নথিপত্র
ওরা ভেবেছিলো নাপিতদের হাতের আঙুল কেটে দিলেই পৃথিবী ওদের হয়ে যাবে। কিন্তু নাপিতেরা যে আদৌতে শ্রমজীবী মানুষদেরই প্রতিনিধি তা ভুলে গিয়েছিলো ভেজা বরফের বাসিন্দারা। তারপর একদিন আঙুলহীন নাপিতেরাই ক্ষুর আর কাঁচি হাতে বের হয় রাস্তায়। আর পৃথিবীর ইতিহাসে সেবার দ্বিতীয় মিনা ময়দান কায়েম হলো। পুঁজিবাদের বিপক্ষে খেটে খাওয়া মানুষদের মিনা ময়দান। বুদ্ধিজীবী বনাম শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র শাসনকর্তা হলো একদল আঙুলহীন নাপিকদল।
**********
কাকের বাসা উৎক্ষাত করত গিয়ে যেই ছেলেটা মগডাল থেকে পড়ে গেলো, মাথা ফেটে গলিত মগজের রস রাস্তার ময়লা বালুতে মিশে গেলো সেই ছেলে কিংবা ক্ষুদিরামের গল্পটা একদিন পৃথিবী থেকে হারাবেই। আবার ধরো আসাদের শার্ট অথবা ঝুলন্ত ফেলানীর ঐ বিভৎস অস্পষ্ট লাশটাকে ঘিরে আমরা যেসব বাস্তব রূপকথা বানিয়েছি সেগুলো কিছুই কেউ মনে রাখবে না। শুধু সবাই জানবে এই বাড়িটা সার্বক্ষণিক সি সি ক্যামেরাদ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই পৃথিবীটা সি সি ক্যামেরাদ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
**********
এভাবে পৃথিবী থেকে যারাই জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে হাহুতাশ করে বিদায় নিয়েছে তাদের জন্য আমরা সমবেদনা করতেই পারি। কারণ আমরা জানি এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টাকার বিনিময়ে প্রস্তুত হওয়া ঘোলাটে কোন বীর্য থেকে আবারো মঙ্গোলীয়দের জন্ম হবে। এরপর চীনেরপ্রাচীরে পা রাখা প্রত্যেক পর্যটকদের হত্যা করা হবে প্রাচীরের প্রতি মুগ্ধ হওয়ার অপরাধে। ততদিনে আমরা সংখ্যায় অনেক কমে যাবো। কারণ তখন পৃথিবীর সকল শরণার্থীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। অথবা ধরো আমরা বাজেটের হিশেব মিলাতে ব্যর্থ কোন সরকারের সহযোগিতায় পাঁচশো রানা প্লাজা বানাবো জনাকীর্ণ এই নগরের বুকে।
**********
অঝোরধারায় বৃষ্টির মতো থু থু নিক্ষেপিত হওয়া এই নগরীতে সবচেয়ে রুচিশীল ব্যক্তিরা সূর্যের সাথে সাথে বিভিন্ন উপাসনালয় ও নিম্নমানের বিল্ডিং থেকে বের হয় নিজের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে লালন করা একটি অসহায় মেদ-ভুড়ির প্রদর্শনীতে। অথচ একটি আন্তর্জাতিক নগ্ন র্যাম্পিংএর মডেল আর সকালের অবৈধ এই মেদবিশিষ্ট লোকদের মাঝে কোন তফাৎ না থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের পরিষ্কার কর্মীরা কেবল এই প্রাতঃকালীন শো-টাই দেখে যায় আজীবন। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষের পবিত্রতম কর্ম_ঝাড়ু দেওয়া আর ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারকরণ_রেই জগিং করতে আসা ব্যর্থপুরুষেরাই নাকে চেপে পালিয়ে বেড়ায়।
**********
আমরা আত্মহত্যার জন্য মঞ্চ তৈরি করে যখন সর্বশেষ একটি স্বপ্নময় নিরাপদ ঘুমের জন্য বিশ্রামে গেলাম তখনই আমাদেরকে মানুষ হিশেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ঘোষণা এলো। বস্তুতপক্ষে এই ঘোষণা ছিলো আগামি পৃথিবীর জন্য সমাধানবিহীন একটি দুশ্চিন্তার কালি-বিন্দু। তারপরও আমরা আত্মহত্যার মঞ্চে বসে পিয়ানো বাজাতে শুরু করলাম এই বিশ্বাসে যে, মশা নিধনের জন্য প্রস্তুতকৃত এরোসল কখনো কখনো মানুষের জন্যও ক্ষতিকারক হয়ে যায়।
নগরাশ্রম
রাত ১-৪৫ মিনিট
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪২