্য এবং একটি দুর্ঘটনা। আমি তখন কেবল এইচ এস সি পাশ করেছি। ওরা আমার ওপর .............। সেই রাতের কথা আর মনে করতে চাইনা। এরপর বাসে উঠে সোজা ঢাকায়। তখন আমি জানি না কোথায় থাকবো, কোথায় উঠবো। কারন ওই সময় আমার গ্রামে থাকার কোনো উপায় ছিলনা। একটা উপায় অবশ্য ছিল 'আত্দ্মহত্যা'। আমার মন সায় দেয়নি।
ঢাকায় এসে অনেকটা নাটকীয়ভাবে চাকরিটা পেয়ে যাই। একটি এনজিওর প্রধান কার্যালয়ে রিসেপশনিষ্ট। সেখান থেকে কয়েকবার চকরী বদল। থাকলাম কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে। অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হলো। নিজেই নিজের জীবনকে নিয়ে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠলাম। এক পর্যায়ে এক শিল্পপতির পিএস হিসাবে চাকরী জুটলো। অনেক সৌভাগ্যে তার বাসায় আশ্রয়ও জুটলো। লোকটি ব্যক্তিজীবনে খুবই দুঃখী। দুই ছেলে বিবাহিত, কিন্তু দু'জনই চরম উশৃংখল। আমাকে অনেকটা মেয়ে হিসাবে দত্তক নিলেন। গুলশানের অভিজাত বাড়ির কন্যা হিসাবে আমার একটা মেকি পরিচয় জুটল। ভুলে গেলাম অতীত। এমনকি নিজের ধর্মকেও। সঙ্গে নামটিও। ছিলাম নীলিমা রায়, হয়ে গেলাম নীলা। কিন্তু এ সুখের জন্য এ বাড়িতেও আমাকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হলো সেই লম্পট বড় ছেলেটির হাতেই। নকল বাবা জানতে পেরে ছেলেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন অবশ্য। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। এরপর আমার বিয়েও হলো এক অভিজাত পরিবারে। টিকল মাত্র ৬ দিন। আমাকে নকল বাবার কাছে রেখে স্বামী চলে গেল আমেরিকা। ডিভোর্স লেটার-টেটার কিছুনা। আমার অপরাধ আমি এ বাড়ির দত্তক মেয়ে। আমার নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় নেই।
রফিক সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে গুলশানের ঘটনা জানে। অবশ্য আমি তাকে যেটুকু জানিয়েছি। তাতে রফিক যে উদার যুবকের মতো আমাকে মেনে নেবে তা আমি আগে থেকেই বুঝেছিলাম। কিন্তু যদি জেনে যায় আমার সিরাজ গঞ্জের ওই নষ্ট অতীত। যার প্রমানতো পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত আছে। সে কী লজ্জার কথা! খোদা আমার মৃত্যু দাও।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



