somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেরোখাতার জার্নালঃ ভ্যান গগের চিঠি ও শাহাবুদ্দিনের জয়বাংলা........Papree's Notes

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা একাডেমির পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’ এর এই সংখ্যার প্রচ্ছদের দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে ছিলেন ওবায়েদ সাহেব। দেখা শেষ করে বললেন- ‘এটা কি মরা ডালের ওপর শকুন নাকি?’
শুনে আমি আর আমার কবিবন্ধু সাজ্জাদ আরেফিন হো হো করে হেসে উঠলাম। আমাদের অমন হাসতে দেখে ওবায়েদ সাহেব বিব্রত ও সামান্য শরমিন্দা হলেন। তারপর ধীরে বললেন- ‘এখন তো দিন বদলের দিন। কি থেকে যে কি হয় বলা মুশকিল!’
এইবার আমরা দুইজন বিব্রত ও শরমিন্দা হলাম। আমি আর সাজ্জাদ আরেফিন বললাম- ‘না না আমরা শিল্প ভাল বুঝি তা নয়। বুঝি না বলেই হাসছি।‘
এরপর আমি ধীরে ধীরে বললাম -‘সম্ভবতঃ শকুন না,মরা ডাল ফুঁড়ে সবুজ একটা পাতা গজিয়েছে সদ্য।’
উনি আমার কথায় সায় দিলেন কিনা বুঝা গেল না।পুনরায় পত্রিকা দিয়ে নিজেকে আড়াল করলেন।

যে যে বিষয়ে আমি অজ্ঞ সেসবের প্রতি রয়েছে আমার অগাধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। গাইয়ে, আঁকিয়ে আর পায়ী এই তিনের প্রতি আমি নমস্যঃ নমস্যঃ।
যিনি গান গান, যিনি ছবি আঁকেন, যিনি প্রচুর পান করেন- এই তিনভাইকে আমি গুরু মানি। এই তিনের প্রতি আছে আমার ভয় মিশ্রিত ভালোলাগা আর ভালোবাসা। আজকাল নতুন এক ভাই যুক্ত হয়েছেন-রাঁধুনে।
যিনি ভাল রাঁধেন তিনিও আমার নমস্যঃ নমস্যঃ
রন্ধন এক কঠিন শিল্প বটে!
Gandhi- 1 . Oil on Canvas . by Shahabuddin Ahmed

‘রং বিদ্যায় তাকেই ওস্তাদ বলা যাবে যে প্রকৃতিতে একটা রং দেখেই বিশ্লেষণ করতে পারে; যেমন ধরো, সবজে-ধূসর দেখেই বলতে পারা উচিত যে হলুদের সঙ্গে কালো আর নীল মিশিয়ে করা যাবে ওটা, অন্যভাবে বলা যায় প্রকৃতিতে ধূসরকে যে তার রংয়ের থালায় আনতে পারে সেই। আর প্রকৃতি থেকে কোনো খসড়া বা নকশা করতে হলেও সীমারেখা সম্পর্কে খুব পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশনটাকে আস্তে আস্তে শক্তিশালী করে তোলার জ্ঞানও থাকতে হবে’(ভাই থিওকে লেখা ভ্যান গগের চিঠি)
বৃষ্টিভেজা হিমেল ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে চলছে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ‘জয়বাংলা’ সিরিজের প্রদর্শনী। আমি যখন দেখতে গেলাম ৩১টি ছবি থেকে ৩/৪ টে ছবি বোদ্ধা কেউ উচ্চ মূল্যে কিনে নিয়ে গেছেন। (হায়!ভারি আফসোস!কোনদিনই হয়তো সেসব আর নিজ চক্ষে দেখতে পাবো না!)
মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিনের যুদ্ধ বা বিজয় ভাবনায় স্বাতন্ত্র্য থাকবে একথা বলাই বাহুল্য। তাঁর এবারের ছবিগুলোতেও তাই লক্ষ্যনীয়।
Victory-১,২,৩ নিয়ে তাই কিছু বলা যায় না। কেবল অনুভব করতে হয়।
আছে Horse আর Bull নিয়ে সিরিজ ছবি। ঘোড়া আর ষাঁড় দিয়ে তিনি হয়তো বুঝিয়েছেন সাহস,শক্তি, শৌর্য। এসবই হয়তো নির্দেশ করে যোদ্ধার অবিশ্রাম পথচলা ও অনিঃশেষ গতি।
‘Killing Of The Intellectual’, ‘Wounded Freedom Fighter’, ‘Gandhi’, ‘Bangabandhu 15th August 1975’ – সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব- অতি পরিচিত দৃশ্যটি রঙ আর তুলির টানে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে।
‘Gandhi-1’ - সততা আর অহিংসার বাণী ত্রিভুবনে ছড়িয়ে দিয়ে হাড্ডিসার এক মানুষ এককোণে মাথা নুয়ে আছেন।
এ ছবির সামনে থেকে সহসা সরে যাওয়া মুছিবতের কাজই মনে হয়।
শাহাবুদ্দিনের ছবি যতখানি অবয়ব নির্ভর তার চেয়ে বেশি নিরাবয়ব; বিমূর্ত-বর্ণে প্রকাশিত। তার মানুষি দেহে ত্বক নেই; আছে পেশি ও রক্তের নাচন। নিজেকে প্রকাশের চালটা কতোটা স্বয়ংক্রিয়তার ন্যস্ত রাখা যায় এটাই এ শিল্পীর এক প্রধান মনোভঙ্গি। ফলে শাহাবুদ্দিনের ছবির মানুষ আর মানুষ থাকেনা, তা হয়ে ওঠে শুভ্র আকাশের ধূমকেতু! জাগরণ আর উত্থানের মহাকাব্য।
‘কিছু কিছু ছবি আর ছবির টেকনিকের যে প্রশংসা করা হয়- আমি জিজ্ঞেস করি তোমাকে কি ধরনের মানব চরিত্র, অনুসন্ধান, দার্শনিক বা প্রচারক বা মানুষ তার পেছনে থাকে; আসলে বেশির ভাগই কিছু থাকেনা।কিন্তু ব্যাকেলি একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব, লারমিট একজন ব্যক্তিত্ব, এবং বহু অজানা শিল্পীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনুভব করা যায়- যে ছবিগুলো একটা ইচ্ছা, একটা অনুভুতি একটা প্রেম দিয়ে তৈরি।‘(ভাই থিওকে লেখা ভ্যান গগের চিঠি)

I speak of legends
I speak of my forefathers
I speak of our uncertain presents
And the final battle ahead…

চিত্রকলা বিষয়ে আমি এক নাদান দর্শক। অপরাধ ক্ষমা করবেন...
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×