নির্জন পাথুরে দ্বীপ। পাথুরে সৈকতে মাথা কুটে মরছে সাগর। একবার, দুবার, সহস্রবার।
আকাশ ক্রমশ কমলা আভায় নিজেকে মাখিয়ে নিচ্ছে, আমার ক্লান্ত দু'চোখ দেখছে সন্ধ্যা হবার এই প্রস্তুতি।
আমার মাথার ভেতরে খান কয়েক গাংচিল উড়েঘুরে বেরুচ্ছে, তাদের খাদ্য অন্বেষণের তাগিদাটা যেন বুকে চেপে বসেছে আমার, নিজের ভেতরেও যেন কিসের একটা তাগিদা সৃষ্টি নিচ্ছে।
হঠাৎ করে সামনের কমলা সাগরটা চুপ মেরে গেল, যেন মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে, বলেছে দুষ্টুমি না করতে। তাই ঢেউয়েরা দুষ্টুমি থামিয়ে দিয়েছে।
পাথুরে সৈকত যেন মৃদু হেসে উঠলো, সাগরের হঠাৎ থেমে যাওয়ায় ভীষণ আনন্দ পাচ্ছে সে, কিন্তু ওপরের বিশাল আকাশটার মাঝে স্রেফ নির্লিপ্ততা দেখে ঠিকই বুঝে ফেললাম আমি...
আমার বোঝ ক্ষমতার সাথে তাল মিলিয়েই যেন হঠাৎ গর্জে উঠলো মুহূর্ত আগের শান্তশিষ্ট সাগরটা, পাহাড় সমান উঁচু দু'হাত বাড়িয়ে যেন মুছে দিতে চাইলো পাথুরে সৈকতের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মৃদু হাসিটুকু।
উঠে পড়লাম আমি। আমার মাথার ভেতরকার গাংচিলের দলটা মিলিয়ে গেছে তক্ষণে, আশ্রয় নেওয়ার জন্য চলে গেছে বোধহয় দূরে কোথাও। তাদের আশ্রয় নেওয়ার আকুলতাটা স্পর্শ করলো না আমাকে, গাংচিলগুলোই যেখানে মিলিয়ে গেছে, তাদের আকুলতা টের পাওয়াটা তখন সবের বাইরে।
উঠে পড়লাম আমি। প্রচন্ড বাতাসের ঝাপটা শরীর দিয়ে ঠেলে এগিয়ে চললাম, এগিয়ে চললাম খোলা সাগরের উন্মত্ততার দিকে। নির্লিপ্ত আকাশ যেন হাজারো বজ্রপাতের রাশভরি শব্দ করে আমাকে সতর্ক করে দেওয়ার চেষ্টা করলো, সামনে চূড়ান্ত বিপদ তার উন্মত্ত আক্রোশে পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ.. আমি এগিয়ে চললাম তার দিকে, বিশাল আকাশের সতর্কবাণী পায়ে মাড়িয়ে। আজ আমি মিশিয়ে দেবো, এই রঙিন পৃথিবীর প্রতি আমার সাদাকালো ক্রোধ আমি মিশিয়ে দেবো সাগরের উন্মত্ততার সঙ্গে, দু'য়ের ক্রোধ মিলেমিশে এক হয়ে আজ ধ্বংস করে দেবো পৃথিবীকে।
আমি এগিয়ে চলেছি, সাগরের উন্মত্ততায় আমার শরীর ভিজে যাচ্ছে, পায়ের কাছে মাথা কুটে মরছে আকাশের ভয়ার্ত চিৎকার- "সতর্কবাণী"
আজ ধ্বংস হবে পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭