somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যানজটে জীবন অতিষ্ঠ ? এবার যানজট সমাধানের উপায় আবিষ্কার করল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( রুয়েট ) এর শিক্ষার্থী

০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ ( বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম )


আসসালামু আলাইকুম । আমার টিউনে সবাইকে স্বাগতম । ছোটবেলায় আমরা সবাই যানজটকে কেন্দ্র করে বাংলা ও ইংরেজীতে বিভিন্ন রচনা কিংবা প্যারাগ্রাফ পড়েছি । সেখানে আমরা যানজট সমস্যা সমাধানের নানান উপায়ের কথা বলেছি , কিন্তু আমাদের যানজট সমস্যা এখনো রয়ে গেছে । বিশেষ করে আমরা যারা রাজধানী কেন্দ্রিক শহর গুলোতে বসবাস করি তাদের জন্য যানজট এক ভয়ংকর দুর্যোগ । স্কুল ,কলেজ , অফিস - আদালত থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের নষ্ট হয়ে যায় কেবল এই যানজটের কারনে , সেই সাথে বিপুল সময়ের অপচয় তো আছেই । আশার কথা হল বাংলাদেশে এই প্রথম যানজট সমস্যা সমাধানের এক ডিজিটাল পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( রুয়েট ) এর তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক জনি আবিষ্কার করলেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলমান গাড়ির সংখ্যা নির্ণয় এবং ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। সড়কে যাতায়াতকে আরও সহজ ও সাবলীল, যানজট, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য এই প্রচেষ্টা তার।


ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম

এই যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টগুলো হল:

১। কোন নির্দিষ্ট রেঞ্জে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি থাকবে। নির্দিষ্ট সংখক গাড়ি এই রেঞ্জে থাকলে নতুন কোন গাড়ি আর ওই রেঞ্জে ঢুকতে পারবে না। যখন কোন গাড়ি ওই রেঞ্জ থেকে বের হয়ে যাবে আবার নতুন করে গাড়ি ঢুকতে পারবে। যেমন ধরা যাক নীলক্ষেত থেকে সিটি কলেজ এই জায়গায় সিস্টেম করা আছে ২০ টি গাড়ি থাকতে পারবে। তাহলে ২১তম কোন গাড়ি আর ঢুকতে পারবে না যতক্ষণ ওই রেঞ্জের ভিতর ২০টি গাড়িই থাকবে। যখন কোন গাড়ি আবার সিটি কলেজ দিয়ে ওই রেঞ্জের বাইরে চলে যাবে নতুন করে আবার গাড়ি ঢুকতে পারবে। যদি মেইন রোডের সাথে ছোট ছোট রাস্তা কানেক্ট থাকে যা দিয়ে গাড়ি বের অথবা ঢুকতে পারে, তবে সেটাও কাউন্ট করা হবে। পুরো পক্রিয়াই হবে সয়ংক্রিয়ভাবে। বহুমুখী রাস্তার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা ছাড়াই চলেবে এই ব্যবস্থা । এছাড়া ম্যানুয়ালিও সিস্টেম কন্ট্রোল করা যাবে।

২। ট্রাফিক পুলিশের আর দরকার হবে না এই ব্যবস্থায়। অনেকগুলো রাস্তার মধ্যে প্রত্যেকটি রাস্তায় নির্দিষ্ট দূরত্বে কতটি গাড়ি আছে তা দেখে গ্রিন, লাল সিগন্যাল দেবে ওই প্রযুক্তি, অর্থাৎ যে সাইডে গাড়ি বেশি থাকবে সেই সাইডের গাড়িকে আগে বের হতে দেবে। অন্য সাইডকে তখন ব্লক করে দেবে রেড সিগন্যাল দিয়ে। যদি কোন মোড়ে চারটি রাস্তা থাকে যার উত্তর দিকে যাওয়া রাস্তায় ১ কিলো মিটারের মধ্যে ১০টি, দক্ষিণ দিকে যাওয়া রাস্তায় ২০টি, পূর্ব দিকে ১৫ টি , পশ্চিম দিকে ১২ টি গাড়ি রয়েছে, তাহলে উত্তর দিকে প্রথমে গাড়ি যাবে, একই ভাবে গাড়ির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে গ্রিন, লাল সিগন্যাল দেবে প্রতিটি রাস্তায়। যদি কখনো দুই দিকে গাড়ি সমান হয়ে যায়, তাহলে প্রোগ্রাম করা থাকবে কোন সাইডের গাড়ি আগে পাস করবে।

৩। এছাড়া কন্ট্রোল রুমে বসে ট্রাফিক পুলিশ তার কাজ সম্পাদন করতে পারে ।

৪। প্রত্যেক ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল সিস্টেম রয়েছে।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেক বেশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে সিস্টেম ফেইলিউর না হয়। এছাড়া অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল দুই রকম সিস্টেমের সঙ্গে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও (মাস্টার কন্ট্রোল) রাখা হয়েছে।



উদ্ভাবক আব্দুর রাজ্জাক জনি দাবি করেন, এই সিস্টেমটি দেশের হাইওয়ে রাস্তা, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে স্থাপন করলে দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা ট্রাফিক জ্যাম এর অবসান করা সম্ভব। এছাড়া বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও কন্ট্রোল করা যাবে, ফলে সড়ক দূর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

তিনি জানান, আর্থিক সাহায্য পেলে আরও উন্নতি করা সম্ভব এবং নতুন নতুন ফিচার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। তিনি আরও জানান অনেক ভাল ভাল আইডিয়া আসলেও অার্থিক সাপোর্টের অভাবে করতে পারেন না। এছাড়া ল্যাবের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক প্রজেক্টের হার্ডওয়ার কানেকশন দিয়ে দেখা যায় না। ফলে শুধু সফটওয়ার সিমুলেসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পেলে তিনি দেশের জন্য আরও কাজ করতে চান। তিনি আরো বলেন, আমি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। আমাদের দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে কিভাবে টেকনিক্যালি সমাধান করা যায়। এটা আমার কাছে বড় একটা সমস্যা মনে হয়েছে তাই ট্রাফি কন্ট্রোল সিস্টেম নিয়ে কাজ করেছি।আমি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকা সময় গুলো বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোতে ল্যাবে গিয়ে কাজ করতাম । আর প্রোগ্রাম মূলত হলে বসে করতাম। এটা করতে প্রায় চার মাস সময় লেগেছে।



তড়িৎ ও ইলেক্ট্রিনিক কৌশলের প্রফেসর রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন “আমাদের মত দেশে এই রকম ডিভাইস খুব খুব দরকার ছিল, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা কমন একটা ঘটনা। ডিভাইসটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে ইন্সটল করা দরকার। এর ফলে আমাদের সড়ক যাতায়াত হবে অনেকাংশে নিরাপদ।আব্দুর রাজ্জাক জনি বলেন, কাজ করার উৎসাহ উদ্দীপনা পাই কারণ চারপাশের সবাই খুব সাপোর্ট দেয়। বাবা-মাকে খুশি করতে পারলেই সব চেয়ে বেশি আনন্দ পাই। বাবা মাকে সন্মানিত করতেই সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। বাবা-মাই আমার সব চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এছাড়া বন্ধুদের সাপোর্ট, তাদের কাছ থেকে সাইন্টিস্ট ডাক শুনে আরও বেশি উৎসাহ পাই। দেশের গুরুতপুর্ন জায়গাগুলোতে এই প্রযুক্তি চালু হলে সড়ক পথে চলাচল আরও সহজ হবে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতেও প্রস্তুত উদ্ভাবক।

আব্দুর রাজ্জাক জনি বলেন, এই দেশের মাটিতে জন্মে, দিন মজুর মানুষের শ্রমের টাকায় পড়াশুনা করেই এই দেশের জন্যই কাজ করতে চাই। এই দেশের প্রযুক্তিকে উন্নত করা, দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করতে চাই, সবার কাছে প্রযুক্তিকে পৌঁছে দিতে চাই, দেশের সাধারণ মানুষ ও যেন প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করতে পারে।

সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ ধরনের আবিষ্কার এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে । সেই সাথে এ ধরনের আবিষ্কার যেন দেশের সার্বিক উন্নয়নে ও সাধারন জনগণের সুবিধার্থে বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা হয় সেই দিকে আমদের সড়ক বিভাগ সহ অন্যান্য সংশ্লিট কর্তৃপক্ষ যথাযত ভুমিকা পালন করবেন বলে আশা করি ।

যেকোন প্রয়োজনে ফেসবুকে আমি মোঃ আশিকুর রহমান

আবিষ্কারকঃ Abdur Razzak Jony

সৌজন্যে : Ashiq99Channel
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×