somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতের বিকেলবেলা, ঢাকামুখী ট্রেন...

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহরে ইদানিং কুয়াশা পড়ে। বিকেলের রোদ মরে আসতে শুরু করলে দিগন্তের অনেক আগেই দৃষ্টিসীমা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। যদিও এই শহুরে ঝলমলে জীবনে তার ছাঁপ পড়েনা তবু 'স্বপ্নবাজ সৌরভ'র মত আমিও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। কাজের টেবিলে বসেই অনুভব করি হাফপ্যান্ট পড়ে গুলতি হাতে হলুদ পাখির পেছনে ছোটা আমার কৈশোরকে।

আমাদের কৈশোরবেলা একেবারেই ডিজিটাল ছিলো না, এমনকি অ্যানালগও নয়। আমাদের কৈশোর ছিলো একেবারে কাদামাটিতে মাখা, আম-সর্ষে-ধানের সোদা গন্ধে ভরপুর, দুর্বাঘাসের শিশিরে ভেজা। সে কৈশোরে আমরা অবাক চোখে দেখতাম রেললাইন ধরে সবুজ সোনালী রঙের লম্বা লম্বা ট্রেনের চলে যাওয়া। এক অদ্ভুত মাদকতা ছড়ানো সে ছবির রেশ থেকে যেতো বহু বহুক্ষণ। সম্ভবত ছিয়াশির দিকে সবুজ সোনালী রঙের ইন্টারসিটি ট্রেনগুলো এদেশে এসেছিলো। প্রেসিডেন্ট এরশাদের হাত ধরে। এর আগের ট্রেনগুলো ছিলো মরচেপড়া লাল রঙের মেটাল বডির। এখন যেগুলো ওয়াগন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আমার খুব ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে পড়ে, কোনো এক রোজার বিকেলে নাটোর স্টেশনে আমরা পরিবারশুদ্ধ বসে আছি। যশোর আসবো। অপেক্ষা করছি, ট্রেন আগে আসবে না সূর্য আগে ডুববে... সূর্য ডুবলেই নাটোর সুগার মিলের সেই বাতাস কাপানো সাইরেন আর সাইরেন মানেই ইফতার।

এ রকম এক শীতের বিকেলবেলা ট্রেনে করে নাটোর থেকে একেবারে চলে এসেছিলাম। ফেলে এসেছিলাম আমার প্রিয় শহর, মায়ার শহর নাটোরকে।

এরপর নরসিংদীতে থাকার সময়ে কৈশোরের সাথে কৌতুহলও যোগ হচ্ছিল পাল্লা দিয়ে। তখন চট্টগ্রাম বা সিলেট থেকে বিকেলের ঢাকামুখী ট্রেন আসার সময়ে পাঁচ পয়সা, দশ পয়সার কয়েন নিয়ে আমরা ছুটতাম রেললাইনে। ট্রেন আসার আগমুহূর্তে লাইনের উপর পেতে দিতাম ওগুলো। কেউ আমাদেরকে জ্ঞান দিয়েছিলো যে ট্রেনের চাকায় পিষ্ঠ হলে চুম্বকে পরিণত হয় পয়সাগুলো! কোনোদিনই হয়নি। তবুও উৎসাহে খামতি হতোনা আমাদের।

সে সময় ট্রেন ছিল বৈচিত্র্যময়। বিশ্ববিখ্যাত সব ম্যাজিশিয়ানের ম্যাজিক আর নানারকম মালিশের তেল থেকে শুরু করে হেন জিনিস ছিলোনা যা ট্রেনে পাওয়া যেতো না। ঠাস বুননের ভীড়ের মধ্যে ঘামের গন্ধ পেরিয়ে হকাররা সে সবের বিকিকিনি করতো বিরতিহীন। অদ্ভুত সব গল্পও জমতো সে ট্রেনে। স্টেশনে থেকে যাওয়া প্রিয়জনের বারবার চোখ মোছা আর চলে যাওয়া স্বজনের জানালা দিয়ে ফিরে ফিরে তাকানো অথবা পাশে বসা অপরিচিত যুবক বা যুবতির টুকটাক আলাপে জমে যাওয়া ভবিষ্যৎ স্বপ্নগুলো কদাচিৎ বাস্তবেও রুপ নিতো।

আবার ঝিকরগাছায় রেললাইন থাকলেও চলতোনা কোনো ট্রেন। সেই পোড়ো ট্রেনলাইন ধরে আমরা ক্লাসে যেতাম লাই ধরে। প্রতিযোগিতা করতাম লাইনের উপর কে কত বেশি সময় থাকতে পারে। কপোতাক্ষের উপর দিয়ে যাওয়া রেলসেতুর উপর থেকে দুরন্ত ছেলেরা নদিতে লাফ দিতো। গত শতকের শেষ দিকে সেই পোড়োলাইন আবার জেগে ওঠে খুলনা-যশোর-বেনাপোল কমিউটার ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে। প্রায়ই আমরা দলবেঁধে ওই ট্রেনে চড়ে যেতাম বেনাপোল পর্যন্ত। আগের ট্রেনটার পাশাপাশি ইদানিং ওই লাইনে ঢাকা-বেনাপোলের 'বেনাপোল এক্সপ্রেস' এবং আন্তদেশীয় ট্রেন 'বন্ধন এক্সপ্রেস' চলছে।

ক্লোজআপ ওয়ানের একটা গান শুনলাম, শীতের বিকেলবেলা, ঢাকামুখী ট্রেন..... শুনতে শুনতে কত কথা মনে পড়ে গেলো, যদিও বিস্তর ট্রেনযাত্রায় আমার পাশে কখনও কোনো অচেনা যুবতি এসে বসেনি। এমনকি যেবার চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে চড়েছিলাম, সেবারও না.. সিটই পেলাম না তখন!

তবুও ট্রেনগুলো দিনের পর দিন নতুন নতুন গল্প রেখে যায় আর সে গল্পগুলোই শীবপ্রসাদ মুখার্জী আর নন্দিতা রায়ের হাত ধরে আবার জীবনের অংশ হয়ে ওঠে প্রাক্তন মুভিতে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×