বসবাস করছি কলুষিত পরিবেশে। যে শহরে খোলা জায়গায় নিঃশ্বাস নিতে চিন্তা হয় সে শহর কে তো আর বিশুদ্ধ বলা যায় না। ফলে কামড় বসালেই আবার ফরমালিন এর আতঙ্ক। শাক-সবজি,মাছ এগুলোতেও চিন্তামুক্ত থাকার উপায় নেই আজ। তাই বলতে পারি কলুষিত সমাজে বাস করছি আমরা।
তবে লেখাটা পরিবেশ দূষন নিয়ে না,মস্তিষ্ক দূষন নিয়ে। যে দেশে নেট এ 'মা' লিখে সার্চ দিলে সার্চ হিষ্টোরি তে এসব আসে তাদের নিশ্চয় সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ বলা যায় না। যে দেশের মানুষ কোমলমতি শিশুদের পিটিয়ে মারে তাদেত সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ বলা যায় না। আমরা সবাই অসুস্থ। দূষন ঘটেছে আমাদের মস্তিস্কের অভ্যন্তরে। এই দূষিত মস্তিষ্ক নিয়ে আর যাই হোক একটা সুন্দর দেশ পাওয়া সম্ভব নয়। ১৯৫২ তে রফিক-জব্বার রা রক্তের বিনিময়ে একটি ভাষা এনেছিলেন-'বাংলা ভাষা'। ৭১ এ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে মিলেছিল স্বাধীনতা। ভবিষ্যত দেখার ক্ষমতা মানুষের থাকলে এর একটিও আদৌ হত কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমাদের বাংলা খুব সুন্দর একটি ভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম,জসীমউদ্দীন,মাইকেল মধুসূদন দত্ত রা লিখে গেছেন এই ভাষায়। কিন্তু প্রজন্মের কানে সারাদিন বাজে হিন্দী গান। হাই-ফাই ও লেভেল এর ছেলেমেয়েদের অতি আধুনিক বাংলিশ শুনে মাঝেমধ্যে ভিমড়ি খেতে হয়। ওপাশে স্টার প্লাস এ শ্বাশুড়ি-বৌ এর মহা ষড়যন্ত্র এর প্যাচ দেখে মাঝেমধ্যে আক্কেল-গুড্ডুম হয়ে যাই। হা করে এসব গিলতে থাকে কিছু মানুষকে দেখে মাথায় একটাই প্রশ্ন আসে আচ্চা এরা কি সুস্থ?? কখনো 'তারছেড়া' টাইটেল দিয়ে দেই। দূষন আসলে গ্রাস করছে এদের মস্তিষ্ক।
সমাজের অতি উচু স্তরের মানুষ যাদের বলা হয় 'রাজনীতিবিদ' তাদের কিছু কথা শুনলে এত আবেগাপ্লুত হই যে দেয়ালে মাথা কে চুমু খাওয়াতে ইচ্ছে হয়। ভাবি এমন মস্তিষ্কহীন নেতা যে জাতির সে জাতির পক্ষে কিভাবে ভালো কিছু করা সম্ভব। বিবেক বিসর্জন দিয়ে 'রাজার নীতিকে' 'চোরের নীতিতে রুপান্তরিত করা, সাধানণ মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া, ক্ষমতা আর সম্পদের লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া এসব মানুষের মস্তিষ্ক ফুলের মত পবিত্র কেও দাবি করতে পারবেন? সন্দেহাতীত এদের মস্তিষ্কও কলুষিত।
আর ছাত্রসমাজের নৈতিক অবক্ষয় মস্তিস্ক কলুষিত করার পিছনে দেশের কে দায়ী? সমাজব্যবস্থা,শিক্ষাব্যবস্থা আর অভিভাবক। সমাজে এ প্লাস অনেক কিন্তু স্বশিক্ষিত অনেক কম। যে দেশে ছাত্রদের শখ করে 'আউট বই'(তাদের ভাষায়) পড়াকে অপরাধ মনে করা হয় সেখানে সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ গড়ে উঠবে কিভাবে? শিক্ষার আড়ালে নৈতিক শিক্ষা গুলো আজ আকাশে উড়ে বেড়ায়। তাই তো ওড়না ফ্যান এ ঝুলিয়ে কত নিরীহ মেয়েকে প্রাণ দিতে হয়। কত সালমা-নাজিদার প্রাণ ঝড়ে যায় অকালে। গাজা-নিকোটিন এ পুড়ে এদের মস্তিষ্কও দূষিত,ভয়াবহ দূষিত।
সরকারী অফিসের ম্যানেজার সাদমান সাহেব, সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষক করিম সাহেব, পুলিশ ইন্সপেক্টর জাকির সাহেব। সাদমান সাহেব টাকার লোভে লোনের ফাইল আটকিয়ে বিধবা রহিমা বেগম কে ঘোরান মাসের পর মাস। করিম সাহেব ক্লাস এ হুমকি দেন প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নাম্বার দেবেন না। আবার তার কাছে না পড়লে ক্লাস এ ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ শোনা যায় তার নামে। জাকির সাহেবের ওদিকে ঘুষ না নিলে খাওয়া হজম হয় না। ক্ষমতাশীন মন্ত্রীর ভাগ্নের মহিলা কলেজের সামনে সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে টু শব্দ করেন না তিনি। কেন?? কারণ এদের মস্তিষ্ক গ্রাস করেছে লোভ। এদের মস্তিষ্ক কলুষিত।
ঢাকা শহরে ২ টি ফ্ল্যাট এর মালিক বকর সাহেব। সামান্য গ্লাস ভাঙায় মারধর করেন কাজের মেয়ে 'জরিনা' কে। গরম পানি ঢেলে দেন তার শরীরে। কেও এগিয়ে আসে না তার চিতকারে। কেও না...এদের মস্তিষ্ক নিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই।
সমাজে উপরেত স্তর থেকে শুরু করে ছাত্রসমাজ,চাকুরিজীবি,শিক্ষক,পুলিশ,বাড়ির গৃহিনী,ধনী,গরীব নির্বিশেষে সকলের মস্তিষ্ক আজ কলুষিত। এই দূষন ভয়াবহ। রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই। দূষনের হাতে সপে দেই তাই নিজেকেও। দূষিত তাই আমিও। বিষাক্ত তাই আমিও...
(এটি আমারপ্রথম ব্লগে লেখা। ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)