রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনার প্রেক্ষাপট এবং উপলক্ষ নিয়ে যারা অবগত আছেন তারা জানেন যে, এই গানটি লেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরুদ্ধে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ করা হলে বাংলার পিছিয়ে পড়া মানুষজন অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু হিন্দুরা তা মেনে নিতে পারেনি। ফলে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তারা সন্ত্রাসী আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিল অন্যতম। সে এ সময় অখন্ড ভারতের পক্ষে বেশ কিছু গান লিখে। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ তেমনি একটি গান। ১৯০৭ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক সমাবেশে এই গান প্রথম গাওয়া হয়। (উইকিপিডিয়া)
বঙ্গভঙ্গের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে প্রমাণিত হয় রবীন্দ্রনাথ এই বাংলাদেশের অস্তিত্বের চরম বিরোধী ছিল। সেই রবীন্দ্রনাথের গানটিকে বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উক্ত গানটিও যে কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ গানের আদলে রচিত হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দ মঠের ‘বন্দে মাতরম’ কবিতাটিতে মায়ের বন্দনা করা হয়েছে। এই মা বলতে বঙ্কিম কি বুঝাতে চেয়েছে পাঠকবৃন্দ লক্ষ্য করুন : পশ্চিমবঙ্গের গবেষক ড. অরবিন্দু পোদ্দারের মতে,
“... বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয়তাবাদকে একটা ধর্মীয় আধ্যাত্মিক আলোকে মন্ডিত করে। ভারতবর্ষ নামক যে একটি ভৌগোলিক সত্তা, তাকে সে মাতৃরূপে উপলব্ধি করতে চেয়েছে, এই মাতৃভাবনা স্বর্গীয় দেবী ভাবনার সমতুল্য। ‘বন্দে মাতরম’ সঙ্গীতে সে দেশ জননীকে দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে একাত্ম বলে বর্ণনা করেছে।... অন্য কথায়, হিন্দু রাজত্ব স্থাপন এবং তারই অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যৎ ভারতকে নির্মাণ করার আদর্শ সে (শ্রী অরবিন্দু) প্রচার করেছিল।
... হিন্দু ঐতিহ্য আশ্রিত সমস্ত লেখকের দৃষ্টিতেই... সৃজনধর্মী ও বুদ্ধিমার্গীয় উভয়তঃ... শ্রী কৃষ্ণই হলো একমাত্র পুরুষ যে বর্তমানের পরাধীন ও শত লাঞ্ছনায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ভারতবর্ষকে এক শক্তিশালী প্রগতিশীল দুর্জয় সত্তায় রূপান্তরিত করতে পারে। ... তাদের সুদূর বিশ্বাস কেবলমাত্র হিন্দু দার্শনিক চিন্তা, জীবদর্শন এবং এর সংশেষবাদী ধর্ম দ্বারাই অতীতে এই বিরাট ভূখন্ড ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐক্য অর্জিত ও সুরক্ষিত হয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও পুনরায় সেই আদর্শের শক্তিতেই নবভারতের আবির্ভাব ঘটবে।” (রবীন্দ্রনাথ/ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব : ১৯৮২ ‘উচ্চারণ’ কলিকাতা)
হিন্দু ধর্মে ‘মা’ বলতে কাকে বুঝায়, মায়ের কষ্টে সন্তানদের কি করা উচিত তা ১৯০৮ সালের ৩০ মে কলিকাতার যুগান্তর পত্রিকায় লেখা হয়েছিল :
“মা জননী পিপাসার্ত হয়ে নিজ সন্তানদেরকে জিজ্ঞেস করছে, একমাত্র কোন বস্তু তার পিপাসা নিবারণ করতে পারে? মানুষের রক্ত এবং ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মস্তক ব্যতীত অন্য কিছুই তাকে শান্ত করতে পারে না। অতএব, জননীর সন্তানদের উচিত মায়ের পূজা করা এবং তার ইপ্সিত বস্তু দিয়ে সন্তুষ্টি বিধান করা। এসব হাসিল করতে যদি নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে হয়, তবুও পশ্চাৎপদ হওয়া উচিত হবে না। যেদিন গ্রামে গ্রামে এমনিভাবে মায়ের পূজা করা হবে, সেদিনই ভারতবাসী স্বর্গীয় শক্তি ও আশীর্বাদে অভিষিক্ত হবে” (ইবনে রায়হান : বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৬-৭)।
কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম’-এর খন্ডিত ‘মা’কে অখ- করার জন্য প্রাণ, অর্থ, বিদ্যা, মন, সংসারকে পণ করে যে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুরু হয়, তার সাথেও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল। (বাংলার বিপ্লববাদ, শ্রী নলিনী কিশোর গুহ, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮)।
উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে হিন্দু ঐতিহ্যের ‘মা’ কিন্তু ভক্তের রক্ত ও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মস্তকে খুশি নয়। সে ভক্তদেরকে মানুষ (মুসলমান নয় কি?) হত্যা করে উক্ত মানুষের রক্ত ও মস্তকের বিনিময়ে স্বর্গীয় শক্তি ও আশীর্বাদের ওয়াদা করেছে।
এমতাবস্থায় বঙ্কিমের মা, রবি ঠাকুরের মা এবং হিন্দু দেবী কি এক ও অভিন্ন নয়? মনে রাখা প্রয়োজন, উক্ত সময়ে উপমহাদেশে, বিশেষত বাংলায় হিন্দুরা মা কালীর নিকট শপথ নিয়ে মুসলমান হত্যায় মেতে উঠেছিল। বাংলায় অসংখ্য গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠেছিল।(যেগুলো এখনো বিদ্যমান)
এ সময়েই যবন রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক রচিত হয়েছিল মাতৃ বন্দনার গান :
‘আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি
... .... ....
‘মা’ তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন
ও ‘মা’ আমি নয়ন জলে ভাসি।’
লক্ষণীয়, ১৯০৫-০৬ সালে হিন্দু বাংলা ছিল সোনার বাংলা, কিন্তু মুসলিম বাংলা বা পূর্ব বাংলা ছিল ভিক্ষুকের বাংলা, অবহেলিত, লাঞ্ছিত নিপীড়িত, ম্লেচ্ছ, যবন ও অস্পৃশ্যদের বাংলা। (নাউযুবিল্লাহ)
এমতাবস্থায় যবন রবীন্দ্রনাথ কোন বাংলাকে উদ্দেশ্য করে গানটি রচনা করেছিল তা সহজেই অনুমেয়।
অপরদিকে যুগান্তরে প্রকাশিত ‘মা’ ছিল পিপাসায় কাতর আর রবীন্দ্রনাথের ‘মা’- এর বদনখানি মলিন। মায়ের মলিন বদন দেখে যবন রবীন্দ্রনাথের চোখ অশ্রুসজল। বঙ্গভঙ্গ না হলে নিশ্চয়ই ম্লেচ্ছ রবি’র চোখ অশ্রুসজল হতো না, গানও রচনা করতো না।
‘স্বরাজ’ আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ’
‘স্বরাজ’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিল উগ্র হিন্দত্ববাদী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী দস্যু সর্দার বালগঙ্গাধর তিলক। যবন রবীন্দ্রনাথ উচ্চবর্ণের হিন্দুদেরকে মুসলমান ও নিন্মবর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। কুখ্যাত দস্যু সর্দার শিবাজীকে ভারতের জাতীয় বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠাকল্পে সে গণপতি উৎসব ও শিবাজী উৎসব প্রচলন করে। তার প্ররোচনায় ভারতের দিকে দিকে প্রধানত বাংলায় প্রচন্ড হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। তিলক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মাধ্যমে হিন্দুদেরকে সংগঠিত করে ভারতবর্ষে রামরাজত্ব স্থাপন করতে চেয়েছিল।
অস্পৃশ্য রবীন্দ্রনাথ শুরু থেকেই স্বরাজ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। শ্রী অমিতাভ চৌধুরী লিখেছে, ‘তাতে দেখতে পাচ্ছি তিলক তার দূত হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে ইউরোপে পাঠাতে চেয়েছিল এবং সে বাবদ রবীন্দ্রনাথকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল।’ অমিতাভ চৌধুরী আরও লিখেছে, ‘আগেই বলেছি তিলকের লক্ষ্য ছিল হিন্দু স্বরাজ। তিলকের সহিংস আন্দোলনে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৭ সালে তিলককে গ্রেফতার করে। তখন যবন রবীন্দ্র নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘তিলক’ মুক্তির জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে পুনেতে পাঠায়। (বিঃ দ্রঃ ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ : শ্রী অমিতাভ চৌধুরী, ১৪০০ সাল, পৃষ্ঠা ৬)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১২ রাত ১:২০