somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পৃথিবী তৃতীয় এবং সম্ভবত শেষ খন্ড

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যটা উঠতে দেখছে আরজু। প্রতিদিনই উঠে সূর্য। পুরনো একটা জিনিস। তারপরও প্রতিবারই নতুন লাগে তার কাছে। ওকে প্রকৃতিপ্রেমিক বললে ভুল হবেনা। কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে রেখে দিল। কম্পিউটারে হাতের কাজটা শেষ করে উঠে দাঁড়াল। তৈরি হতে হবে। আজ পৃথার সাথে দেখা করতে যাবে আরজু।
পৃথা আরজুর আদরের ছোট বোন। অনেক বড় হয়ে গেছে এখন পৃথা। সেই ছোট্ট আধোবোলের মেয়েটি নেই সে। পৃথা এখন মহানগরীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। থাকেও সেখানেই। ওকে এভাবে এত দূরে থাকতে দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল আরজুর। কিন্তু পাখি বড় হয়েছে। তাকে তো তার ইচ্ছেতে উড়তে দিতে হয়। শাওয়ার সেরে কাপড় পাল্টে বের হয়ে পড়ল। ফ্লাইট ধরতে হবে।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে মহানগরীর অপ্রিয় জ্যাম পার হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসে ঢুকল আরজু। পৃথার সাথে প্রথমে সেও চলে এসেছিল ঢাকায়। কিন্তু পুরনো সব স্মৃতি ওকে ঠিক স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। পৃথা নিজে ভালমতো চলতে পারছে বুঝার পরে ও ফিরে যায় চট্টগ্রামে।
ঘড়ির কাটায় ১২টা প্রায় বাজছে। পৃথার আসতে আরও আধ ঘণ্টা বাকি। বসে বসে রেস্টুরেন্টের মিউজিক এ হারাতে চাইল আরজু। আশেপাশের টেবিলে বেশ কিছু কাপল দেখা যাচ্ছে। ওদের দুষ্টুমিষ্টি প্রেম না চাইলেও দেখতে হচ্ছে আরজুকে। খারাপ লাগেনা এদের দুনিয়ার সব বাজে ব্যাপার থেকে দূরে থাকা ছোট একটু শান্তির রেশ দেখতে। নিজের বয়স ও তো বাড়ছে।
পৃথা প্রথম প্রথম বেশ জোর করত ওকে বিয়ে করার জন্য, কারও সাথে মেশার জন্য। কিন্তু কেউই ঠিক আরজুর সাথে মানিয়ে নিতে পারত না। আরজুও আর চেষ্টা করেনি। তারপরও স্মৃতির পাতায় কলেজের গেটে দারিয়ে থাকা সেই তরুণী অথবা বারান্দায় খোলা চুল নিয়ে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা নারীমূর্তি যে উঁকি দেয়না তা না। তবে এসব স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে শিখে গেছে আরজু। সময়ের খেল।
সময়ের কথা মনে আসতে ঘড়ির দিকে তাকাল আরজু। ভ্রু কুঁচকানর আগেই রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে ঢুকল পৃথা। স্মিত হেসে দাঁড়াল আরজু। ভ্রু সামান্য কুঁচকে গেল পৃথার পেছন পেছন একটা ছেলেকে ঢুকতে দেখে। কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল পৃথা। আর পৃথার মাথার ওপর দিয়ে ছেলেটার উপর কড়া নজর বুলাল আরজু। আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে পরিচয় করিয়ে দিল পৃথা,
-ভাইয়া ও আয়ান।
-হুম।
আয়ান নামক ছোকরা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল,
-হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছেন? আসতে সমস্যা হয়নি তো?
হাতটা ধরে কিছুটা জোর দিল আরজু। ছেলে পুতুল নাকি চেক করে নিল বোধহয়। ব্যাথা পেলেও হাসিটা ধরে রাখল ছোকরা। কুঁচকানো ভ্রু কিছুটা ঠিক করে হাসিটা ফিরিয়ে দিল আরজু। বসতে ইঙ্গিত করল ওদের। বসতে বসতে বলল,
-না সমস্যা হয়নি। তুমি কি পৃথার সাথে পড়ো?
-না ভাইয়া, আমি ওর দুই ইয়ার এর সিনিয়র। এবার ফাইনাল দেব।
-ভাল, পড়াশোনা কেমন?
হেসে ফেলে বলল পৃথা,
-ও পড়াশোনায় তেমন ভাল না ভাইয়া। পরিক্ষাগুলো কোনরকমে টপকে যায়। তবে ভীষণ ভাল গান গায়। এজন্য টিচাররা ওকে কখনও ফেইল করায় না।
-তাই নাকি? ভাল। তা লাঞ্চ হয়ে যাক?
-ওকে ভাইয়া।
মাথা ঝাঁকাল আয়ানও। ওয়েটারকে ডেকে যার যার পছন্দমত অর্ডার দিল ওরা। আয়ানের পছন্দের দিকে কড়া নজর রাখল আরজু। তবে রুচি ভালই দেখতে পেল। খাওয়া শেষ করে পৃথা ওয়াশরুমের দিকে গেল। আরজু হাসিটা ঝেড়ে ফেলে আয়ানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল,
-মেন্যুর পাশাপাশি আর কি বলেছে পৃথা আমার ব্যাপারে?
ঢোঁক গিলল আয়ান। আস্তে করে বলল,
-আপনি বেশি কথা পছন্দ করেন না। আর আমাকে আপনার খারাপ মনে হলে আমাকে শুধু পৃথা থেকে না, দুনিয়া থেকেই গায়েব করে দেবেন।
-ঠিকই বলেছে। এখন খোলস ঝেড়ে ফেল। আমি বাস্তবতার প্রয়োজনে অভিনয় করলেও অন্য কাউকে করতে দেখতে পছন্দ করিনা।
-জি ভাইয়া।
-খেতে তো পারনি ঠিকমত, আসলে কি পছন্দ তোমার? এখানে পাওয়া যাবে?
একগাল হাসি নিয়ে বলল আয়ান,
-না ভাইয়া, আরেক জায়গায় যেতে হবে।
পৃথা আসতেই বের হল ওরা। গাড়িতে বসে ওদের মধ্যে টুকটাক কথা হল। আয়ান ধরা পরে গেছে অভিনয়ে শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল পৃথা। গাড়িটা জেলখানার একটু আগে মোড়ে রাখল ড্রাইভার। আয়ান নেমে পথ দেখাল। ছোট একটা বিরিয়ানির দোকানে নিয়ে আসল ওদের। দোকানীর নাম রানামামা। কিছুক্ষণ আগে লাঞ্চ করে এলেও বিরিয়ানির লোভ সামলাতে পারল না কেউই। রাজকীয় এক ভোজ হয়ে গেল। বিল দিয়ে বের হওয়ার সময় মুচকি হাসল আরজু। এক সময় প্রচুর আসত পুরান ঢাকায় এই রানামামার তেহেরি খেতে। আজ অনেককাল পর আয়ানের সুবাদে আবার সেই পুরনো স্বাদ পেল। মানুষগুলো এতো বদলে যায় কিন্তু বিরিয়ানির স্বাদ বদলায় না, অনেকটা ওর মতই। ফ্লাইওভার না থাকায় রাস্তা পার হবার সময় কিছুটা রিস্ক নিয়েই পার হতে হল। শক্ত করে পৃথার হাত ধরে রাখল আরজু। অবাক হয়ে খেয়াল করল পৃথার আরেক হাত ধরে রেখেছে আয়ান।
গাড়িতে উঠে ওরা কোথায় যাবে জানতে চাইল আরজু। শাহবাগে নামিয়ে দিতে বলল পৃথা। রাস্তার পাশে নিজের পুরনো শহরটাকে দেখতে দেখতে এগুলো। ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে পৃথা। এক হাতে ধরে রাখল ওকে আরজু, যাতে রাস্তার ঝাঁকুনিতে পরে না যায়। শাহবাগের মোড় দেখা যেতে আয়ানকে বলল আরজু,
-আয়ান।
-জি ভাইয়া।
-আমার বোনটা যেন কোন কষ্ট না পায়, এ দাবী করব না। মানুষ যেহেতু হয়েছে কষ্ট পেতেই হবে। তবে কষ্টটা ভুলে ওকে হাসানোর জন্য তোমাকে পাশে থাকতেই হবে। ওকে এমন যত্নে আগলে রাখতে হবে। পারবে?
লাজুক হেসে বলল আয়ান,
-পারব ভাইয়া।
গাড়ি টিএসসি এর সামনে এসে থেমে গেল। পৃথার কপালে আরজু একটা চুমু একে দিতেই ঘুম ভাঙল ওর। আদুরে ভঙ্গিতে আড়মোড়া ভাঙল ও। গাড়ি থেকে নেমে আরজুর গালে আদর দিয়ে বিদেয় জানাল পৃথা। গাড়িতে উঠে এয়ারপোর্টে যেতে বলল ড্রাইভারকে আরজু। ওর পৃথিবীটার হাত শক্ত করে ধরে ব্যস্ত ট্র্যাফিকের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আয়ান। রিয়ারভিউ মিররে ওদের হারিয়ে যেতে দেখল মানুষের ভিড়ে। চোখের কোন থেকে পানিটা মুছে ফেলল আরজু। এগিয়ে চলল গাড়ি মহানগরীর শত গাড়ির ভিড়েও একা পথে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×