ভারতের ট্রেনেই বসে আছি। সামনের সিটে তিনজন বসে আছে। মাঝখানে আমার ছোট ছেলে, জানালার সাইটে রাঁচীর এক দাদা, ডান পাশে আরেকজন মধ্য বয়সী ভদ্রলোক। রাঁচীর দাদা বাংলার ’ব’ও জানে না, আমিও ভালো হিন্দী জানি না, যে কারণে তার সাথে ভাঙা ভাঙা হিন্দীতে কথা বলে মজা পাচ্ছিলাম না। তবে ডান পাশের ভদ্রলোককে হিন্দীর পাশাপাশি বাংলা বলতে দেখে মনে মনে খুব খুশি হলাম। যাক তাহলে এই লোকের সাথে বাংলায় কথা বলে গুমোট ভাবটা দূর করা যাবে। ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা আপনার বাড়ি কোথায়?
বলল, কোলকাতায়।
-- কোলকাতায় কোথায় বাড়ি?
-- এই তো বহরমপুরে।
-- বহরমপুরেই বাড়ি?
-- না বহরমপুর নেমে আরো বারো কিমি যেতে হয়।
-- মনে কিছু করবেন না আপনার নামটা কি জানতে পারি?
ভদ্রলোক হাসি দিয়ে বলল, শেখ জায়েদুল।
-- শেখ শব্দটি উচ্চারণ করায় আমার একটি কৌতুহল জাগল, যাকেই জিজ্ঞেস করি সেই নামের প্রথমে বা শেষে শেখ পদবী লাগিয়ে দেয়। বেঙ্গালোরেও এক বয়স্ক বাঙালি ভদ্রলোকের সাথে চান্দাপুরা বাজারে দেখা। তাকে বাংলায় কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান আপনার বাড়ি কোথায়?
-- দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা
-- ভাইজান যদি কিছু মনে না করেন, আপনার নাম?
-- শেখ গোলাম আলী
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ভদ্রলোক এবং ট্রেনের বহররমপুরের এই ভদ্রলোকসহ আরো দুইজন টাঙাওয়ালা একইভাবে শেখ পদবীতে জবাব দেয়ায় কৌতুহল নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, পশ্চিম বঙ্গের সবাই কি শেখ?
ভদ্রলোক এক গাল হাসি দিয়ে বলল, না মশাই সবাই শেখ নয়, তবে এখানকার মুসলিমরা শেখ পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে, এই জন্য নামের আগে শেখ পদবী লাগিয়ে থাকে। আমাদের পৈতৃক পদবী মন্ডল। আমার বাবার নাম বেলায়েত আলী মন্ডল।
-- তাহলে আপনি মন্ডল হয়ে নামের প্রথমে শেখ লাগালেন কেন?
-- আমার বাড়ী যে গ্রামে সেই গ্রামের সবাই শেখ পদবীধারী শুধু আমরাই মন্ডল। স্কুলে গিয়ে একা একা মন্ডল পরিচয় দিতে ইতস্তত লাগে এই জন্য স্কুলে আমার নামেও শেখ লাগিয়েছি।
বুঝতে পারলাম পশ্চিম বঙ্গে গণহারে শেখ পদবীর কাহিনী।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৫০