বিভুতিভূষনের পথের প্যাঁচালি বা অপরাজিতার কথা কি ভুলে থাকা যায়?
সেইসাথে যদি সত্যজিতের মত ক্রিয়েটিভি ডিরেকশনে তার অংশবিশেষ আবার চলচিত্রের আঁচড়ে চিত্রায়িত করা থাকে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার না?এরা সবাই হাত ধরাধরি করে ট্র্যাডিশন বয়ে নিয়ে আসে।আমরা এপারে বসে ওসব চেখে চেখে বিনোদিত হই।এই আবার দেখেন না,সত্যজিতের অপুকে এত বছর পর টেনে নিয়ে আসলো কৌশিক গাঙ্গুলি।একেবারে হৈ চৈ ফেলে দিলেন।অপুর পাঁচালি নাম দিয়ে সেকালের অপুর একালের কথা বলতে চাইলেন।আমরা আবারো বসে গেলাম একাল সেকালে হিসেবে।অপুর পাঁচালিতে আমরা সত্যজিতদাকে খুঁজি। তার হাত ধরে আঠারো শতকের বিভূতিতে মূর্ছিত হই।কৌশিক গাঙ্গুলি বিখ্যাত অপুর ট্রিলজীর সাথে পথের পাঁচালীর অভিনয় করা সেই অভিনেতার জীবনের মিল ও ট্রাজেডির কথা বলতে চাইলেন।আমি এসব দেখি আর ভাবি আমাদের একজন মানুষের কথা।নির্বাসিতা মানবীর কথা।সেকথায় পরে আসছি।আগে অপুর পাঁচালির ক্যাচাল শেষ করি।এরকম ইউনিক আইডিয়া নিয়ে কেউ ভাবে না এই উপমহাদেশে। সিনেমাটায় তরুন অপুর চরিত্রে অভিনয় করেছে পরমব্রত আর বয়স্ক অপুর ভুমিকায় অরনেন্দু ব্যানার্জী। কলকাতার আটপৌরে বুড়োরা যেমন হয় তেমনই অরনেন্দুর সব কিছু। সিনেমাতে পরিচালক সত্যজিতের অপুর ট্রিলজীর যথেষ্ট সিন ব্যাবহার করেছেন মিলিয়ে মিলিয়ে। সংগীতও সেখান থেকে প্রচুর নেয়া। দারুন লাগে। কাহিনী বিন্যাস, মেকিং, চরিত্রের বিস্তৃতি সব কিছুই সত্যজিতের কাছাকাছি। সব্যসাচীর ছেলের অভিনয় অত্যন্ত যুতসই। তরুনরা যেমন ভাবে চিন্তা করে তেমন করেই সে কথা বলে একজন হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাবান চাইল্ড আর্টিস্ট কিন্তু বর্তমানে জীবনযুদ্ধে পরাজিতে এক মধ্যবিত্ত বুড়োর সাথে। আমরা সিনেমার বাইরের থিমটা দেখি, সেলুলয়েডে অপুর ট্রাজেডীর সাথে বাস্তবে অভিনয় অপুর ট্রাজেডি ভিন্ন সময়ের হলেও মিলে গেছে একই প্রান্তে। অপর্ণা দেবীর মৃত্যু, টেলিগ্রাম অথবা অপুর অভাব সবই যেন অভিনয় থেকে ধার করে রিয়েল লাইফে বসিয়ে দেওয়া।
আমরা গভীরে ভাবি।চশমার মোটা ফ্রেমের উপর দিয়ে প্রসংশার বুলি ঝাড়ি।কিন্তু শিখি কতটুকু?
এই লেখাটাকে আপনি মুভি রিভিউ ভাবলে ঠক খাবেন।আমি চাচ্ছি বিভূতি,সত্যজিত বা কৌশিকের ঘাড়ে চেপে আমাদের এক মানবীর কথা বলতে।তিনি নির্বাসিতা।হয়ত এরপর দুঃখিনীও।যিনি ১৯৭৩ সালে দেশ ছাড়েন।এরআগে ১৯৬১এর পুরুষ্কার বা হাসনাত আব্দুল হাইয়ের কলমে ৯৪,৯৫ বা নহন্যতে এন রাশেদ চৈধুরীর প্রামাণ্যচিত্রতে আসেন ৯৯তে।মাঝে একুশে পদকও পান।তবুও আলোচনার বাইরেই থাকতেন এই সফলতম ভাষ্করশিল্পী নভেরা আহমেদ।গত কয়েকদিন আগে এলেন।আমরা বেশ ঢং করে লিখলাম।বললাম।মায়াকান্না করলাম।হায়হুতাশের গাত্রদাহে ব্যস্ত ছিলেম দিন দুয়েক।এরপর আর কি!নভেরা আর কোনদিন আমাদের আলোচনায় আসবে না।আমরাও সেমিনারের বাইরে নাম উচ্চারণই করবো না।সত্যজিত থাকবেন।বিভুতিভূষন থাকবেন।অপুরা থাকবেন।শুধু আমাদের নভেরারা থাকবেন না।আমার ছেলে যেদিন গেমস খেলা থেকে চোখ উঠিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবে শহীদ মিনারের কথা,স্থপতিকলার কথা।আমি অপ্রস্তুত হাসি দেবো। যাদুঘরের নভেরা হলের কাছে গেলে উইকিপিডিয়া সার্চ করে ছেলের কাছে "আমার বাবা সব জানে" সাজবো।
আর তখনো হয়ত অপুকে নিয়ে আরো কোন চলচিত্রের কাজ হবে।আমি ছেলেকে সুস্থ বিনোদনের কথায় অপুর বংশধারা শোনাবো।আর আমার ছেলে বলবে,আমার বাবা সব জানে!