somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিয়াল কাহানি

২৪ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক শিয়াল আর এক শিয়ালিনী ছিল। তাদের তিনটি ছানা ছিল, কিন্ত থাকবার জায়গা ছিল না।

তারা ভাবলে, ‘ছানাগুলোকে এখন কোথায় রাখি? একটা গর্ত না হলে তো এরা বৃষ্টিতে ভিজে মারা যাবে।’ তখন তারা অনেক খুঁজে একটা গর্ত বার করলে, কিন্ত গর্তের চারধারে দেখলে, খালি বাঘের পায়ের দাগ! তা দেখে শিয়ালিনী বললে, ‘ওগো এটা যে বাঘের গর্ত। এর ভিতরে কি করে থাকবে।?’

শিয়াল বলল, ‘এত খুঁজেও তো আর গর্ত পাওয়া গেল না। এখানেই থাকতে হবে।’

শিয়ালিনী বললে, ‘বাঘ যদি আসে, তখন কি হবে?’

শিয়াল বললে, ‘তখন তুমি খুব করে ছানাগুলির গায়ে চিমটি কাটবে। তাতে তারা চেঁচাবে, আর আমি জিজ্ঞেস করব-ওরা কাঁদছে কেন? তখন তুমি বলবে-‘ওরা বাঘ খেতে চায়।’

তা শুনে শিয়ালিনী বললে, ‘বুঝেছি। আচ্ছা, বেশ!’ বলেই সে খুব খুশি হয়ে গর্তের ভিতরে ঢুকল। তখন থেকে তারা সেই গর্তের ভিতরেই থাকে।

এমনি করে দিন কতক যায়, শেষে একদিন তারা দেখলে যে, ঐ বাঘ আসছে। অমনি শিয়ালিনী তার ছানাগুলোকে ধরে খুব চিমটি কাটতে লাগল। তখন ছানাগুলি যে চেঁচাল, তা কি বলব!

শিয়াল তখন খুব মোটা আর বিশ্রী গলার সুর করে জিগগেস করলে, ‘খোকারা কাঁদছে কেন?’

শিয়ালিনী তেমনি বিশ্রী সুরে বললে, ‘ওরা বাঘ খেতে চায়, তাই কাঁদছে।’

বাঘ তার গর্তের দিকে আসছিল। এর মধ্যে ‘ওরা বাঘ খেতে চায়’ শুনে সে থমকে দাঁড়াল। সে ভাবলে, ‘বাবা! আমার গর্তের ভিতর না জানি ওগুলো কি ঢুকে রয়েছে। নিশ্চয়ই ভয়ানক রাক্ষস হবে, নইলে কি ওদের খোকারা বাঘ খেতে চায়!’

তখুনি শিয়াল বললে, ‘আরে বাঘ কোথায় পাব? যা ছিল, সবই তো ধরে এনে ওদের খাইয়েছি!’

তাতে শিয়ালিনী বললে, ‘তা বললে কি হবে? যেমন করে পার একটা ধরে আনো, নইলে খোকারা থামছে না।’ বলে সে ছানাগুলোকে আরো বেশী করে চিমটি কাটতে লাগল।

তখন শিয়াল বললে, ‘আচ্ছা, রোস রোস। ঐ যে একটা বাঘ আসছে। আমার ঝপাংটা দাও, এখুনি ওকে ভতাং করছি।’

ঝপাং বলেও কিচ্ছু নেই, ভতাং বলেও কিচ্ছু নেই-সবই শিয়ালের চালাকি। বাঘের কিন্ত সেই ঝপাং ও ভাতাং শুনেই প্রান উড়ে গেল। সে ভাবলে, ‘মাগো, এই বেলা পালাই, নইলে না জানি কি দিয়ে কি করবে এসে! বলে সে আর সেখানে একটুও দাঁড়াল না। শিয়াল চেয়ে দেখল যে, লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে ঝোপ জঙ্গল ডিঙ্গিয়ে ছুটে পালাচ্ছে! তখন শিয়াল আর শিয়ালিনী লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললে, যাক, ‘আপদ কেটে গেছে!’

বাঘ তখনো এমনি ছুটছে যে তেমন আর সে কখনো ছোটেনি।

একটা বানর গাছের উপর থেকে তাকে ছুটতে দেখে ভারি আশ্চর্য হয়ে ভাবলে, ‘তাই তো, বাঘ এমনি ছুটছে, এ তো সহজ কথা নয়! নিশ্চয় একটা ভয়ানক কিছু হয়েছে!’ এই ভেবে সে বাঘকে ডেকে জিগগেস করলে, ‘বাঘ ভাই, বাঘ ভাই, কি হয়েছে? তুমি যে অমন করে ছুটে পালাচ্ছ?’

বাঘ হাঁপাতে হাঁপাতে বললে, ‘সাধে কি পালাচ্ছি? নইলে এক্ষুনি আমাকে ধরে খেত!’

বানর বললে, ‘তোমাকে ধরে খায়, এমন কোনো জানোয়ারের কথা তো আমি জানিনে। ও কথা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!’

বাঘ বললে, ‘যদি সেখানে থাকতে বাপু, তবে দেখতুম! দূর থেকে অমনি করে সকলেই বলতে পারে!’

বানর বললে, ‘আমি যদি সেখানে থাকতুম, তবে তোমাকে বুঝিয়ে দিতুম যে সেখানে কিছু নেই। তুমি বোকা, তাই মিছামিছি অত ভয় পেয়েছ!’ এ কথায় বাঘের ভারি রাগ হল।

সে বললে, ‘বটে! আমি বোকা? আর তোমার বুছি ঢের বুদ্ধি! চল তো একবার সেখানে যাই!’

বানর বললে, ‘যাব বইকি, যদি আমাকে পিঠে করে নিয়ে যাও।’

বাঘ বললে, ‘তাই সই! আমার পিঠে বসেই চল।’ এই বলে সে বানরকে পিঠে করে আবার গর্তের দিকে ফিরে চলল।

শিয়াল আর শিয়ালিনী সবে ছানাদের শান্ত করে একটু বসেছে, আর অমনি দেখে, বানরকে পিঠে করে বাঘ আবার আসছে। তখন শিয়ালনী তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে আবার ছানাগুলোকে চিমটি কাটতে লাগল, ছানাগুলিও ভূতের মতো চ্যাঁচাতে শুরু করল।

তখন শিয়াল আবার সেই রকম সুর করে বললে, ‘আরে থামো, থামো! অত চেঁচিও না-অসুখ করবে।’ শিয়ালনী বললে, ‘আমি বলছি, যতক্ষণ না একটা বাঘ এনে ওদের খেতে দেবে, ততক্ষণ এরা কিছুতেই থামবে না।’

শিয়াল বললে, ‘আমি যে ওদের মামাকে বাঘ আনতে পাঠিয়েছি। এখুনি সে বাঘ নিয়ে আসবে, তোমরা থামো!’

তারপর একটু চুপ করেই সে আবার বললে, ‘ঐ,ঐ! ঐ যে তোদের বাঁদর মামা একটা বাঘ ধরে এনেছে! আর কাঁদিসনে; শিগগির ঝপাংটা দে, ভতাং করি!’

বানরের এতক্ষণ খুব সাহস ছিল। কিন্ত ঝপাং আর ভতাঙের কথা শুনে আর সে বসে থাকতে পারল না। সে এক লাফে একটা গাছে উঠে, দেখতে দেখতে কোথায় পালিয়ে গেল।

আর বাঘের কথা কি আর বলব! সে যে সেইখান থেকে ছুট দিলে, দুদিনের মধ্যে আর দাঁড়ালই না।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×