somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের হারানো স্মৃতি

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আমার পাশে বসা ভদ্রলোকের নাম হযরত। প্রায় আটচল্লিশ বছর পর দেখা হলো। একাত্তর সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক সেনাদের ভয়ে আমাদের বাডিতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

উনার বাড়ি বৃহত্তর পাবনা জেলার বেলকুচি থানা এলাকায় (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা)। সেই সময় গাইবান্ধা মহকুমার (বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা) ফুলছড়ি থানা বাজারে বর্তমান বিচারপতি খুরশীদ আলমের বাবার কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন (বিচারপতি খুরশীদ আলম ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার জামাতা)। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ফুলছড়ি থানা আক্রমণ করলে পাকসেনাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। গোলাগুলির মধ্যেই প্রাণ বাঁচাতে মালিক কর্মচারীসহ ৯জন এসে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আমাদের বাড়িতে একটি কাচারি ঘর ছিল। এই কাচারি ঘরটিতে যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধসহ অনেক বিপদগ্রস্ত লোক আশ্রয় নিয়েছিল। সেই সময় লোকজনকে আশ্রয় দেয়াও বিপজ্জনক ছিল। লোকজন আশ্রয় দেয়ার খবর যদি খান সেনাদের কাছে চলে যেত তাহলে আমাদের আর রক্ষা ছিল না। খান সেনাদের হাতে জ্যান্ত গুলি খেয়ে মরতো হতো। এতো বিপদ জেনেও বাবা পুরো ঘরটিই তাদেরকে থাকার জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন।

আশ্রয় নেয়া ৯ জনের মধ্যে যারা ছিলেন তারা হলেন, ফুলছড়ি বাজারের কাপড় ব্যাবসায়ী লতিফ সরকার, জিল্লু সরকার, মাহমুদ সরকার, ছোলেমান সরকার ও হযরত আলী, বাকিদের নাম এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না। আশ্রয় নেয়া সবাই পাবনা জেলার লোক। তখন আমি হাইস্কুলে পড়ি। সবাই আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় শুধু এই ভাইটি ছিল আমার সমবয়সী। সমবয়সী হওয়ায় তার সাথে আমার বন্ধুত্বভাব গড়ে উঠে। যতদিন আমাদের বাড়িতে ছিল ততদিন সবসময় আমার সাথেই থাকত এবং আমার সাথেই মাঠে ময়দানে খেলাধুলা করতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক দিন পরে দেশ স্বাভাবিক হলে উনারা আবার ফুলছড়ি বাজারে ফিরে যান।

দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পরে ফুলছড়ি বাজারসহ পুরো এলাকা যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেলে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়ে পড়েন। এই ভাইটিও পাবনা চলে যান। যে কারণে তার সাথে ইচ্ছা থাকা সত্বেও দীর্ঘ দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অফিস চালাকলীন সময় হঠাৎ একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন আসে। আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেও আমি তাকে চিনতে পারি না। তার নামও ভুলে গিয়েছি। পরে একাত্তর সালের কথা বলতেই সেই সময়ের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে, তখন চিনতে আর অসুবিধা হয় নাই।
আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি আমার ফোন নাম্বার পেলেন কোথায়? উত্তরে বলল, তিন বছর হলো তিনি আমাকে খুঁজতেছেন। আমাদের বাড়ি নদীতে ভেঙে যাওয়ায় আমাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। তাছাড়া আমার নামও তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। আমার এক ভগিনার কাছে আমাদের যুদ্ধের সময় বাড়ির বর্ননা দেয়ায় আমার ভাগিনা অনুমান করেই আমার নাম্বার দিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি আমাকে খুঁজে পান। ২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর সরাসরি তার সাথে দেখা করি। তাকে দেখেই যুদ্ধের অনেকগুলো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×