somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা ট্যুরে যেতে চান! ছেলে মেয়ে সকলের উদ্দেশ্যেই-

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা থেকে ৪টা ছেলে আর ৪টা মেয়ে এসেছিলো হামহাম ঘুরতে। এদের মধ্যে পুরান ঢাকার একটা মেয়ে ছিলো। যারা হামহাম জলপ্রপাতে গেছেন বা এ সম্পর্কে জানেন —তারা নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে, হামহাম যেতে অনেকগুলো পাহাড়-জংগলসহ দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়।

যাই হোক, যাত্রা শুরুর আগেই পুরান ঢাকার মেয়েটা গাইডকে চুপিসারে বলে: “আমার সাথের ওরা আমার বন্ধু ঠিকই, কিন্তু আমাকে ওরা ভুলভাল বুঝ দিয়ে নিয়ে এসেছে। ওদের নিয়্যত ভালো না। আমি আগে বুঝিনি! কিন্তু এখানে আসার পরে ওদের আচরণ পাল্টে গেছে। ওরা ছেলেমেয়ে সবগুলোরই মতলব খারাপ! আপনি প্লিজ আমাকে হেল্প কইরেন।"

গাইড দেখলো মেয়েটা খুবই ভয় পাচ্ছে।
তাই সে মেয়েটাকে অভয় দিয়ে বললো, “কিছু হবে না। আমি আছি। দেখি, আপনার উপর কে হাত দেয়!"

গাইডের ভাষ্যমতে, “আমি জীবনে কখনো কাউকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সাথে করে দা নিই না। কারণ, লোকজন দা দেখলে ভয় পেয়ে যায়। ভাবে, বনের ভিতর নিয়ে গিয়ে ওদেরকেই আক্রমণ করবো আমি। কিন্তু সেদিন আমি দা নিলাম বাধ্য হয়েই। ওদেরকে বললাম, রাস্তায় ঝোপ-জংগল আর বাঁশ কাটার জন্য দা লাগবে।"

অনেকক্ষণ হাঁটার পরে ছেলেমেয়েগুলো একটু অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলো। একটু পরপর এরা মুল রাস্তা ছেড়ে আশেপাশের জংগলে চলে যেতে চায়। বলে, “একটু এদিকে গিয়ে দেখি না কি আছে! বেশিদুর যাবো না!", “আরে! ওদিকে তো রাস্তা আছে একটা। গিয়েই দেখি কি আছে ওদিকে!"
গাইড প্রতিবারই তাদেরকে নিরস্ত করে এই বলে যে, “আপনারা হামহাম যাওয়ার জন্য এসেছেন, ওদিকে যাবেন কেন? আমার সাথে চলেন। ট্র‍্যাক ছেড়ে যাবেন না।"

এক পর্যায়ে ঐ উশৃঙ্খল ছেলেমেয়েরা গাইডের কথাকে তোয়াক্কা না করে বলে, “আপনি এখানে দাঁড়ান। আমরা ওদিক থেকে ঘুরে আসছি একটু।"
ওরা ৭জন (৪ছেলে, ৩ মেয়ে) একসাথেই রাস্তা ছেড়ে যাওয়া শুরু করে আর অন্য মেয়েটাকেও তাদের সাথে যাওয়ার জন্য ডাকে। মেয়েটা যেতে না চাওয়ায় ওরা তাকে টেনে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। মেয়েটা তখন গাইডের পিছনে আশ্রয় নেয়। গাইডের ভাষায় গাইড “আমি তখন মেয়েটিকে আমার পিছনে আগলে রেখে রেগে গিয়ে হাতের দা দেখিয়ে ওদেরকে হুংকার বলি, আপনারা উনাকে নেয়ার জন্য এক পা এগোলে আমি আপনাদের সবাইকে এক নাগাড়ে কোপাবো। আপনারা কোথায় যাবেন, যান। উনাকে টানবেন না।"
সিলেটি কাঁচা ভাষায় আমাদেরকে বললো “হখল্টিরে এখলগে ফালাইয়া ছেদাইলিলাম নে....."

এরপর ছেলেমেয়েগুলো ভয় পেয়ে আর এগোয়নি।
গাইড বললো, “আমি মেয়েটাকে নিয়ে মাঝ রাস্তা থেকেই ফিরে আসলাম। মেয়েটা ভয়ে কাঁপছিলো। আমি মেয়েটাকে কোনো একটা হোটেলে উঠে রেস্ট নিতে বললাম। কিন্তু সে এতোটাই ভয় পেয়েছিলো যে, রাজি হচ্ছিলো না। পরে তাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি। আমার স্ত্রী তাকে খেতে দেয়। আমার বাসায় কিছুক্ষণ রেস্ট নেবার পর মেয়েটিকে নিয়ে বের হই।"

এভাবেই মেয়েটিকে বিদায় দেবার ব্যাপারে গাইড বললো: “তাকে সিএনজিতে তুলে দেয়ার পরেও সে একা যেতে ভয় পাচ্ছিলো। তাই আমি সিএনজিতেও তার পাশে ছিলাম। মেয়েটা কান্না করছিলো অনেক। তাকে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বাসে তুলে দেই আমি। তারপর তার মোবাইল নাম্বার নিয়ে বলি, ঢাকায় গিয়ে আমাকে যাতে ফোন দেয়। মেয়েটা খুবই খুশি হয়েছিলো। ঢাকায় গিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে অনেকবার।"

হামহাম ঘুরতে গিয়ে গাইডের মুখে ঘটনাটা শুনে খুব ভালো লেগেছে।

যারা মনে করেন, “পুরুষ মানেই রেপিস্ট/পটেনশিয়াল রেপিস্ট” ; যারা ভাবেন, “পৃথিবীতে পুরুষ না থাকলেই ভালো হতো, তাদের জন্যই পোস্টটা করা”।

সব পুরুষ ধর্ষক হয় না, অনেক পুরুষ রক্ষকও হয়।

শুধু ভার্সিটিতে পড়ে পাতার পর পাতা মুখস্থ করলেই নৈতিকতা শিখা যায় না। অনেক সময় অজপাড়াগাঁয়ে বাস করা লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিটাও নৈতিকতায় তথাকথিত শিক্ষিতদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।

(ছবিতে আমাদের সাথে গাইডকে দেখা যাচ্ছে। লোকটার নাম আছদ্দর। আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।)



©Mujahidul Islam
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:০২
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×