পৌর নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারের কয়েকটি মতলব রয়েছেঃ
১. চট্টগ্রামের নির্বাচনের পরে সরকারের মধ্যে নির্বাচন ভীতির সঞ্চার হয়েছিলো। পৌরনির্বাচন দিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি রকম, সেটা মাপা।
২. দু’বছরে বিএনপিকে কতটুকু ধংস করা গেছে, সেটা নিরুপন করা।
৩. ১ম দিনের নির্বাচনের পরে ২য় দিনে কারচুপি করে নির্বাচন সরকারের পক্ষে এনে “সরকারী দলের জনপ্রিয়তা কমেনি” - এটা বোঝানো। বিএনপির দুর্গ হিসাবে পরিচিত বরিশাল বিভাগের ১৯টির মধ্যে ১৬টি কব্জা করেছে সরকারী দল, বিএনপি পেয়েছে মাত্র ১টি। ঠিক যে ভাবে “তোফায়েলীয় পদ্ধতি”তে ভোলায় শাওনকে জিতিয়ে আনা হয়েছিলো, একই ফর্মুলায় ১৬টি পৌরসভা করায়ত্ব করেছে সরকার। একটা সাফল্য বটে!
৪. আসলে, এবারের নির্বাচন নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য অত্যন্ত সুদুর প্রসারী। তাহলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ক্ষেত্র তৈরী করা। এ নির্বাচনের পরেই বিভিন্ন মহল থেকে আওয়াজ তোলা হবে- বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ। এটা দিয়েই জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির দরকার নাই। জনগনেকে ধোকা দিয়ে এবং বিএনপিকে ট্রাপে ফেলে কাজ হাসিল করাই মূখ্য উদ্দেশ্য। ১৯৯১ সালে ‘রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা বদলে সংসদীয় পদ্ধতি চালূ’ এবং ১৯৯৬ সালে ‘তত্তাবধায়ক পদ্ধতি প্রবর্তন’- দুটোর জন্যই আ’লীগ আন্দোলন করেছিলো। কিন্তু ট্রাপে ফেলে বিএনপিকে দিয়েই সে কাজগুলো করিয়ে নেয়। এবারকার ঘটনাও সেদিকে গড়াতে পারে!
আগামী ১৭ ও ১৯ তারিখে সরকার সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচন দখলের চেষ্টা করবে- এতে কোনো সন্দেহ নাই। এসব ষড়যন্ত্র কিভাবে মোকাবেলা করা হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
জনগন পরিবর্তনের প্রস্তুত, বিএনপি কি তৈরী?
শাসক দলে উৎকন্ঠা। কিন্তু কেনো?
কারন অনেক-
১. এবারের পৌর নির্বাচনে অকল্পনীয় ঘটনা ঘটেছে নড়াইল সদরে। ১৯৭২ সাল থেকে এই পৌরসভাটি শাসন করছে আওয়ামীলীগ। শেখ হাসিনাও এখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নড়াইলের ভোট-চিত্র পাল্টে গেছে। নড়াইলের দু’টি পৌরসভার নির্বাচনেই আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। বিজয় চলে যায় বিএনপির ঘরে।
২. যশোরের সব এমপি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের। কিন্ত ৭টি পৌরসভার মধ্যে ছয়াটিতেই বিজয়ী হয়েছে বিএনপি।
৩. সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এলাকা কাজীপুর পৌরসভায়ও বিএনপি জয়ী। সিরাজগঞ্জের ৫টির মধ্যে ৩টি পেয়েছে বিএনপি, ১টি আওয়ামীলীগ, ১টিতে জামায়াত প্রার্থী জয়ী হয়েছে। পাবনায় ৭টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ৩টি, আওয়ামীলীগ ৩টি।
৪. লালমনিরহাটের ৩টি পৌরসভায়ই আওয়ামীলীগ হেরেছে। ২টিতে বিএনপি প্রার্থী, ১টি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়। রংপুর বিভাগেও বিএনপি ভালো করেছে, আর জাতীয় পার্টির ঘাটিতে এরশাদের দল পেয়েছে কেবল একটি।
৫. নাটোরের ছয় পৌরসভার মধ্যে ৫টিতেই বিজয়ী হয়েছে বিএনপি প্রার্থীরা। ধারনা করা হয়, বরাইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই নাটোরবাসী ভোটের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দিয়েছেন।
৬. রাজশাহী-রংপুর বিভাগে ৭২টি আসনের মধ্যে ৪দলীয় জোট পেয়েছে ৩৯টি, মহাজোট পেয়েছে ২৫টি। অথচ গত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের ৭২টি আসনের মধ্যে মহাজোট জিতেছিলো ৬২টি।
৭. খুলনা বিভাগে ৩০টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ১৬ টি, আর আ’লীগ ৮টি। বরিশাল বিভাগে ১৯টি পৌরসভার মধ্যে ১টি পায় বিএনপি, বাকীগুলো সরকার দল ও সতন্ত্র প্রার্থীর। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে সরকারী দলের বিরুদ্ধে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
৮. এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া ১২১ পৌরসভার মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ৫৮, আ’লীগ-জাপা ৫৩
মূল পোস্ট এখানে