আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭০ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের
মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি ইয়াসির আরাফাত এবং বাদশাহ হুসেইনের মধ্যে মধ্যস্থতা করে ফিলিস্তিন এবং জর্ডানের গৃহযুদ্ধ তথা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের অবসান ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু অতিথিরা ফিরে যেতে না যেতেই কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নাসের গণতান্ত্রিক শাসক ছিলেন না। তিনি ছিলেন পরবর্তীকালের আর দশজন আরব স্বৈরশাসকের মতোই কর্তৃত্ববাদী। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য তিনি ভিন্নমত দমন করেছিলেন কঠোর হাস্তে। বিরোধীদল মুসলিম ব্রাদার হুডের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করেছিলেন গণহারে, তাদের নেতাদেরকে নির্যাতন করে ঝুলিয়েছিলেন ফাঁসির কাষ্ঠে।
কিন্তু তার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং ইসরায়েলবিরোধী দৃঢ় অবস্থান তাকে এনে দিয়েছিল অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে মিশরের নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকল শ্রেণির জনগণ কাঁদতে কাঁদে রাস্তায় নেমে আসে। শতশত মানুষ রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে বিলাপ করে।
জানাজার পর তার লাশবহনকারী মিছিলে শামিল হয় আনুমানিক ৫০ লক্ষ মানুষ - ধর্মীয় সমাবেশের বাইরে এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনসমাগম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মিছিলে ইয়াসির আরাফাত এবং বাদশাহ হুসেইন প্রকাশ্যে উচ্চশব্দে কাঁদেন, গাদ্দাফী দুইবার মূর্ছা যান।
মিশরের বাইরে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নাসেরের মৃত্যুতে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল বের হয়। বৈরুতে শোক মিছিলের ভিড়ের বিশৃঙ্খলায় এক ডজনের মতো মানুষ মারা যায়। জেরুজালেমেও ৭৫ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি মিছিল বের করে। তারা শ্লোগান দেয়, নাসের কখনও মরবে না।
নাসেরের স্বপ্ন ছিল ইসরায়েলকে ধ্বংস করা, ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা এবং আরব বিশ্বে মার্কিনপন্থী রাজতন্ত্রগুলোর অবসান ঘটানো। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেখানেই তার স্বপ্নের অবসান হয়। তার পরে আরো কোনো নেতা এত বেশি দেশের এত বেশি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। উল্টো তারা ক্রমেই আমেরিকা এবং ইসরায়েলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
তার মৃত্যুর লেবাননের একটা পত্রিকা সঠিক শিরোনামটাই করেছিল: ১০ কোটি আরব আজ এতিম হয়ে গেছে।
©মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাজনীতি
কোর্টেসিঃ আলমগির কবির