ইসলামী ব্যাংকের প্রবক্তারা আয়ের যে উৎসগুলো উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো :
১. অংশীদারি কারবার হতে অর্জিত মুনাফা;
২. ব্যয়-ই-সালাম ও ব্যয়-ই-মুয়াজ্জাল হতে প্রাপ্ত মুনাফা(অগ্রিম বিক্রিও নগদ বিক্রি);
৩. ইজারা বন্দোবস্ত হতে লব্ধ আয়;
৪. ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া(hire purchase);
৫. বিনিয়োগ নিলাম(investment auctioning);
৬. কমিশন ও সেবামূল্য(service charge);
৭. বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়;
৮. পন্য ফাইন্যান্সিং(commodity financing);
৯. নিজস্ব প্রকল্প হতে লব্ধ মুনাফা; [আল-নাজ্জার]
বলা হয় যে এসব আয়ের উৎসে সুদের কোনো ভূমিকা নেই । তাই কয়েকটি একটু বিস্তারিত বিচার করে দেখা যেতে পারে । যেমন, ইজারা বন্দোবস্ত থেকে লব্ধ আয় । অর্থনীতির সাধারণ ধারনা থেকে জানি ইজারা প্রথা আর যাই হোক, কোনো উৎপাদনশীল প্রকৃয়া নয় । যিনি ইজারা নেন, তিনি ইজারাভুক্ত সম্পদকে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতেও পারেন (যেমন জমি, দোকান ঘর ইত্যাদি), আবার নাও লাগাতে পারেন (যেমন বাড়ী,গাড়ী, গ্যারেজ ইত্যাদি) । কিন্তু যিনি ইজারা দেন তার আয় সম্পূর্ণই অনুৎপাদিত আয় । এই আয়ের সাথে বন্ধকী কারবার, এমনকি সুদের কারবারেরও তফাৎ খুব সামান্যই ।
একইভাবে ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া (hire purchase) আসলে কী ? নাজ্জার প্রমুখরা বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন , এই পদ্ধতিতে ব্যাংক নিজেই জমি কিনে বাড়ী তৈরী করে ভাড়াটে নিয়োগ করে, " ভাড়াটেগন যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর স্ব স্ব ভাড়াটে বাড়ূর মালিক হতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয় । এতে বাড়ি ও জমির মূল্য নির্ধারণ এবং একে সুবিধাজনক কিস্তিতে ভাগ করে ভাড়ার সাথে যুক্ত করে দেয়া হয় । ভাড়াটিয়াকে ভাড়ার সাথে উক্ত কিস্তিও পরিশোধ করতে হয় ।"
দু'টি প্রশ্ন এখানে উত্থাপন না করে পারা যায় না । প্রথমত : বাড়ীর দাম যদি কিস্তি হিসেবে শোধ করাই হয় তাহলে আবার আলাদা করে ব্যাংক ভাড়া নিচ্ছে কেন ? এটা কি প্রদত্ত ঋণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ সুদ না বলে অন্য ভাষায় অন্য শব্দের আড়ালে উসূল করা বোঝায় না ?
দ্বিতীয়ত : এই তাত্ত্বিকদের মতে কোনো বিনিয়িগের জন্য পূর্বনির্ধারিত আয় নাকি ইসলামী মতে জায়েজ হয় না । ড. এম.এ.মান্নানের মতে, " উৎপাদন ক্ষেত্রে পূঁজির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ইসলামে স্বীকৃত । জাতীয় আয়ে পূঁজির প্রাপ্য লব্ধ মুনাফার হারের উপর নির্ভরশীল । ইসলামী বিধানে এই প্রাপ্য পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হতে পারে না ।" [ ইসলামী অর্থনীতি: তত্ত্ব ও প্রয়োগ ,১৯৮৩ পৃ-১০২] তাহলে ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া (hire purchase) পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংকের পূর্ব নির্ধারিত চুক্তিবদ্ধ আয় কেমন করে হালাল হয় ?
একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় থকে এই ব্যাংক যে আয় করবে তাও কি উৎপাদন ও বিনিয়োগ ভিত্তিক মুনাফা নাকি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কমিশন এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদ আদায় ? এবং এই দ্বিবিধ আয় কি অন্য ব্যাংকের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত নয় ? আসলে ইসলামী ব্যাংক যখন ব্যাংক হিসেবে কাজ করে তখন তার ইসলামী সত্ত্বা লকারে ঢুকিয়ে রাখে, আর ব্যাংকের কাজ হয়ে গেলে কোরআন, হাদিস ও অন্যান্য ফিকাহ শাস্ত্র থেকে নানা আরবী, ফার্সী ও তুর্কী শব্দ প্রয়োগে তার ইসলামী সত্ত্বা হাজির করে ।
আগের লেখাটি এখানে :
ইসলামী ব্যাংকের কর্মনীতি : বিশেষত্বটা কোথায় ?