somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মার্ট ফোন, স্মার্ট জেনারেশন আর আনস্মার্ট(!) মা। (আমার ছোট ব্লগ)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার মেয়ে বলে আমি নাকি সেকেলে। এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা আমি কিছুই বুঝিনা।

আসলেই আমি বুঝি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, ওরাও কি বুঝে?

সেদিন আমার কাছে আবদার করল, ওকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিতে হবে। এ যুগের মেয়ে বলে কথা! আবদার যখন করেছে রাখতেই হবে।

পরদিনই মেয়েকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম। ওমা! ও যে মোবাইল গুলোতে হাত দেয় সবগুলোই পঁচিশ-ত্রিশ হাজার টাকার ওপরে! আমি আমার হাতের মোবাইলের দিকে তাকাই, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় পাঁচ বছর আগে কেনা। দিব্যি এখনো কাজ করে যাচ্ছে। আসলেই আমি সেকেলে মা। এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা আমি কিছুই বুঝিনা।

এতগুলো টাকা আমার কাছে ছিল না। তাই কয়েকদিন পর কিনে দিব বলে কোন মতে ওকে টেনে হিঁচড়ে মার্কেট থেকে বের করে নিয়ে আসলাম।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই। আসলে কি আছে ঐ মোবাইলে? মেয়েকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করি। সাথে সাথে বুঝিয়ে দেয় আসলেই আমি সেকেলে মা। এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা আমি কিছুই বুঝিনা।

তারপরও আমি জিজ্ঞেস করি ঐ মোবাইলে এমন কি আছে, যেটা আমার এই মোবাইলে নেই? “ওফ্‌ও মা, ঐ মোবাইলে কত্ত গেমস্‌ খেলা যায় জানো তুমি? তোমার মোবাইলে কি ঐসব গেমস্‌ খেলা যাবে? আসলে না মা! তোমাকে নিয়ে কিছুতেই পারি না”।

হুম, বুঝে যাই আমি। কে বলে আমি আনস্মার্ট মা? এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা কিছুই বুঝিনা?

পরদিনই মার্কেটে চলে যাই আমি, একা একা। ওকে বিশাল একটা সারপ্রাইজ দিব ঠিক করি। আমি নাকি সেকেলে মা? আনস্মার্ট!

দোকানীকে বলে একগাদা গেমসের সিডি কিনি। সবই লেটেস্ট। ওর বাবার পিসি তে বসে সবগুলো গেমস্‌ই খেলতে পারবে। কে বলে আমি আনস্মার্ট মা? আসার সময় দোকানীকে বলে আসি, “কোন গেমস্‌ না চললে ফেরৎ দেবো কিন্তু”।

মেয়ে আমার গেমসের সিডি গুলো দেখে তিন হাত সাইজের চিৎকার দেয়। “ওফ্‌ও মা! কে তোমাকে গেমসের সিডি কিনতে বলেছে”?

-কেন! তুইই না বললি ঐ মোবাইলে গেমস্‌ খেলা যায়? তাই তো আমি তোর জন্যে গেমস্‌ গুলো কিনে আনলাম। আমার কি দোষ? আর অত্তটুকুন স্ক্রীণের চেয়ে পিসির মনিটর কত বড় না?

-দরকার নাই আমার গেমস্‌ খেলার, আমি গান শুনব। তোমার ঐ গেমসের সিডি দিয়ে গান শোনা যাবে? বল গান শোনা যাবে? কেন যে মা এত পাকনামো কর? আমি বুঝি না।

-ঠিক আছে। আমি ব্যবস্থা করছি, আপাতত গেমস গুলো খেল। কয়েকটা দিন সময় দে আমাকে।

-বললাম না, দরকার নাই আমার গেমস্‌ খেলার! গেমস্‌ তুমি খেল। আমি গান শুনব।

এ যুগের ছেলে-মেয়ে! কখন কি চায় কিছুই বুঝা যায় না। মাসটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি আমি। বেতন টা হাতে পাবার সাথে সাথেই মার্কেটে চলে যাই । দোকানদারকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে জেনুইন একটা আই-পড মিনি কিনি। সাথে বেশ কিছু গান আপলোড করে নেই। মেয়ে যদি এবার খুশী হয়!

এবারের চিৎকারটা হয় সাড়ে তিন হাত সাইজের। “কে বলেছে মা তোমাকে এসব কিনে আনতে? কেন? যে জিনিসটা তোমার নাই, সে জিনিসটা খাটাও কেন”?

“কি নাই আমার?”-ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করি আমি।

“কি আবার? মাথা। তুমি বুঝ না?”

আমি আসলেই বুঝিনা, আনমনে হাত চলে যায় ঘাড়ের ওপর গোলাকার বস্তুটির দিকে। নাহ্‌, আছে। জিনিসটার অস্তিত্ব অনুভব করি আমি। আসলেই আমি বোধ হয় সেকেলে, এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা আমি কিছুই বুঝিনা।

“তাহলে তুই চাস কি”? এতক্ষণে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাংতে শুরু করেছে। কত্তগুলি টাকা!

-কেন তুমি জাননা কি চাই? একটা মোবাইল ফোন চাই।

-ঠিক আছে আমারটা নিয়ে নে।

-আরে বাবা ওটাতো স্মার্ট ফোন না, তোমার মতই আনস্মার্ট। সেকেলে।

-কিন্তু স্মার্ট ফোন দিয়ে যা যা করা যায় সবই তো তোর আছে, তাহলে আবার স্মার্ট ফোন কেন?

-কি? সবই আছে মানে? ওটা দিয়ে ছবি তোলা যায়? নেট চালানো যায়? বল যায়?

-নেট চালানোর জন্য তো তোকে মোবাইল দেয়া যাবে না। নেট তো তোর বাবার পিসি দিয়েই চালাস, তাতে হয় না?

-আরে বাবা, আমি নেট চালানোর জন্য মোবাইল চাইছি তোমাকে কে বলল?

-তাহলে কিসের জন্য? ছবি তোলার জন্য?

-এই, এই, খবরদার। ছবি তোলার জন্য চাই নাই কিন্তু। দেখা যাবে কোত্থেকে আবার এক ক্যামেরা এনে হাজির করেছে।

-তাহলে কিসের জন্য চাইছিস? বল আমাকে?

-কেন আমার বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে হতে পারে না? সে জন্যে দরকার লাগতে পারে না?

-ঠিক আছে বাবা, কিন্তু সে জন্যে স্মার্ট ফোন কেন? কথা তো যে কোন মোবাইল দিয়েই বলা যায়। কেন? তুই ল্যান্ডফোন দিয়ে কথা বলিস না?

-মা, তুমি না? তোমাকে আমি আসলে কিছুই বুঝাতে পারব না।
এই বলে এক ঝটকায় আমার ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে দৌড়ে চলে যায়।

আমার মন টা খারাপ হয়ে যায়। আসলেই বোধহয় আমি সেকেলে মা। এ যুগের ছেলে-মেয়েদের আবেগ, মানসিকতা, চাহিদা আমি কিছুই বুঝিনা।

ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে যাই ওর ঘরে। দেখি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে। মনটা খারাপ হয়ে যায় আমার।

হঠাৎ আমার কি যেন হয়ে গেল, কোত্থেকে এক স্মার্ট মা এসে ভর করল আমার ওপর। আমি আর দেরী করলাম না। মেয়েটাকে আমার ল্যাপটপটা দিয়ে দিলাম। হুম, আমার সবচাইতে পছন্দের যে জিনিসটা, সে ল্যাপটপটা ওকে দিয়ে দিলাম। একেবারে স্বর্বস্বত্ত ত্যাগ করে।

প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নেয় মেয়েটা। “মা, সত্যি তোমার ল্যাপটপটা দিয়ে দিচ্ছ আমাকে”? বিশ্বাস হতে চায় না ওর।

-কেন? কোন সন্দেহ আছে?

-না, মা। থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু। ইউ আর গ্রেট। ইউ আর সো স্মার্ট!

স্মার্ট মায়ের গর্বে গর্বিত আমি চলে আসি আমার ঘরে। দরজাটা লাগাই। এর পর ওর বাবার পিসি টা অন করে এই লেখাটা লিখতে বসে যাই।

এই মাত্র দরজার ওপাশ থেকে ওর সাড়ে পাঁচ হাত সাইজের চিৎকারটা ভেসে আসল –

“মা-আ, তোমার ল্যাপটপের ওয়াই-ফাই কানেকশন কই”?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×