যদিও আমি বিচারক নই, কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ঠতার কারনে একটি রায়ে যে ব্যাপারগুলো বিচার খেয়াল রাখে সে সম্পর্কে একটা ধারনা ছিলো। যাইহোক, আজ ২৯ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বাড়ি সংক্রান্ত মামলার আপীল শুনানী হবার পুর্বনির্ধারিত দিন ছিল। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে খালেদা জিয়াকে তার ৪০ বছরের আবাসন থেকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া ছিলো আরেকটি ঘৃন্য পদক্ষেপ। এবং এর অব্যবহিত ফল হিসেবে ঈদের ২ দিন আগে মোটামুটি সফল একটা হরতাল পালন করতে সক্ষম হয় বিরোধী দল। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার ভোটাভুটিতেও দেখা যায় জনগন এই প্রক্রিয়া ভালভাবে নেয়নি। তাই সর্বোচ্চ আদালতে বিরোধীদলের নেত্রীর আপীল আবেদন বিভিন্ন কারনেই জনগুরূত্বপূর্ণ হয়ে ঊঠে। এছাড়াও আজ আপীল আবেদনের মোদ্দা কথাগুলো নিম্নরূপঃ
১. ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বৈধভাবেই বাড়িটি লীজ দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার ঐ লীজ দান করায় কোনো আইনের ব্যতয় ঘটে নি।
২. বর্তমান সরকার দাবী করছে বাড়িটি ক-১ শ্রেণীর, যা লীজ দিতে পারে না সরকার। কিন্তু এই মর্মে তারা কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। কিন্তু আসলে বাড়িটি খ-৪ শ্রেণীর ভূমি। এরূপ আরো অনেক লীজ দেয়া রয়েছে।
৩. খালেদা জিয়াকে ঐ বাড়িটি লীজ দেয়ার সাথে যে শর্তগুলি দেয়া হয়েছে, তা তিনি কখনই ভঙ্গ করেন নি। কিন্তু সম্পূর্ন বেআইনীভাবে নতুন ৫টি কারন দেখিয়ে বরাদ্দ বাতিল করেছে বর্তমান সরকার।
৪. সরকারের দেয়া নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছে বাড়ি ছাড়তে কমপক্ষে ৩০ দিন সময় দেয়ার জন্য। খালেদা জিয়া প্রতি কোনো নির্দেশনা দেন নি বা সরকার/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে কোনো উচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি। গত ১৩ তারিখে যা করেছে, তা সম্পূর্ণ গায়ের জোরে বেআইনী কাজ।
৫. হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপীল করেছিলেন, যা সরকার পক্ষ এটেন্ড করেছে। এটা শুনানীর জন্য ২৯ নভেম্বর নির্ধারিত আছে। তাই সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন এ বিবদমান বিষয়ে সরকার আর কোনো একতরফা ব্যবস্থা নিতে পারে না। চীফ জাস্টিস যথার্থই বলেছেন, তার বিশ্বাস এই সময়ে খালেদা জিয়াকে বিরক্ত করা হবে না। কিন্তু সরকার তা না করে ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২ বারের বিরোধী দলীয় নেত্রীকে টেনে হিচড়ে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে।
৬. জমি সহ উক্ত বাড়ি যথাযথ মূল্য নির্ধারন পূর্বক খালেদা জিয়াকে রেজিষ্ট্রি দলিল সম্পাদন করে লীজ দেয়া হয় যা ১৮৭৭ সালের অ্যাক্ট এবং সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। সরকার চাইলেই কেবল একটি নোটিশ দিয়ে রেজিষ্ট্রি দলিল বাতিল করতে পারে না।
৭. এমতাবস্থায়, সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়ে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায় ও অবৈধ উপায়ে খালেদা জিয়াকে তার বৈধ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে।
কিন্তু খুব দূ;খজনক ভাবে হলেও সত্য- আপিল বিভাগের পূর্নাংগ বেঞ্চ এইসব যুক্তি এবং পাবলিক রি-একশন আমলে আনা দূরেই থাক, শুনানির আগেই তা খারিজ করে দেন। দেশের রাজনৈতিকভাবে গুরূত্বপূর্ন এবং স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে আপিল বিভাগের এইরকম এক-তরফা রায় দেশের জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবেনা এই ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। মূলত আপিল বিভাগের আজকের এই আদেশটি গত ১৪ই নভেম্বর বিরোধী দলীয় নেত্রীকে তার সেনানীবাসের বাসা থেকে যে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছিল তাকে বৈধতাই দান করল।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই সরকারের অনুগত বাহিনী হিসেবে বিরোধিদলের উপর খড়গহস্ত হয়ে ঊঠেছে যা পুর্ববর্তী সময়ের থেকেও অনেক বেশি ভয়াবহ। শেষ এবং সর্বোচ্চ আশ্রয় ছিলো দেশের সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু এখানেও বিচারকরা মূলত সরকারী স্বার্থই রক্ষা করছে। একথা মনে রাখা দরকার যে বিরোধি দল এই দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে যারা বিচারবিভাগের এইরকম একতরফা আচরনে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হবে। এবং বিরোধী দলের প্রতি এই অন্যায় আচরন যখন নিয়মিতভাবে হতে থাকবে তখন তার ফল দেশের জন্যে ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসবেনা। এক অন্যায়কে মোকাবিলা করার জন্যে আরেকধরনের অন্যায় আসবে দেশে। ছোট এবং এক ভাষাভাষির দেশে ২ অন্যায়ের যুদ্ধ আমাদের কখনোই শান্তিতে থাকতে দিবেনা এটাই সত্য।