
আমি তখন অসুস্থ্য, মাত্র পাঁচদিন আগে বুকে পেসমেকার লাগানো হয়েছে। বুকে কাঁটা ছেঁড়ার ব্যাথা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমার ছোট ছেলের সাথে ভারতের বেঙ্গালরের হৃদয়েলা হাসপাতালের অদূরেই একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলাম। তিন তলা বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, নাম ”ডি মার্ট”।
স্টোরে ঢোকার জন্য তিনটি গেট কিন্তু তিনটি গেটেই স্ক্যানার লাগানো। যেহেতু আমার বুকে পেসমেকার লাগানো তাই স্ক্যানারের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করা বারণ। গেটের দারোয়ানকে আমার সমস্যার কথা বলে কোন লাভ হলো না। সে হিন্দিও বুঝে না ইংরাজিও বুঝে না বাংলা তো বুঝেই না। অবশেষ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এসে স্ক্যান ছাড়া আমাকে ভিতরে ঢোকার ব্যাবস্থা করে দিল। ভিতরে গিয়ে দেখি অফার চলছে, একটা কিনলে একটা ফ্রি, দুইটা কিনলে তিনটা ফ্রি আরো কত কি।
হালকা পাতলা কিছু ক্রয় করার পর মনে করলাম এতো আগে কেনাকাটা না করে বাড়ি যাওয়ার আগে আগে পুরো কেনাকাটা করবো। ক্যাশিয়ারকে বিল দেয়ার সময় হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলাম, “ইয়ে অফার কাব তক চলেগা”। ক্যাশিয়ার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, পরে ইংলিশে বললাম, তখনো দেখি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, এরপর বাংলায় বললাম, অফার কয়দিন চলবে, সে তখনো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ সে লোক হিন্দি বোঝে না বাংলা বোঝার তো প্রশ্নই আসে না। আমার কথা বুঝতে না পেরে কর্নাটকের ভাষায় কিছু একটা বলল তবে আমি কিছুই বুঝতে পেলাম না কারণ আমি তো কর্নাটকের ভাষা জানি না। তার কথা আমি বুঝি না আমার কথা সে বুঝে না, পড়লাম মহাবিপদে। সে বুঝতে না পেরে তার পাশের ক্যাশিয়ারকে ডেকে আনল সেও হিন্দি বোঝে না, সে তার পাশের ক্যাশিয়ারকে ডাকল সেও বোঝে না এইরকম পরপর পাঁচজন এসেও যখন হিন্দি বাংলা ইংরেজি কিছুই বুঝল না তখন বাধ্য হয়ে হাত ইশারায় বললাম আর কাউকে ডাকার দরকার নাই, হাতের ইশারা দিয়েই বাই বাই করে চলে এলাম।
এই ঘটনাটি বললাম এই জন্য কর্নাটকের মানুষ তাদের মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা পছন্দ করে না এবং বলার চেষ্টাও করে না অথচ পশ্চিম বঙ্গের কোলকাতায় পুরো উল্টো, হিন্দি আর উর্দু ভাষার দাপটে পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিদের বাঙলা ভাষা ভুলে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। বেঙ্গালোরে অন্যরাষ্ট্রের লোকজন কাজে গেলেও তাদেরকে কর্নাটকের ভাষা না শিখে কাজ করা সম্ভব হয় না অথচ কোলকাতায় বিভিন্ন রাজ্যের লোকজন কাজ করলেও তারা বাংলা না শিখে উল্টো বাঙালিদেরকেই হিন্দি বলতে বাধ্য করে। বাংলা ভাষাকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ ভাষা বলা হয়। প্রায় ৩৪কোটি লোক বাংলায় কথা বলে, সেই জনবহুল ভাষা পাকিস্তান আমলে উর্দু ভাষার জাতাকলে পড়েছিল বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গে হিন্দি ভাষার যাতাকলে পড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


