ইদানিং ব্লগে ঢুকলে কিছুটা হতাশা লাগে। সকাল আটটায় একটা লেখা দিলে সেটা রাত আটটা অব্দি প্রথম পাতায় থাকে! ব্লগে লগড ইন থাকে ১৭ জন ব্লগার। সংখ্যাটা মাঝে মধ্যে ৫৩ হয়, কিন্তু ৬০ পেরুতে সচারচর দেখি না। 'ভিজিটর' 'মোবাইল থেকে' মিলিয়ে মোট ২০০ ২৫০ জন অনলাইনে থাকে। ফেসবুকের এই যুগে এরকম অবস্থা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এ কারণে অনেকে ঘোষণা দিয়ে অনেকে না দিয়ে, নিরবে নিভৃতে ব্লগ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ব্লগার চাঁদগাজী একটা পোস্ট দিয়েছেন ‘ব্লগ ছেড়ে যাবেন না, ব্লগ ছাড়লে আপনাকে কেহ চিনবেন না’। কিন্তু অনেকেই মনে হচ্ছে এই ২০০ থেকে ২৫০ জনের কাছে পরিচিত হওয়ার জন্য এই দীর্ঘ সাধনা করতে প্রস্তুত নন। সুতরাং ব্লগার কমছে।
তবুও ব্লগার ইফতেখার চৌধুরী, রেজা ঘটক, নতুন, সোহানী, বিডি আইডল, সোনাবীজ, রাজীব নুর, সাহাদাত উদরাজী, শায়মা, বিদ্রোহী ভৃগু, পাগলা জগাই, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মানস চৌধুরী, বিএম বরকতউল্লাহ, মোতাব্বির কাগু, জুন, মাহিরাহি, আমি তুমি আমরা, রিংকু ১৯৭৭, রোকসানা লেইস, মারুফ রাশেদ এবং এরকম আরও অনেকের মত আমিও কি এক নেশায় এখানে লটকে গেলাম।
এঁরা সবাই ন্যূনতম দশবছর, কেউ এক যুগ, কেউ আবার চৌদ্দ বছর পার করে ফেলেছেন। বিশেষ কোনো প্রাপ্তির আশা ব্যতিরেকেই এঁদের কেউ নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন, কেউ মাঝে মধ্যে লিখছেন, কেউ একসময় প্রচুর লিখলেও এখন লিখছেন না, তবে লগড ইন থাকেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ‘রসট্রাম থেকে’তে বলেছেন- নেশা হলো প্রথম প্রেমের মত, ঘুরে ঘুরে মনে পড়ে। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন- একসময় আমি পল্টনের এক দোকান থেকে খইনি খেতাম। এখন পল্টনের দিকে গেলে নিজের অজান্তেই গাড়ি ওই খইনির দোকানের দিকে ঘুরে যায়....। (শব্দ-বাক্যে এদিক ওদিক হতে পারে, তবে মূল কথা এটাই)। আমরা যারা এই ব্লগের প্রথম দিকে যুক্ত হয়েছিলাম, আমার মনে হয়, আমাদের ক্ষেত্রে সায়ীদ স্যারের ওই সূত্র কাজ করে। এ জন্যই না লিখতে পারলেও ঢুঁ মেরে যাই ব্লগে। ইন্টারনেট অন করলেই অটোমেটিক্যালি সামহ্যোয়ারইনব্লগডটনেট টাইপ হতে থাকে অ্যাড্রেস বারে।
আমি সাধারণত পিসিতে ব্লগ দেখি। অফিসে বা বাসায় মোবাইলে দেখলে সেটাও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় থেকেই দেখি, সেলফোন ডাটা ব্যবহার করি না। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে বেশ কিছুদিন থাকতে হওয়ায় মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ব্লগে ঢুকতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। এখনকার সময়ে মানুষ নিজেই মোবাইল হয়ে গেছে। এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইলে এক্সেস জটিলতার সমাধান না হলে সামুর ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর না হওয়ার শংকাই শুধু বাড়তে থাকে। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন।
আমাদের দেশের অসংখ্যা গ্রাহক সমাদৃত ব্যবসায়িক পণ্য পরবর্তীতে বাজারে টিকে থাকতে পারেনি। নতুনদের চমকপ্রদ বাজারনীতি এবং উদ্ভাবনী পণ্যমানের ফলে গ্রাহকপ্রিয়তা সত্বেও টিকতে পারেনি ইকোনোর মত জনপ্রিয় কলমও। সামহ্যোয়ারইন ব্লগের পর বাংলাভাষায় যে সব ব্লগ এসেছে, তার কোনোটাই সেভাবে টিকতে পারেনি। আমার মনে হয় এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এই যে বারো বছর, চৌদ্দবছর পার করে দেয়া অগ্রজ ব্লগার এবং যাঁরা তাঁদের অনুসরণ করে যাচ্ছেন, তাঁদের। তাঁদের ভালোবাসা ব্লগকে শক্তি যুগিয়েছে। কিন্তু দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার ফেসবুকের বিষময় আহ্বান এড়িয়ে এই ২০০-২৫০ জনের সাথে পরিচিত থাকার আশায় কতজন সক্রিয় থেকে চৌদ্দবছর পার করতে পারবেন, এই বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিনকেদিন বড়ই হচ্ছে।
যদিও এই বিষয়ে মাঝে মাঝেই আলাপ হয়, নতুনত্ব কিছুই নেই। তবুও ওই যে প্রথম প্রেমের অনুভূতির কারণেই আবার লেখা।
ছবি কৃতজ্ঞতা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭