somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির বিবেক ড. জাফর ইকবাল আজ এত নিশ্চুপ কেন?

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাওসার ভাই যেদিন ঢাকা থেকে সুন্দর একটা প্যাকেটে ‘হাত কাটা রবিন’ পাঠালেন, তখন আমি ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। ওটা পেয়েছিলাম বাই পোস্টে, তিরানব্বুই বা চুরানব্বুইয়ে। ড. জাফর ইকবালের সাথে আমার পরিচয় তখন থেকে। আমার মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে এরপর আমি হাতে পেলাম দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, দুষ্টু ছেলের দল, টুকুনজিল, টি রেক্সের সন্ধানে, জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়, বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার, আরো পরে এসে পড়লাম কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ, নিঃসঙ্গ গ্রহচারী, পৃ, ওমিক্রমনিক রুপান্তর, অবনীল, যারা বায়োবট এবং এই মুহুর্তে নাম মনে না পড়া আরো অনেক বই।

এই বইগুলোকে ভালোবাসেনি এমন কিশোর কিশোরীর সংখ্যা আমার প্রজন্মে খুবই কম হবে বলেই আমার ধারণা।

বই পড়ার নেশা বরাবরই ছিলো। বই পড়ার ক্ষেত্রে ওই বয়সে ভালোলাগার বাইরে আর কোন বিষয় বিবেচ্য থাকতো না। জাফর ইকবালের বইও গিলে গেছি গোগ্রাসে। তারপর বয়স বাড়তে থাকে, বই পড়ার ক্ষেত্রে কিছু চিন্তার, কিছু পছন্দের বিষয়ও চলে আসে স্বাভাবিকভাবেই। আর এ দিকে ড. জাফর ইকবালও তখন তাঁর ট্রেডমার্ক শিশু সাহিত্য বা সায়েন্স ফিকশন থেকে বের হয়ে জাতির বিবেক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার লক্ষে লম্ফ ঝম্প শুরু করে দিয়েছেন। হয়তো সাহিত্যকর্ম দিয়ে অগ্রজের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হওয়াতেই তিনি লক্ষ্য বদলে ফেললেন!

এবং একদা তিনি জাতির বিবেক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন ঠিকই, কিন্তু আমরা হারিয়ে ফেললাম কৈশোরের সেই প্রিয় লেখককে। উনার লেখায় এখন স্বতঃস্ফূর্ততার পরিবর্তে সব কিছুতেই কেমন যেন আরোপিত একটা ছায়া এসে যায়। আগাগোড়া ধর্মীয় অনুশাসনে বেড়ে ওঠা মানুষ আমি। তাই ধর্মাচারণে অভ্যস্ত ব্যক্তিই যখন ড. জাফর ইকবালের গল্পে বারে বারে খল চরিত্রে উপস্থিত হতে লাগলো, সে গল্পও তখন ক্লীশে হয়ে গেলো। আমিও আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।

তা, আমার মত দু’ একজন অধম পাঠক কমলেও উনার কিছু আসে যায় না। এই দেশে উনি এখন নতুন ধর্মগুরু। অসংখ্য ডিসাইপলস উনার রয়েছে। তারা জাফর ইকবালের বিপক্ষে ন্যূনতম বিরুদ্ধকথা শুনতেও প্রস্তুত নয়। এই ব্লগেই প্রথম দিকে আলেকজান্ডার ডেনড্রাইট নামে এক ব্লগার জাফর ইকবালের বিপক্ষে এক পোস্ট দিয়ে সেই সময়েই রেকর্ড পরিমাণ মাইনাস পেয়ে গিনেজ বুকে নাম উঠিয়ে ফেলেছিলেন।

এ কারণে ড. জাফর ইকবাল নিয়ে কিছু লেখাটা একটা ভয়ের বিষয়। কিন্তু তবুও লিখতে হবে, যেহেতু উনি জাতির বিবেক। দেশের ক্রান্তিকালে সবসময় বুক চিতিয়ে কলম ধরেছেন। উনার কলম তখন হয়ে উঠেছে ধারালো তলোয়ার। যদিও সেই তলোয়ার কখনো কোনভাবেই এই সরকারের বিপক্ষে যায় এমন কিছুই করেনি।

না ভুল বললাম, যখন এই সরকার প্রথম টার্মে পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে সময় একঘন্টা এগিয়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকার শ্রাদ্ধ করেছিল, ড. জাফর ইকবাল তখন বিজ্ঞানের দোহায় দিয়ে খুব কষে গাল দিয়েছিলেন সরকারকে। তবে সে গালও ছিল খুব পরিশীলিত। যেমনটা উনি এককালে প্রথম আলোতে পরিশীলিত সাদাসিধে কথায় ইনিয়ে বিনিয়ে বিপক্ষকে ‘ডলা’ দিয়ে যেতেন।



জাতির বিবেক হিসেবে উনিই লিখেছিলেন সেই অমর কাব্য ‘তোমরা যারা শিবির কর’। জামাত শিবিরের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একজন বুদ্ধিজীবি লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাবেন, এটাই স্বাভাবিক, এবং সেটাই তিনি করেছেন। অস্বাভাবিকতাটা হলো, যখন একই মাত্রার বা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাত্রার ভয়াবহ সন্ত্রাস, জঙ্গীপনা করেও ছাত্রলীগ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেন না। কলম দিয়ে কিছুই বের হয় না। এক্ষেত্রেতো উনার মৌনতা গৌতম বুদ্ধকেও হার মানিয়েছে। প্রবাদ আছে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ

অতি মূল্যায়িত হয়েই হোক বা প্রকৃতি ‘শুন্যস্থান পছন্দ করে না’ সেই সূত্রে শুন্যস্থান পুরণের খাতিরেই হোক, কিশোর-যুব সমাজে ড. জাফর ইকবালের একটা অবস্থান আছে, সেটা আমি পছন্দ করি বা না করি। তাঁর বিভিন্ন ধরণের লেখা, বক্তব্যের মাধ্যমেই এই অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাই দেশের যুব সমাজের যে কোন দুর্যোগে মানুষ তাঁর ইতিবাচক ভূমিকা আশা করে।

তাছাড়া বুদ্ধিজীবির সংগা ও দায়িত্ব হিসেবে নোয়াম চামস্কির যে ভাষ্য আমরা তৌফিক জোয়ার্দারের পোস্টমারফত জানতে পেরেছি “যাদেরকে বুদ্ধিজীবি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তারা সমাজের একটি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী, কারণ, তা না হলে তারা বুদ্ধিজীবির তকমায় অভিষিক্ত হতেই পারতেন না। তাদের কিছু মাত্রার কর্তৃত্ব ও মর্যাদা রয়েছে, তা যথার্থ হোক বা না হোক। তো এ বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে তাদের উপর কিছু দায় দায়িত্বও বর্তায়। এগুলো তাদের ব্যাপারে মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্ম দেয়। যার বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা যত বেশি, তার দায় দায়িত্বও তত বেশি” সেই ভিত্তিতেও মেয়েদের হলে গিয়ে নর্তন কুর্দন করা ছাড়াও কিছু দায়িত্ব ড. জাফর ইকবালের উপর বর্তায়।

বর্তমানে দেশের যুবসমাজ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। নব্বুইয়ের গণআন্দোলনের পর নিকট অতীতে ছাত্র-যুবকদের মধ্যে এমন নিরংকুশ ঐক্য আর দেখা যায় নি। কিন্তু হতাশার কথা এই যে, এ রকম একটা প্রয়োজনীয় মুহুর্তে তিনি, জাতির বিবেক, ড. জাফর ইকবাল আশ্চর্যরকমভাবে নিশ্চুপ হয়ে রয়েছেন। এ পর্যন্ত কোটা সংস্কারের পক্ষে একটা কথাও তিনি বলেননি।

আমাদের বুদ্ধিজীবিদের পরাজয়টা এখানেই। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক বুদ্ধিজীবির ছাঁপমুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না কারো পক্ষেই, সে তিনি যতবড় বিবেক হিসেবেই নিজেকে দেখেন না কেন।

টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের টম মাঝে মধ্যে বাড়িওয়ালির কুত্তাটাকে ভয় দেখানোর জন্যে বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সাজসজ্জা নিয়ে নিজের আকৃতি বড় করে ফেলে। এভাবে করতে করতে যখন টম প্রায় সফল হয়ে যায়, নিজেকে বিশাল হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করে, ঠিক তখনই জেরির বুদ্ধিমত্তায় বিশাল খোলস থেকে বের হয়ে আসে সেই ক্ষুদ্রাকৃতির ধড়িবাঁজ বিড়ালটাই।

ডক্টর সাহেবের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটেছে। কিছু মৌলিক লেখার সাথে বিদেশী লেখার টুকলিফাইং করে জনপ্রিয় হওয়া, স্বর্গের দ্বাররক্ষকের চাকরি ফেলে এই পোড়া দেশ উদ্ধার করতে ছুটে আসা তার সাথে চেতনার ফেরি করতে করতে যখন উনি নিজের আকৃতির বিরাটত্ব বাংলার আকাশটা পুরো ঢেকে দিয়েছে বলে মনে করতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই কোটা সংস্কার আন্দোলন নামের জেরি এসে সেটাকে ফুটো করে দিচ্ছে। বিশাল এক আকৃতি নিয়েও তিনি আদতে সেই টমই রয়ে গেছেন। তাই একদম ডিসাইসিভ মোমেন্টে এসে মৌনব্রত পালন করছেন।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮
২৯টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×